Current Bangladesh Time
বৃহস্পতিবার জুন ২৬, ২০২৫ ১১:৪১ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » ছদ্মবেশী পি কে হালদার যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন 
Saturday May 14, 2022 , 7:58 pm
Print this E-mail this

তাকেকে দেশে ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সরকার

ছদ্মবেশী পি কে হালদার যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন


মু্তখবর আন্তর্জাতিক ডেস্ক রিপোর্ট : ‘শিবশঙ্কর হালদার’ পরিচয়ে ছদ্মবেশে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিলেন প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের এই হোতাকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। শনিবার (১৪ মে) দুপুরে তাকেসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে শিব শঙ্কর হালদার নামে পরিচয়পত্র বানিয়ে পালিয়ে ছিলেন পি কে হালদার। তিনি শিব শঙ্কর পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান ও আধার কার্ড জোগাড় করেছিলেন। শুক্রবার থেকে পি কে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধার সম্পত্তির সন্ধানে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এদিন ভোরে উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার পোলেরহাটে দুটি বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় সুকুমার মৃধার বেআইনি সম্পত্তির খোঁজে অভিযান শুরু করে ইডি। কর্মকর্তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে এই তল্লাশি চালান। শনিবার পি কে হালদারের সম্পত্তির খোঁজে দ্বিতীয় দফায় আবারও অভিযান শুরু করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত মুম্বাই এবং রাজধানী দিল্লিতেও অভিযান চালায় ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী এই সংস্থা। পরে অশোকনগরের একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আর্থিক জালিয়াতি সংঘটনে ‘বহুমুখী প্রতিভার’ পরিচয় দিয়েছেন পি কে হালদার। নানা কৌশলে নামে-বেনামে একের পর এক কোম্পানি খুলে, প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধসিয়ে দিয়েছেন এই প্রতারক। পুকুর চুরি নয়, রীতিমতো সাগর চুরি। ফতুর করেছেন ব্যাংকবহির্ভূত চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। লুট করা হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিশাল অঙ্কের এই আর্থিক কেলেঙ্কারির হোতা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। নানা কৌশলে সাধারণ মানুষের আমানত লুট করে পালিয়ে গেছেন দেশের বাইরে। পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। কানাডা-ভারতসহ নানা স্থানে পালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি এই জালিয়াতের। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পশ্চিমবঙ্গে পৃথক ৯টি স্থানে একযোগে অভিযান চালিয়ে শনিবার পি কে হালদার ছাড়াও তার অপকর্মের অন্যতম সহযোগী ছোট ছাই প্রীতিশ কুমার হালদার ও প্রাণেশ কুমার হালদারকে আটক করা হয়। আর্থিক জালিয়াতি সংঘটনে ‘বহুমুখী প্রতিভার’ পরিচয় দিয়েছেন পি কে হালদার। নানা কৌশলে নামে-বেনামে একের পর এক কোম্পানি খুলে, প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধসিয়ে দিয়েছেন তিনি। ঋণের নামে টাকা লোপাট, নামে-বেনামে পুঁজিবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনার অভিযোগ রয়েছে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু, সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করেন। এই চার কোম্পানি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ। অস্তিত্বহীন ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণের নামে জালিয়াতি করে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সরিয়েছেন পি কে। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি, এফএএস ফাইন্যান্স থেকে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি ও পিপলস লিজিং থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতে মর্টগেজ (জামানত) নেই বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে পি কে হালদার গড়ে তোলেন একাধিক প্রতিষ্ঠান, যার বেশির ভাগই কাগুজে। এর মধ্যে রয়েছে পিঅ্যান্ডএল অ্যাগ্রো, পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল, পিঅ্যান্ডএল ভেঞ্চার, পিঅ্যান্ডএল বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, হাল ট্রাভেল, হাল ইন্টারন্যাশনাল, হাল ট্রিপ, হাল ক্যাপিটাল, হাল টেকনোলজি, সুখাদা লিমিটেড, আনন কেমিক্যাল, নর্দার্ন জুট, রেপটাইল ফার্মসহ আরও একাধিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আছেন পি কে হালদারের আত্মীয়রা। তার মা লীলাবতী হালদার, ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার ও তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা, খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারীসহ বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের নামে প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। ব্যাংক এশিয়ার সাবেক এমডি ইরফানউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সহকর্মী উজ্জ্বল কুমার নন্দীও আছেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায়। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় প্রথম পি কে হালদারের নাম সামনে আসে। এ সময় দুদক যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে, পি কে হালদার তাদের একজন। দুদক ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, পলাতক পি কে হালদার তার নামে অবৈধ উপায়ে এবং ভুয়া কোম্পানি ও ব্যক্তির নামে প্রায় ৪২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। অবৈধ সম্পদের অবস্থান গোপন করতে ১৭৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করেন পি কে হালদার। তিনি এসব অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা জমা রাখেন। পাশাপাশি এসব অ্যাকাউন্ট থেকে তার নামে ও বেনামে আরও ৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেন। দুদকের তথ্য বলছে, পি কে হালদার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন পি কে হালদার। কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রণে নিতে ২০১৫ সালে বিভিন্ন নামে শেয়ার কেনেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে হাল ইন্টারন্যাশনাল, বিআর ইন্টারন্যাশনাল, নেচার এন্টারপ্রাইজ ও নিউ টেক এন্টারপ্রাইজ। হাল ইন্টারন্যাশনালের ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক পি কে হালদার নিজে। এভাবে প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠানের নামে বের করে নেয়া হয় ২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। বিআইএফসিতে আমানত রাখা গ্রাহকরা এখনও আমানত ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সুকুজা ভেঞ্চার ও কাঞ্চি ভেঞ্চার নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন পি কে হালদার। সুকুজা ভেঞ্চারের শেয়ার সুখাদা লিমিটেড ও সুকুমার মৃধার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধার হাতে। এর মধ্যে অনিন্দিতা মৃধার শেয়ারই ৯০ শতাংশ। কাঞ্চি ভেঞ্চারের ৯৫ শতাংশ শেয়ার হাল ইন্টারন্যাশনালের হাতে রাখা হয়। প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় পিপলস লিজিং থেকে। এ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ছিল আনন কেমিক্যাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। আবার আনন কেমিক্যালের ৯৪ শতাংশ শেয়ার প্রীতিশ কুমার হালদারের হাতে ও ৫ শতাংশ শেয়ার রাখা হয় তার খালাতো ভাই অভিজিৎ অধিকারীর হাতে। পিপলস লিজিংয়ের আমানত ফেরত দিতে না পারায় অবসায়ন ঘোষণা করা হয়। এফএএস ফাইন্যান্স থেকে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল ও রেপটাইল ফার্মের নামে প্রতিষ্ঠান খোলেন পি কে হালদার। মালিক মূলত পি কে হালদারই।

ভারতে গ্রেফতার হওয়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানো এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) দেশে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নিশ্চয়ই আমরা তাদের (ভারত) কাছে সহযোগিতা চাইবো। তাকে ফেরত আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। শনিবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় পি কে হালদারের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পি কে হালদারকে গ্রেফতারে আমাদের কাছে অফিসিয়ালি খবর আসেনি। খবর এলে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। আমাদের দেশে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। আমরা নিশ্চয়ই তাকে দেশে ফেরত আনার জন্য ভারতের কাছে সহযোগিতা চাইবো। তাকে ফেরত আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। শনিবার সকালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি করেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। এর আগে ভারতে তার বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধার কাছে এই অর্থের সন্ধান মেলে। শুক্রবার (১৩ মে) সকাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় ভারতের অর্থ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। ইডি জানায়, প্রশান্ত হালদার নামে এক বাংলাদেশি হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে কানাডায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারই সহযোগী সুকুমার মৃধা বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ ব্যবসায়ী। এই সুকুমার মৃধার বাড়ি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তার অফিসে তল্লাশি চালায় ইডি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মাছের ব্যবসার আড়ালে বিপুল পরিমাণ বেআইনি টাকার লেনদেন করেন। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকালে এই অর্থপাচার করেছিলেন তিনি। তাকে গ্রেফতার করতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছিল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)।




Archives
Image
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানালেন, মহানগর বিএনপি : জিয়াউদ্দিন সিকদার
Image
সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের প্লট ক্রোক
Image
ইভ্যালির রাসেলের ৩ মাসের কারাদণ্ড
Image
নিবন্ধন আবেদনে তিন প্রতীক এনসিপির, পেতে চায় ‘শাপলা’
Image
ইলেকট্রিক সিগারেটের চালান আটক বিমানবন্দরে