মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পিরোজপুরের কাউখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
মানবতার মা-খালেদা খাতুন রেখা : ভয়ে পালালেন স্বজনরা, করোনায় মৃত নারীর গোসল করালেন ইউএনও
পিরোজপুর কাউখালী থেকে ফিরে সুব্রত বিশ্বাস : পিরোজপুরের কাউখালীর উজিয়ালখান গ্রামের এক নারী শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। করোনার ভয়ে স্বজনরাও লাশ ধরছিলেন না। প্রতিবেশীরাও কেউ এগিয়ে আসছিলেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাশ পড়ে ছিল বাড়িতে। এ সংবাদটি নাড়া দেয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে লাশের গোসল করাতে উদ্যোগী হন কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা: খালেদা খাতুন রেখা।
আগে কখনো লাশ গোসলের অভিজ্ঞতা না থাকলেও ইতিমধ্যে শিখে নিয়েছেন নিয়মরীতি। তারপর ওই নারীর লাশের গোসল করান। তাকে সহযোগিতা করেন, সেচ্ছাসেবী মাহাফুজা মিলি এবং শামীমা আক্তার। লাশ গোসল করানোর আগে সুরক্ষাসামগ্রী (গাউন, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, ক্যাপ ও বুটজুতা) পরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী গোসল করানো হয় এবং কাপনের কাপড় পরানো হয়। রাত ১২টার দিকে কাউখালী উজিয়ালখান গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা: খালেদা খাতুন রেখার করোনায় মৃত নারীর লাশ গোসল করানো সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ তাদের স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা খাতুন রেখা। গর্ব করার মতো কাজ করে চলেছেন। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’
বেশকিছু পত্রিকায় সংবাদটি বেশ ফলাও করে ছাপা হলেও অনেক পত্রিকায় এর সমালোচনা করে ভিন্নতর সংবাদ প্রকাশিত হয়।
অনেক পত্রিকা লেখেন –
‘লাশ ছেড়ে পালায়নি স্বজন বরং সন্তানের কাধেই ছিল মায়ের লাশ’
‘‘পিরোজপুরের কাউখালীতে গত শুক্রবার ৯ জুলাই সাজ্জাদুল ইসলাম মিথুনের মমতাময়ী মা কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। রাতে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত নারী গোসলের উপযোগী কেউকে না পাওয়া গেলে এগিয়ে আসেন কাউখালীর উপজেলার সুযোগ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব খালেদা খাতুন রেখা। কাউখালী উপজেলার সন্মানিত ইউএনও স্যার ‘‘খালেদা খাতুন রেখা’’ এবং আরো দুই জন হৃদয়বান মানুষ ‘‘মিলি আপা এবং শামীমা আপা’’ মরহুমার গোসলের কাজ সম্পন্ন করান। গোসলের পর মরহুমার সন্তান নিজে মায়ের লাশ বুকে জড়িয়ে ধরে খাটে তোলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা নিজে উপস্থিত থেকে মৃতদেহ গোসল করানো মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত বিধায় বিষয়টাকে গুরুত্বের সাথে বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করে। তবে কিছু মিডিয়া “লাশ ফেলে পালালো স্বজন ; এগিয়ে এলেন ইউএনও” এমন শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করে। সেটি সম্পূর্ণ অতিরঞ্জিত, বানোয়াট মনগড়া ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন। প্রকৃতপক্ষে স্বজনদের মৃতদেহ ছেড়ে পালানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি, যেটি ইউএনও স্যার নিজেও তার ভেরিফাইড আইডিতে উপস্থাপন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে লাশের পাশে মৃতব্যক্তির স্বামী, সন্তান উপস্থিত ছিলেন।
তারপরও কিছু মানুষ মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছে যে, মরহুমার পরিবার ও স্বজনরা লাশ ফেলে চলে গেছে। মিডিয়া এবং সাধারণ জনগন ও কিছু না জেনে এ মিথ্যা খবর ফেইসবুক সহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ মরহুমাকে জান্নাত দান করুক। আমিন।’’
শুধু এতটুকুই বলবো, সমালোচনা নয়।
ভূপেন হাজারিকার কালজয়ী গানটি আজ আমাদের সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় – “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।”
জয় হোক মানবতার, জয় হোক মানবতার মা – মোসা: খালেদা খাতুন রেখার।
Post Views:
২৯৩
|