বর্ষার স্মৃতি – কামরুন নাহার মুন্নী
বর্ষার স্মৃতি
– কামরুন নাহার মুন্নী
ছোট্টবেলার বৃষ্টির দিন
পড়ছে আজও মনে,
ভিজতে যেতাম সদলবলে
রইনি ঘরের কোণে।
ঠান্ডা লেগে সর্দি, কাশি
মায়ের বকা খেয়ে,
সেরে ওঠা, দুদিন পরেই
গরম মালিশ পেয়ে।
সর্ষে তেলে রসুন ছেঁচে
মিশিয়ে গরম করে,
মালিশ করে দিতেন মা
শক্ত হাতে ধরে।
ঝির ঝির ঝির! ঝম ঝম ঝম
একটানা সুর বাজে,
আষাঢ় মাসে বৃষ্টি ঝরে
সকাল, দুপুর, সাঁঝে।
টুপ টাপ টুপ বাজিয়ে নূপুর
বৃষ্টি এলো ওই,
ঝুপ ঝাঁপ ঝুপ লাফিয়ে জলে
ছেলেদের হৈচৈ।
মেঘ গুড় গুড় মাদল বাজে
নামবে ধারা জল,
কাঁপিয়ে আকাশ, দাপিয়ে বাতাস
করছে কতো ছল!
ভেজা বাতাস বয়ে বেড়ায়
কদম ফুলের ঘ্রাণ,
বৃষ্টি ধারায় উঠতো মেতে
ঝিমিয়ে পড়া প্রাণ।
জানলা দিয়ে দেখেছি কতো
বৃষ্টি মুখর ছবি!
ঘনায় যখন মেঘের আঁধার
ডুবে যেতেন রবি।
কচু পাতার জোংড়া মাথায়
রাখাল চলে মাঠে,
হাম্বা রবে ডাকছে গরু
নয়তো জাবর কাটে।
মাঠের উপর বৃষ্টি জমে
ঘাসগুলো যায় ডুবে,
ঝাঁক বেঁধে সব কৈ মাছেরা
উঠছে ভেসে পুবে।
ডোবার ধারে যাচ্ছে শোনা
কোলা ব্যাঙের ডাক,
রাত্রিবেলা হুক্কাহুয়া
খেঁকশিয়ালের হাঁক।
উঠোন জুড়ে বৃষ্টি জমে
খুব যে হতো কাদা!
চলতে গিয়ে পা পিছলে
আছাড় খেলেন দাদা।
ব্যথার চোটে শয্যাশায়ী
দিনের পরে দিন,
দাদির ঝামটা শুনে ব্যথা
বাড়তো চিন চিন!
চালভাজা, ছাতু মাখা
কিংবা বড়া পিঠা,
কোন পিঠাই লাগে না আর
আগের মতো মিঠা।
আষাঢ় আসে বৃষ্টি নামে
কালের ধারা বয়,
হারিয়ে গেছে যে দিনগুলো
প্রাণের মাঝেই রয়!
Post Views:
৭৯১
|