Current Bangladesh Time
রবিবার মে ৫, ২০২৪ ৯:০০ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » সাংবাদিক মিন্টু বসুর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে বরিশালে এক স্মৃতিচারন সভা 
Sunday October 3, 2021 , 1:06 pm
Print this E-mail this

বঙ্গবন্ধু’র আহবানে তাঁর নেতৃত্বে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে অংশ নেন

সাংবাদিক মিন্টু বসুর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে বরিশালে এক স্মৃতিচারন সভা


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : নাট্যকার, সাংবাদিক মিন্টু বসুর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে স্মৃতিচারন সভা অনুষ্ঠিত। রোববার (অক্টেবর ৩) সকালে বরিশাল প্রেসক্লাবের হল রুমে সাংবাদিক মিন্টু বসুর স্মৃতিচারন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-বিপ্লবী বাংলাদেশের প্রকাশক/সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম ফরিদ, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি আমজাদ হোসাইন, বরিশাল প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ, মুরাদ আহমেদ, জাকির হোসেন, তপংকর চক্রবর্তী, গোপাল সরকার, অপূর্ব অপু প্রমখ।

উল্লেখ্য, মিন্টু বসুর বাবা সুরেন্দ্রনাথ বসু, মা শৈলবালা বসু। এঁদের ঘর আলো করে তিনি এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। সময়টা ছিলো ১৯৪৮। আগের বছর ভারত ভাগ হয়েছে। উপমহাদেশ জুড়ে তখন প্রবল অস্থিরতা। এরই মধ্যে সবুজে ঘেরা বাংলার জলকাদায় বেড়ে ওঠেন তিনি। বাবা-মা’র ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। স্বদেশের মাটি তাঁকে এত আপন করে নেয় যে, এই আনন্দ ভুবন ছেড়ে তিনি কোথাও যেতে চাননি। নিজের ঘরকেই পৃথিবীর ঐশ্বর্য মনে করে থেকেছেন আজীবন। প্রতিনিয়ত নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন। লেখালেখি থেকে শিল্প-সাহিত্য চর্চায়, সামাজিক পটভূমিকায় নিজেকে তুলে ধরেছেন অনন্য উচ্চতায়। বরিশাল শহর ছিলো তাঁর শক্তি আর প্রেরণার জায়গা। ষাটের দশকে গড়ে ওঠা ‘বরিশাল যুব সংঘ’ করতেন। সময়টা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় কাল। ‘যুব সংঘ’ ছিলো তখন একটি প্রগতিশীল, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন। এর কর্মীরা সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখতেন। ঊনসত্তরের স্বাধীকার আন্দোলনে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়ে গণজাগরণে জোয়ার আনেন। তরুণ মিন্টু বসু ছিলেন এই কাফেলার একজন। বঙ্গবন্ধু’র আহবানে তাঁর নেতৃত্বে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে অংশ নেন। ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’ ছিলো রণাঙ্গনের বার্তা। মুক্তিযুদ্ধের পত্রিকা। তিনি যুক্ত হলেন এর সাথে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধকালীন ঝাঁঝালো সময়ে তিনি অবতীর্ণ হলেন একজন সাংবাদিকের ভূমিকায়। পত্রিকার তিনি তখন ছিলেন বার্তা সম্পাদক। সম্পাদক ছিলেন আরেক অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা নূরুল আলম ফরিদ। জীবনকে তুচ্ছ করে তাঁরা এসময় রণাঙ্গনের খবর জোগাড় করতেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ মিন্টু বসুর জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। দেশ স্বাধীন হলে তাই তাঁকে দেখা যায় পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা গ্রহণ করতে। তাঁর হয়তো মনে হয়েছে এর মাধ্যমেই তিনি সমাজের বৈষম্য, অসংগতিগুলো তুলে ধরতে পারবেন। তিনি কলম ধরলেন সমাজবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে। চিন্তায় ছিলেন আপোষহীন। এজন্য মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজ বিরোধী অশুভশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন আজীবন। এক্ষেত্রে তিনি যেমন ‘বিপ্লবী বাংলাদেশকে কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন, তেমনি প্রয়োজনে ‘দৈনিক দখিণাঞ্চল’, ‘দৈনিক গ্রাম সমাচার’ এবং ‘দৈনিক আজকের বার্তা’র সাথে যুক্ত থেকে সমাজের অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন। গড়ে তোলেন একঝাঁক নির্ভীক সংবাদকর্মী। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি বিশেষকরে নাটক ছিলো তাঁর প্রাণের স্পন্দন। শিশুদের ভিতর নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তিনি খুব করে অনুভব করতেন। এজন্য আমরা তাঁকে দেখি ‘চাঁদের হাট’ শিশু সংগঠন নিয়ে কাজ করতে। শিশুদের জন্য নাট্যরূপ দেয়া নাটক ‘তোতা কাহিনি’ ঢাকার মহিলা সমিতি মঞ্চে অভিনয় সমৃদ্ধ হলে বিপুলভাবে দর্শক সমাদৃত হয়। এদিক থেকে তাঁকে বরিশালে শিশু নাট্য বিকাশের পথিকৃৎ বলা যায়। নাটক লেখা, নাট্যরূপ দেয়া, সেই নাটক’র নির্দেশনা দেয়া, মঞ্চ বাঁধা আবার সেই মঞ্চে নিজে অভিনয় করা এ কেবল মিন্টু বসুর পক্ষেই সম্ভব ছিলো। অর্থাৎ সবকিছু তাঁর নিজের মতো হওয়া চাই। আর কে না জানে এব্যাপারে তিনি ছিলেন কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।  স্বৈরাচার বিরোধী নাটক নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। এসময় তিনি বহু নাটক রচনা করেন। ‘খেয়ালী’র সেসব নাটক নগরের বিভিন্ন স্পটে, পথে প্রান্তরে দলের তরুণ সাহসী নাট্যকর্মীরা মঞ্চায়ন করে গণজাগরণে এক নোতুন মাত্রা সংযোজন করে। ‘খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার’ হয়ে ওঠে গণনাট্য দল। তাঁর লেখা নাটক ‘বিপ্লবের মৃত্যু নেই’ সুদূর ইতালিতে মঞ্চস্হ হয় এবং বিশেষ এওয়ার্ড লাাভ করে। তাঁর একাধিক নাটক বিটিভিতে প্রচারিত হয়। একজন নাট্যকার হিসেবে, নাট্য নির্দেশক ও নাট্য কুশিলব হিসেবে, নাটক’র অসাধারণ সংগঠক হিসেবে তিনি জীবনে নানা সংস্থা থেকে বহু পদক লাভ করেন। মিন্টু বসুর কাজের পরিধি ছিলো ব্যাপক। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন থেকে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম কোথায় না তিনি দায়িত্ব পালন করেননি। এমনকি সমাজের নানাবিধ ব্যাধি নির্মূলে, সামাজিক অবক্ষয় নিধনে, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার প্রতিহত করতে সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে সাথে নিয়ে তিনি যেভাবে জোটবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন আজও যা বিস্ময়কর! ইতিহাস, ঐতিহ্যের শহর বরিশাল। মিন্টু বসু’র সকল কাজ এই কবিতার শহরকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। নাগরিক জীবন আজও তাঁর অভাব মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে। প্রভাতে ‘খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার’ তাঁর প্রাণপুরুষ মিন্টু বসু’র সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে। তাঁর না ফেরার দিনে আসুন আমরা সবাই তাঁর মহৎ কাজকে সন্মান করি। তিনি বেঁচে থাকুন আমাদের অন্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনন্তকাল।




Archives
Image
বরিশালে পরকীয়ায় বাঁধা দেয়ায় কলেজছাত্রকে কুপিয়ে জখম
Image
থমথমে বরিশাল নথুল্লাবাদ, মিছিল থেকে আটক ২
Image
খেলাপি ঋণের জামিনদার হওয়ায় বরিশালে চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল
Image
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নবজাতককে ফেলে রেখে মা উধাও
Image
দেশের দুই অঞ্চলে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আশঙ্কা