Current Bangladesh Time
শুক্রবার মার্চ ২৯, ২০২৪ ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর নেই 
Sunday September 4, 2022 , 11:58 pm
Print this E-mail this

দেশের সংগীত ভুবনে গাজী মাজহারুল আনোয়ার ছিলেন উজ্জ্বল ধ্রুবতারা

অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর নেই


মুক্তখবর বিনোদন ডেস্ক : ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর নেই। গতকাল রবিবার সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন এই কিংবদন্তি। (ইন্না লিল্লাহি … রাজিউন।) তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি একাধারে গীতিকার, কাহিনিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন। অনবদ্য এক ইতিহাস লিখে গেলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ২০ হাজারেরও বেশি গানের রচয়িতা তিনি, যা অবিশ্বাস্য, বিস্ময়কর এক সাফল্য। বিশ্বরেকর্ড। পৃথিবীতে আর কোনো গীতিকবি এত গান লিখেছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্ত্রী জোহরা গাজী জানান, আগের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত তার সঙ্গে এবং ছেলে উপলের সঙ্গে গল্প করেছেন। সকাল ৬টায় অসুস্থ অনুভব করলে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ (সোমবার) সকালে হাসপাতাল থেকে বারিধারার বাসায় নেওয়া হবে তাঁর মরদেহ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে তাঁর মরদেহ বেলা ১১টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। সেখানে গার্ড অব অনার প্রদানের পর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে নেওয়া হবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি)। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বনানীতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সেখানেই মা খোদেজা বেগমের কবরে সমাহিত করা হবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে। এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেছেন এই গীতিকবি। তাঁর মেয়ে সংগীতশিল্পী দিঠি আনোয়ার দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি গতকাল বিকাল ৫টায় ঢাকায় ফিরেছেন। গাজী মাজহারুল আনোয়ার গান লেখা শুরু করেন ১৯৬২ সালে। তাঁর লেখা প্রথম গান ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’। গানটির সুর করেছিলেন নাজমুল হুদা বাচ্চু ও শিল্পী ছিলেন ফরিদা ইয়াসমীন। ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তানে গান লিখে ৫০ টাকা আয় করে পেশাদার গীতিকার হিসেবে নাম লেখান। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেছেন। প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান লেখেন ১৯৬৭ সালে ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ চলচ্চিত্রের জন্য। তার গানে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহ ও অনুভূতির কথা। বিবিসি জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা তিনটি গান। গানগুলো হচ্ছে-‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’ ও ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’। গীতিকার হিসেবে পাঁচবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এ ছাড়া ২০০২ সালে একুশে পদক, ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, এসএম সুলতান স্মৃতিপদক, একাধিকবার বাচসাস পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা রয়েছে তার ঝুলিতে। তিনি রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলের একজন নামকরা আইনজীবী। বনেদি পরিবারে দাদা-দাদি দুজনেই ছিলেন জমিদার বংশের। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুমিল্লা জেলা স্কুলে। এর পর পড়াশোনা করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবেন। আর তাই তিনি ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এক সাক্ষৎকারে কিংবদন্তি এ গীতিকবি জানান, মাত্র পাঁচ টাকা তার জীবনকে বদলে দিয়েছে। ডাক্তার হওয়া মানুষটি হয়ে উঠেন শোবিজের উজ্জ্বল নক্ষত্র। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ভাষ্য ছিল-‘দাদার কড়া নিদের্শ ছিল ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসতেই হবে। দাদা মিলিটারি মেজাজের ছিলেন। তাই তাঁর কথা না রাখার কোনো উপায় ছিল না আমাদের। আমরা যখন গ্রামে যেতাম, সেখানে গান, নাচ, যাত্রা, কবিতাসহ নানা আয়োজন রাখা হতো। দাদা একদিন সকালে আমাকে প্রশ্ন করলেন- রাতে যে গানটা তুই শুনেছিস, সে গানটার কিছু অংশ যদি তুই আমাকে শোনাতে পারিস, তবে তোকে পাঁচ টাকা দেব। আমি তখন সেই গানের কিছু অংশ দাদাকে শুনিয়েছিলাম, আর পাঁচ টাকাও পেয়েছিলাম। সেই পাঁচ টাকা দিয়েই হয়তো দাদা আমার ভাগ্যটা বেঁধে দিয়েছিলেন গান, কবিতা, মানুষ, চলচ্চিত্রসহ সংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন ধারার সঙ্গে। এর পর আমার মনের মধ্যেও দেশে, মানুষ, সংস্কৃতি নিয়ে নানা চিন্তা-ভাবনা আসতে থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি তখন থেকেই আমি গান লেখা শুরু করি।’ গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা আরও কালজয়ী কিছু গান হলো-‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’ প্রভৃতি। চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়ার পর গাজী মাজহারুল আনোয়ার চিত্রনাট্য, গান, সংলাপ ও কাহিনি রচনা শুরু করেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নান্টু ঘটক’, যেটি ১৯৮২ সালে মুক্তি পায়। তাঁর পরিচালিত সিনেমাগুলো হচ্ছে-নান্টু ঘটক, শাস্তি, চোর, বিচারপতি, সন্ধি, স্বাক্ষর, শর্ত, স্বাধীন, সমর, শ্রদ্ধা, স্নেহ, উল্কা, পরাধীন, আম্মা, রাগী, আর্তনাদ, জীবনের গল্প, এই যে দুনিয়া, পাষাণের প্রেম, হৃদয় ভাঙা ঢেউ ইত্যাদি। ৪২টি সিনেমা প্রযোজনা করেছেন এই মহান সংস্কৃতি তারকা। স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরসহ আরও অনেকেই। গতকাল রবিবার এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘গাজী মাজহারুল আনোয়ার তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন বিশেষ করে সংগীতাঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’ রাষ্ট্রপতি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। কিংবদন্তি এই গীতিকবির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর শোকবার্তায় বলেন, ‘বিখ্যাত এই গীতিকার তার কালজয়ী সৃষ্টির মাধ্যমে এদেশের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’ প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ শোকবার্তায় বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, গীতিকার ও সুরকার। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানের মতো কালজয়ী গানসহ স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম নিয়ে তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গান লিখেছেন। বিবিসি বাংলা তৈরিকৃত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় রয়েছে তাঁর লেখা তিনটি গান। তিনি তাঁর সৃষ্টি ও কর্মের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালির হৃদয়ে চিরজাগরূক হয়ে থাকবেন। শোক জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি, শুধু গীতিকার বললে ভুল বলা হবে। একজন সৃজনশীল শিল্পী, যাঁর কলমে এদেশে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য অসাধারণ গান, কবিতা। তিনি আরও বলেন, আমি কিছুটা আবেগাপ্লুত। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তিনি চলে গেছেন, আমি ঠিক মেনে নিতে পারছি না। আমরা একজন বিরল ব্যক্তিত্ব অসাধারণ মেধাবী মানুষকে হারালাম। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেন, দেশের সংগীত ভুবনে গাজী মাজহারুল আনোয়ার ছিলেন উজ্জ্বল ধ্রুবতারা। তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা। তিনি প্রায় ২০ হাজার গান লিখে নিজের সৃষ্টি, র্কীতি গড়েছেন।উল্লেখ্য, গতকাল রবিবার সকাল ৭টায় রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পরে তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

 




Archives
Image
বরিশালে অবৈধ জালসহ ৪ জেলে আটক
Image
কম্পিউটার দোকানে কাজের আড়ালে জাল নোট ছাপাতেন আরিফ
Image
দূষণে দেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার অকাল মৃত্যু
Image
নামাজ চলাকালীন বরিশালের মসজিদে এসি বিস্ফোরণ
Image
পাথর কোনোভাবেই ভাগ্য ফেরাতে পারে না, নিছক কুসংস্কার!