|
জব্দকৃত জাটকা অসহায়দের মাঝে বিতরণ
বরিশালে ১শ’ মণ জাটকা আটক
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশালে একশ’ মণ জাটকা জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ। মঙ্গলবার (নভেম্বর ২৩) রাত ১২টার পরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ভোলার রাস্তার মুখে অভিযান চালিয়ে এই জাটকা জব্দ করা হয়। এসময়ে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চত করেছেন নৌ-পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন। তিনি জানান, জব্দকৃত জাটকা অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আর আটককৃতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে। যদিও পুলিশের অভিযানের বিষয়ে কিছুই জানে না মৎস অধিদফতর। ওদিকে মাছ নিতে আসা অসহায় মানুষদের ওপর নৌ-পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে দেখা গেছে। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করেছেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছুটিতে থাকায় বরিশাল সদর নৌ-থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই নূরুল আমীন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পরে কুয়াকাটা-বরিশাল মহাসড়কের ভোলার রাস্তার মুখে অভিযান চালিয়ে ট্রাকভর্তি জাটকা জব্দ করা হয়েছে। বুধবার (নভেম্বর ২৪) বেলা ১১টার পর থেকে জব্দকৃত মাছ অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়। এ ঘটনায় পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা বাসিন্দা হাসান সিকদার (২৮) ও গলাচিপা উপজেলার বাসিন্দা নান্নু মৃধাকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তিনি জানান, মাছগুলো কলাপাড়া থেকে বরিশাল পোর্টরোডে আসছিল। সুর্নিদিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালালে একটি ট্রাক এবং কয়েকটি বাস থেকে ১০০ মণ জাটকা জব্দ করা হয়। সাথে অন্য কিছু মাছ, কাকড়া পাওয়া গেছে। তা মাছ মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বরিশাল জেলা মৎস পাইকারী বাজারের ব্যবসায়ী শাহীন জানান, অবৈধ জাটকা মাছের সাথে অন্যান্য মাছও থানায় নিয়ে আটকে রাখে। সেগুলো দুপুর দেড়টার দিকে আমাদের দিয়েছে। এতে করে মাছগুলোর অধিকাংশই পঁচে গেছে। ট্রাক আটক হওয়ার পরপরই পুলিশকে বলেছিলাম কাকড়া, গজাল, পাবদা, পুটি, চিংড়ি মাছগুলো মালিকানা বৈধতায় ফেরত দিতে। কিন্তু তারা আমাদের মাছ দেয়নি। এই ব্যবসায়ী বলেন, জব্দকৃত জাটকার পাশাপাশি বড় সাইজের ইলিশ মাছও ছিল। যেগুলো শিকার বা পরিবহন করা অবৈধ নয়। সেগুলোও বিলিয়ে দিয়েছে। মৎস্য পাইকারী বাজারের আরেক শ্রমিক সেন্টু বলেন, বৈধ মাছগুলোও আটকে নষ্ট করে ফেলেছে। আবার বড় ইলিশও বিলিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ক্ষতি করেছে নৌ-পুলিশ। সরেজমিনে বেলা সাড়ে ১১টায় দেখা গেছে, মাছ বিতরণের খবর পেয়ে রসুলপুর, আমানতগঞ্জ, পলাশপুর, কেডিসি, ভাটারখাল কলোনীর তিন শতাধিক মানুষ ব্যাগ নিয়ে ভিড় করেছে থানার গেটে। কিছুলোক লাইনে দাড় করিয়ে মাছ বিতরণ করা হয়। এছাড়া মাছ প্রত্যাশী অন্যান্যদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ সদস্য। মাছ নিতে আসা আমানতগঞ্জের হারুণ বলেন, পুলিশ অনেককে পিটিয়ে আহত করেছে। আমাকেও কয়েকবার ধাওয়া দিয়েছে। আমি পড়ে গিয়ে পা কেটে গেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে হারুন বলেন, গরিব মানুষকে মাছ না দিয়ে পুলিশ তাদের পরিচিত লোকজনকে মাছ দিয়েছে। গরিব মানুষ কাছে গেলেই পিটিয়ে বের করে দিয়েছে। আরেকজন নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ, কোতয়ালী থানার স্টাফ, কয়েকজন সাংবাদিক, ওয়ার্ডের দলীয় নেতা, নৌ-পুলিশের কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের কনস্টেবলকে ব্যাগ ভরে মাছ নিয়ে যেতে দেখেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ইউসুফ হোসেন বলেন, থানার মাঝি পরিচয় দেওয়া অলি, কালামসহ আরো কয়েকজন কনস্টেবলের সহায়তায় কিছু মাছ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে সাংবাদিকরা আসার পরে তারা সেগুলো বের করেন। শেষে মাছ মালিকের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে জেলা মৎস কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, অভিযান চালিয়ে জাটকা জব্দ করা হয়েছে এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তিনি বলেন, আইনে আছে জব্দকৃত মাছের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগনের মতামত দরকার হয়। এছাড়া মৎস অধিদফতরকেও অবহিত করে সাধারণত। কিন্তু এবারের অভিযানের বিষয়ে আমাকের কিছুই জানায়নি নৌ-পুলিশ।
Post Views:
১২৯
|
|