|
মোহাম্মদপুর তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে মালবাহী নৌকা ও ট্রলারে চাঁদাবাজি শুরু করেন
রাজমিস্ত্রি থেকে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান : বরিশালে গাঙচিল কবির গ্রেফতার
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : কবির হোসেন ওরফে জলদস্যু কবির ওরফে দস্যু কবির ওরফে বরিশালের গাঙচিল কবির (৪৬) ১৯৯০ সালে ঢাকায় এসে বাবার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর গাড়ি চালানো, হাউজিং চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ‘গাঙচিল’ সন্ত্রাসী বাহিনীতে যোগ দিয়ে অপরাধ জগতে হাতেখড়ি হয়। কবির ওই বাহিনীর সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুর তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে মালবাহী নৌকা ও ট্রলারে চাঁদাবাজি শুরু করেন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি নিজের নামে দুর্ধর্ষ এক বাহিনী গড়ে তোলেন। এলাকার বখে যাওয়া যুবকদের তার বাহিনীতে যোগদান করাতেন। কবির বাহিনীর সদস্যরা ক্ষুদ্র ব্যবসা, গাড়িচালক, দিন মজুরসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন। বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কবির বাহিনীর হোতা ও কবির হোসেন ও তার সাত সহযোগীসহ মোট আটজনকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-২। গ্রেফতাররা হলেন-কবির হোসেন, মো: রুবেল ওরফে পানি রুবেল (২৭), মো: আমির হোসেন ওরফে আব্দুল হামিদ ওরফে আমির (২১), মো: মামুন (২৫), মো: রিয়াজ (২০), মো: মেহেদী হাসান (২৫), মো: মামুন ওরফে পেটকাটা মামুন ও মো: বিল্লাল (২৪)।এসময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল ও এক রাউন্ড গুলি, একটি ছোরা, একটি চাকু, একটি স্টিলের গিয়ার হোল্ডিং ছুরি, একটি লোহার পাইপ, চারটি চাপাতি, ৪১৭ পিস ইয়াবা ও সাতটি মোবাইল ফোন। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামের একটি কিশোর গ্যাঙয়ের সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব। তার দেওয়া তথ্য ও কয়েকজন ভুক্তভোগী ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে র্যাবের কাছে অভিযোগ দেয়। অভিযোগের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে কবির বাহিনীর হোতাসহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা কবির বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। এই দলের সদস্যরা সংঘবদ্ধ অপরাধী। দলের মূলহোতা কবির। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২০ থেকে ২২ জন। তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যা সন্ত্রাসী, মাদক কেনাবেচা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৯৯০ সালে কবির তার পরিবারসহ বরগুনা থেকে ঢাকায় আসে। ঢাকায় এসে প্রথমে তার বাবার সহযোগী থেকে রাজমিস্ত্রীর সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে গাড়ি চালানো, হাউজিং চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ২০১০ সালে গাংচিল সন্ত্রাসী বাহিনীতে যোগ দেন। এই বাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে তার অপরাধ জগতে হাতেখড়ি হয়। ওই বাহিনীর সঙ্গে তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে মালবাহী নৌকা ও ট্রলারে চাঁদাবাজি শুরু করে। একটা সময় তার কুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে অপরাধ জগতে তিনি ‘জলদস্যু’ খেতাব পায়। পরবর্তীতে র্যাবের অভিযানে গাঙচিল বাহিনীর অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। ২০১৬ সাল থেকে কবির বাহিনী নামে দুর্ধর্ষ এক বাহিনী গড়ে তোলে। কবির বখে যাওয়া যুবকদের তার বাহিনীতে যোগদান করাতেন। তিনি ২০১৮ সালে প্রথম গ্রেফতার হন। হত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজি, মারপিটসহ সর্বমোট ২৪টি মামলার আসামি কবির। র্যাবের মুখপাত্র বলেন, কবির বাহিনীর সদস্যরা ক্ষুদ্র ব্যবসা, গাড়ি চালানো, দিন মজুরসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। গ্রেফতার রুবেলের নামে সাতটি, মামুনের নামে পাঁচটি, পেটকাটা মামুনের নামে চারটি, আমির হোসেনের নামে তিনটিসহ বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতার সদস্যরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তারা টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও তৈরি করে নিজেদের অবস্থান জানান দিতেন। পানি রুবেল ও পেটকাটা রুবেল নিজেদের আধিপত্য জানান দেওয়া ও এলাকায় নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তারা ভিডিও তৈরি তৈরি করতেন। তারা টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে হিসেবে কাজ করতেন। তাই কবির তার দলে এমন ছেলেদের ভেড়াতো যাদের এলাকায় প্রভাব ছিলো। যাকে দিয়ে স্বার্থ হাসিল হবে। তাই পানি রুবেল, মামুনসহ গ্রুপের সদস্যরা ফেসবুক পেজে নিজেদের সক্ষমতা জানান দিতেন। কবিরের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি-না এ বিষয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, কবিরের কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের কথা বলেনি। মূলত মোহাম্মদপুর এলাকায় ভাড়ায় কাজ করেন। মূলত ভাড়ায় জমি দখল, জমি কেনা ও বাড়ি করতে গেলে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। কবিরের বিরুদ্ধে হত্যা ও সঙ্গবদ্ধ ধর্ষণের মামলাও রয়েছে। কবিরের পেছনে কেউ আছে কি-না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, কবির নিজেই তার দলের প্রধান। তারা বিভিন্ন মানুষের প্রয়োজনে খাটে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার কবির গ্রুপের কেউই মোহাম্মদপুরের স্থানীয় না। তারা সবাই ভোলা, বরিশাল, বরগুনা জেলার। তবে সবাই মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা। ১৫-২০ বছর ধরে তারা এই এলাকায় বাস করছে। কবিরের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা রয়েছে। বসিলা, আমিন বাজার এলাকায় তাদের আধিপত্য বেশি পেয়েছি।
Post Views:
১৪৮
|
|