|
হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে ২০১৬ সালে জেল খাল উদ্ধারে স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নেয়া শত শত নারী-পুরুষ
বরিশালের জেলখাল ফের ডোবায় পরিনত
সাইদুর রহমান পান্থ, অতিথি প্রতিবেদক : বরিশালে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার কয়েক হাজার নারী-পুরুষের স্বতস্ফুর্তভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে উদ্ধার হওয়ার এক বছরের মাথায় ফের ডোবায় পরিনত হয়েছে ঐতিহ্যবাহি জেলখাল।গত বছর ‘জনগণের জেল খাল, আমাদের পরিচ্ছন্নতা অভিযান’-শ্লোগানে বরিশাল জেলা প্রশাসনের উদ্যেগে এ খালটি উদ্ধার করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছিল।কিন্তু ওই উদ্ধারের পর এ খালের উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বর্তমানের ফের পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।খালের দুই পাশের অবৈধ স্থাপণা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করার পর জেলখালে দীর্ঘবছর পর জোয়ার-ভাটার প্রবাহ ফিরে এসেছিল।কিন্ত একবছরের যেতেই জেলখাল তার আগের জায়গায় ফিরে গেছে।খালে এখন আর জোয়ার-ভাটার পানির প্রবাহ তেমন নেই, ময়লা-ভাগারের স্তুুপে অধিকাংশ স্থানে জেলখাল সরু নালায় পরিনত হয়েছে।এ অবস্থায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে ২০১৬ সালে জেল খাল উদ্ধারে স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নেয়া শত শত নারী-পুরুষ।তারা বলছেন, খাল নিয়ে সরকারের কোন পরিকল্পনা না থাকায় ফেল খালটি ভরে যাচ্ছে।দখলদার ফের দখলের পায়তারা চালাচ্ছে।এ খালটি বন্ধ হয়ে গেলে বরিশালবাসীও জলাবদ্ধতায় ডুবে যাবে।খাল পাড়ের বাসিন্দারা জানান, সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) গাফেলতির কারণেই এমনটা হয়েছে।গতবছর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং স্বেচ্ছাশ্রমে সাড়ে তিন কিলোমিটার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার পর বিসিসি’র যথাযথ তদারকির অভাবে খালের চিত্র আগের অবস্থাতেই ফিরে গেছে।বিসিসি কর্তৃপক্ষ খাল উন্নয়ন ও সৌন্দর্যকরণের জন্য ২৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পেশ করে নগরবাসীকে শুধু স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।ইতিমধ্যে ওই প্রকল্পটি মন্ত্রাণালয় থেকে ফেরত পাঠিয়ে সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।প্রকল্পটির অর্থের পরিমান বিশাল হওয়ায় সেটি অনুমোদিত হবে কি-না তা নিয়েও আংশকা প্রকাশ করেছেন একধিক বিজ্ঞজন।জেলা প্রশাসনের উদ্যেগে গতবছর ৩ সেপ্টেম্বর জেলখালের কীর্তনখোলার সংযোগমুখ থেকে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি।সরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক ও উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে খাল পরিচ্ছন্নতায় অংশ নেন।তখন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল খালের দুপাশে ওয়াকওয়ে নির্মান ও বৃক্ষরোপন করা হবে।গত রোববার জেলখালের ওই সাড়ে ৩ কিলোমিটার ঘুরে কোথাও চোখে পড়েনি প্রতিশ্রুত উন্নয়ন কার্যক্রম।পোর্টরোড সেতু থেকে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত অসংখ্য স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তুুপ দেখা গেছে।ওই স্তুুপ খালের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করছে।নথুল্লাবাদ থেকে মড়কখোলার সেতু পর্যন্ত অংশে খালের পশ্চিম কাউনিয়ার অংশের একাধিক স্থানে দেখা গেছে, দুই পাশের জমে থাকা স্তুুপের কারণে অনেক স্থান সরু ড্রেনে পরিনত হয়েছে।পশ্চিম কাউনিয়া সড়কের দোকানী মোঃ ফারুক বলেন, বিসিসির পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিয়মিত ময়লা অপসারন না করায় এ অবস্থা হয়েছে।নথুল্লাবাদ শেরেবাংলা সড়কের সংযোগ মুখের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের ও মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, গতবছর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার উৎসব শেষে কিছুদিন খালে জোয়ার-ভাটার পানি প্রবাহ হতো।স্থানীয় লোকজন আবার ময়লা-আবর্জনা ফেলায় জোয়ার-ভাটার প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।তারা জানান, চলতি বর্ষায় আমবশ্যা-পূর্নিমায় অতিরিক্ত পানির চাপ হলে জেলখালের পানি কিঞ্চিৎ নড়াচড়া করতে দেখা গেছে।গতবছর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের আয়োজকদের অন্যতম বরিশাল নদী-খাল-বিল রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন,জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছার অভাবেই বরিশালের খাল-বিল রক্ষা করা যাচ্ছে না।তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দখলদারদের সঙ্গে আতাত করেন।তাদের সহযোগীতায় খালের দুপাশ ভরাট করে দখল করা হচ্ছে।কাজী এনায়েত শিপলু বলেন,শুধুমাত্র জেলখাল রক্ষণাবেক্ষন ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে ২ বছর আগে ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছিল।এক বছর আগে বিসিসি কর্তৃপক্ষ নগরীর ২২টি খালকে ৪৫টি খাল দেখিয়ে ২৪৫ কোটি টাকার আরো একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হলে সেটি ফেরত পাঠানো হয়।শিপলু অভিযোগ করেন, খাল রক্ষণাবেক্ষনের নামে অর্থ লোপাটের উদ্দেশ্যেই বিসিসি এতবড় অংকের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পেশ করেছিল।এরফলে ছোট অংকের অর্থ বরাদ্দও বন্ধ হয়ে গেছে।এব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ২৪৫টি টাকার প্রকল্পটি সংশোধন করে পুণঃপ্রেরণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কিছু দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জেলখালসহ নগরীর সব খাল সংরক্ষন ও সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ করা হবে।নিয়মিত কাজের অংশ হিসাবে এখন জেলখাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে বলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান।
Post Views:
১১০
|
|