Current Bangladesh Time
মঙ্গলবার মে ৭, ২০২৪ ১২:২৮ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » বিদেশে লোভনীয় চাকরির ফাঁদ, শতাধিক নারীকে পাচার 
Monday November 22, 2021 , 11:55 pm
Print this E-mail this

চক্রটির ফাঁদে পা দিলে নারীদের আনা হতো ঢাকায়, রাখা হতো দামি হোটেলে

বিদেশে লোভনীয় চাকরির ফাঁদ, শতাধিক নারীকে পাচার


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : প্রথমে কম বয়সী মেয়েদের বিদেশে লোভনীয় বেতনে চাকরির অফার দিতো। বিদেশ যেতে নেওয়া হতো না কোনো টাকা, উল্টো অগ্রিম টাকা দেওয়া হতো। চক্রটির ফাঁদে পা দিলে নারীদের আনা হতো ঢাকায়। রাখা হতো দামি হোটেলে। এরপর তৈরি করা হতো পাসপোর্ট, বিএমইটি কার্ড ও বিদেশ যাওয়ার করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনের প্রলোভনে কমবয়সী নারীদের টার্গেট করে মানবপাচার করছিল একটি চক্র। তারা দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া এভাবে অনেক নারীকে পাচার করেছে। সোমবার দুপুরে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের অন্যতম হোতা শামসুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। উদ্ধার করা হয়, দুটি মোবাইল ফোন, একাধিক ব্যক্তির পাসপোর্ট, একটি বিএমইটি কার্ড। এছাড়া চক্রটির মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার সময় একজন নারী ও তিনজন পুরুষ ভিকটিমকে উদ্ধার করে র‌্যাব। সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, দুবাইয়ে প্রতি মাসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনের প্রলোভনে কমবয়সী তরুণীদের টার্গেট করত মানবপাচারকারী চক্রটি। শতাধিক তরুণীকে দুবাই পাচার করেছে তারা। ড্যান্স ক্লাবে চাকরির কথা থাকলেও তাদের দিয়ে দেহ ব্যবসাসহ অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত করতে বাধ্য করা হতো। চক্রটি ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়াই জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কার্ড তৈরি করত। গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কার্ড তৈরি করা হলেও তাদের মূলত দুবাইয়ে পাচার করা হতো। এই চক্রের অন্যতম হোতা শামসুদ্দিনকে আটক করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, পাচারকারীরা বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল মানুষদের ফাঁদে ফেলে দুবাইয়ে নিয়ে যেত। তাদের পাতা জালে জড়িয়ে অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। যাদের অধিকাংশই নারী। এসব নারীকে বিদেশে বিভিন্ন পেশায় লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির কথা বলে বিক্রি করে দিত। পরে জোরপূর্বক ডিজে পার্টি, দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানো হতো। সম্প্রতি মানব পাচারকারী চক্রের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে র‌্যাব। আজ ডিএমপির পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য শামসুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটি শতাধিক নারীকে এভাবে পাচার করেছে। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শামসুদ্দিন জানিয়েছেন, বর্তমানে দুবাই অবস্থানরত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে তারা এই চক্রের কাজ করত। জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের যোগসাজসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন কোম্পানি ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই প্রতারক চক্র মেয়েদের বিদেশে যেতে প্রলুব্ধ করে। কোনো তরুণী বিদেশ যেতে রাজি না হলে নানা হুমকি দেওয়া হতো। এছাড়াও চক্রটি বিদেশ যেতে ইচ্ছুক অনেক পুরুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে। লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, সম্প্রতি জিয়া চক্রের মাধ্যমে বিমানবন্দর দিয়ে কয়েকজন নারী পাচার করা হচ্ছে, এমন খবরে আমরা তাদের উদ্ধার করি। গতকাল আমরা তথ্য পেলাম, চক্রটি আবারো এক নারীকে পাচারের চেষ্টা করছে। এরপর অভিযান চালিয়ে ওই নারী ও তিন পুরুষকে উদ্ধার করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই জিয়ার নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা প্রথমে অল্পবয়সী নারীদের টার্গেট করে। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ঢাকায় এনে হোটেলে রেখে পাসপোর্ট ও ‘বিএমইটি’ কার্ড তৈরি করে দেওয়া হতো। এছাড়া বিদেশে যেতে করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেটও করে দিত। এরপরেই নারীদের বিদেশে পাচার করে দেওয়া হতো। র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া পাচার করত। বিএমইটি কার্ডটি কোনো রকম ট্রেনিং ছাড়াই করে দিত। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একজন দক্ষকর্মী হিসেবে বিএমইটি কার্ড তৈরি করতে একমাস সময় লাগত। আমরা একজন ভিকটিমকে পেয়েছি, যাকে ট্রেনিং ছাড়াই বিএমইটি কার্ড দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সেটি হারিয়ে গেলে তার অনুপস্থিতিতেই আবারও কার্ড ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এখানে স্পষ্ট বোঝা যায়, পাচারকারী চক্র অতি কৌশলে নকল এই বিএমইটি কার্ড তৈরি করে নারীদের পাচার অব্যাহত রেখেছে। পাচার করতে যাওয়া একজন নারীকে দেশে থাকা অবস্থায় ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। তাকে আরও টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। তবে উদ্ধার পুরুষ ভিকটিমদের বিদেশে পাঠানোর জন্য দালাল চক্র তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছিল। কিন্তু মেয়েদের পাঠানো কোনো টাকা নেওয়া হতো না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক তরুণী জানান, তার পরিচিত একজন নারী দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তিনিই তাকে মোটা অঙ্কের বেতনে দুবাই চাকরি করতে আসতে বলেন। তার আশ্বাসেই এই চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। প্রথমে তাকে ঢাকায় এনে পাসপোর্ট ও বিএমইটি কার্ড করে দেওয়া হয়। চারবার চেষ্টার পরেও তিনি দুবাই যেতে পারেননি। কারণ, প্রতিবারই র‌্যাব তাকে উদ্ধার করেছে। এই তরুণীকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয় এবং সেখানে একটি ড্যান্স ক্লাবে চাকরি প্রস্তুত বলেও জানানো হয়। কিন্তু তার বিএমইটি কার্ডে লেখা ছিল ‘গার্মেন্টস কর্মী’। কেন বারবার যেতে চেয়েছেন জানতে চাইলে এই নারী বলেন, চক্রটি তাকে অগ্রিম টাকা দিয়েছে। প্রতিবার জোরপূর্বক পাঠানোর সময় তিনি দুবাই যেতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু তাকে বলা হয়, তার পেছনে তাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই তাকে যেতেই হবে। না যেতে চাইলে তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। ভুক্তভোগীর আরেক তরুণ জানান, তাকে দুবাই পাঠানোর কথা বলে চক্রটি সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু তিনি বিদেশে যেতে পারেননি।




Archives
Image
খান শওকতকে বহিষ্কার করল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ
Image
আগামী তিন দিন দেশের সব বিভাগে কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে
Image
আমি নির্বাচিত হলে সদর উপজেলার দূর্নীতির ঘর তালাবদ্ধ করবো : এসএম জাকির হোসেন
Image
বরিশালে পরকীয়ায় বাঁধা দেয়ায় কলেজছাত্রকে কুপিয়ে জখম
Image
থমথমে বরিশাল নথুল্লাবাদ, মিছিল থেকে আটক ২