|
তাঁর ‘নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়’ নামের স্কুলটি ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়
চা বিক্রির টাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা আব্দুল খালেক মারা গেছেন
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় চা বিক্রির টাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা আব্দুল খালেক (৯৮) মারা গেছেন। শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুরে বার্ধক্যজনিত কারণে উপজেলার নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, আব্দুল খালেক বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন।

তাঁর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জানা যায়, আব্দুল খালেক একজন চা বিক্রেতা ছিলেন। বিয়ের কয়েক বছর পর সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মারা যান। আব্দুল খালেকের কোনো সন্তান ছিল না। ১৯৬৭ সালে চা বিক্রির টাকায় নিজ নামে সাফকবলা জমি ক্রয় করেন। এই জনপদে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি ৫২ শতক জমি দান করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে একটি স্কুল।

২০১৯ সালে স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়। মারা যাওয়ার আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাজে ব্যবহার করা লোকদের তাঁর চা দোকানে বসতে দিতেন না। দোকানে বসে কিংবা গ্রামের পথে ঘাটে একজন অন্যজনকে নাম বিকৃত করে ডাকে। রহিমকে রউম্যা। খালেককে খালিক্কা ইত্যাদি নামে ডাকে। তাঁর নিজের নাম কেউ বিকৃত করে ডাকলে তিনি মনে কষ্ট পেতেন। পরে ভাবলেন শিক্ষার অভাবে তারা মানুষের নাম বিকৃত করে। এই গ্রামের ৮০ ভাগ লোক ছিল নিরক্ষর। কিছু ছেলে-মেয়ে প্রাইমারিতে পড়লেও দূরে হওয়ায় হাইস্কুলে যাচ্ছিল না। তিনি দোকানে একদিন বললেন, গ্রামে একটি স্কুল করা দরকার। তা শুনে অন্যরা বলল-জমি কে দেবে? তিনি বললেন-আমিই জমি দেব। পরের দিন তিনি ঘুমে থাকতেই অনেকে এসে তাঁর দরজা ধাক্কাতে লাগলেন। তারা জানতে চাইলেন স্কুলের জমি দিবেন শুনলাম। আমরা ঝুড়ি কোঁদাল নিয়ে এসেছি মাটি কাটতে। এভাবে গ্রামের মানুষ থেকে বাঁশ-কাঠ আর নগদ টাকা চেয়ে এনে গড়ে তুললেন ‘নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়’। শিক্ষক হিসেবে এগিয়ে এলেন গ্রামের কিছু স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক ও তরুণ। প্রথম দিকে এগিয়ে এসে স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছিলেন গ্রামের আবদুর রহিম, সিরাজুল হক, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মজুমদার, প্রথম প্রধান শিক্ষক সফিউল্লাহসহ এলাকার দানশীল ব্যক্তিরা। কুঁজো হয়ে গেলেও তিনি ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা এবং রসিক মানুষ। তিনি বলতেন, আমার শরীরের বয়স নব্বইয়ের বেশি, মনের বয়স ২৭! তিনি স্কুলটি জাতীয়করণের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
Post Views: ০
|
|