স্পর্শসুখ আজও বহমান – চিত্তরঞ্জন দত্ত
স্পর্শসুখ আজও বহমান
।। চিত্তরঞ্জন দত্ত।।
গুমরে মরে প্রতীক্ষার ব্যথা
দূর থেকে অস্পষ্ট দেখা
তারবিহীন যন্ত্রে কতো কথা শোনা, তবুও—
মিটেনা আত্মার তৃষ্ণা
কবে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ?
আকাঙ্ক্ষা – অপেক্ষা আর
প্রতীক্ষার তীব্র যন্ত্রণায়
হৃদপিণ্ডে ব্যামো’র ইশারা
কতো মানুষের গিরিসম স্বপ্ন –কতো আশা
স্বল্পকালে পূরণের আছে অন্তহীন ইতিহাস
হে তুমি, আমি কি খুব বেশি পাপী?
ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে
আমাতে আর নেই আমি
তড়িৎ মোর মনোসাধ পুরাও
ওগো অন্তর্যামী।
পার হয়ে গেল দশক
যুগেরও প্রায় প্রান্তসীমা
তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে আশা
আশা-নিরাশার দোলাচলে
স্থবির যেন জীবনের সব অধ্যায়
তরপর—
কোন একদিন মধ্যাহ্নে মোরা
ক’জন বন্ধু আড্ডায় মশগুল —
থেমে গেল যত কথা, হাসি আর ঠাট্টা
দরাজকন্ঠে ঘোষণা হচ্ছে
বাংলার নয়নমণির আগমনী বার্তা।
তবেকি মোর প্রাণের আকুতি
শুনিলেন ঈশ্বর? প্রনতি তোমায়।
ভেঙে গেল সাধের আড্ডা
আনন্দে সবাই আত্মহারা!
না, আর বেশি দেরী নয়
দু’দিন বাদেই আসবেন বঙ্গবন্ধু
উত্তাল সুগন্ধা রূপ নিয়ে যেন
হলো শত সিন্ধু!
বন্দরময় সাজ সাজ রব
দুলছে বন্দর-গ্রাম কতো জনপদ
সহস্রজনের যত আনন্দ
তা থেকে আমার শিহরণ
একটু স্বতন্ত্র, একটু ভিন্ন
হবে কী পূরণ আমার
যুগব্যাপী লালিত বাসনা?
সংশয় সন্দেহ শেষে
বুক টান করে দাঁড়ালাম লাইনে।
আর ক্ষণকাল পরে আসছেন
স্বাধীন বাংলার স্হপতি
নিপীড়িত মানুষের নেতা
বাঙালির নয়নের মনি।
হ্যাঁ, ওইতো আসছেন তিনি!
মুহুর্মুহু শ্লোগান, আর করতালি
যত-ই এগুচ্ছেন
হৃদকম্প বাড়ছে আমার
যেন বেসামাল আমি।
না, ভাবনার সময় শেষ।
এসে গেছেন প্রায় কাছাকাছি!!
বামে দাঁড়ানো মোর বন্ধুর পর্ব শেষে
ঘুরে গেলেন তিনি বিপরীত দিকে
আশাভঙ্গের শঙ্কায়
বুক ভেঙে কান্না এলো।
না, শ্বেতশুভ্র পাঞ্জাবি আবৃত দীর্ঘাঙ্গী দেহটি
ডানে মোড় নিতে ই
ত্বরিতে এগিয়ে দিলাম হাত
দু’গন্ডে আমার অশ্রুধারা
হলো এক যুগ প্রতীক্ষার অবসান।
সেই স্পর্শসুখ দেহে মোর
আজও বহমান।
Post Views:
১৮১
|