Current Bangladesh Time
মঙ্গলবার মে ৭, ২০২৪ ১০:৩৮ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বরিশালে রোগী ধরা দালাল চক্রের সদস্যরা, তৎপর প্রশাসন 
Tuesday September 7, 2021 , 5:19 pm
Print this E-mail this

দালাল বিরোধী এই অভিযান অব্যাহত থাকবে-র‌্যাব-৮ কর্মকর্তা কমান্ডার মেজর মো: জাহাঙ্গীর হোসেন

বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বরিশালে রোগী ধরা দালাল চক্রের সদস্যরা, তৎপর প্রশাসন


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বরিশালে রোগী ধরা দালাল চক্রের সদস্যরা। প্রতিনিয়ত এ চক্রের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন রোগীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের অভিযানে একাধিকবার দালালরা আটক হলেও তাদের রোধ করা যাচ্ছে না।আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের শুরু করে প্রতারণা। তবে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, দালালদের ধরতে তাদের নিয়মিত অভিযান চলবে। এরই মধ্যে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল এবং আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে ১৪ জন দালালকে আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে। তবুও থামছে না তাদের দৌরাত্ম্য। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। কিন্তু দালালদের অপতৎপরতায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। দালালদের সহযোগিতা করছেন হাসপাতালের কিছু কতিপয় কর্মচারী। অনেক কর্মচারীর বিরুদ্ধে দালালির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের কর্মচারী না হয়েও নিজেদের অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দেন দালালরা। এরকম দেড় শতাধিক বহিরাগত ব্যক্তি রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায়, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভর্তি করানোসহ নানা হয়রানি করছে। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই অসংখ্য রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। শয্যা সংখ্যার তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকা ও বহির্বিভাগে ধারণক্ষমতার বেশি রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। এ সংকটকে কাজে লাগাচ্ছেন এখানকার কিছু অসাধু কর্মচারী ও দালাল। নিয়মানুযায়ী, কোনো সরকারি হাসপাতালের ২০০ গজের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকতে পারবে না। আইনের তোয়াক্কা না করেই বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নামিদামী এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিতে নগরীতে আসা গ্রামাঞ্চলের রোগীরাই বেশি নিঃশ্ব হচ্ছে দালালদের ফাঁদে পড়ে। তথা কথিত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে ধরে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র। এতে করে রোগীরা আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিপদগ্রস্থ হলেও আগুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে দালাল নির্ভর চিকিৎসক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক মালিক এবং দালাল চক্র। সূত্রে জানাগেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল, হাসপাতাল এবং সদর রোড এলাকার ডাক্তার পাড়ায় ওৎ পেতে বসে থাকছে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। লঞ্চ কিংবা বাস থেকে টার্মিনালে নামা মাত্রই কৌশলে রোগীদের ফাঁদে ফেলছে তারা। গ্রামগঞ্জ থেকে আসা রোগীদের ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নির্দিষ্ট কোন হাতুড়ে ডাক্তারের চেম্বার কিংবা ক্লিনিকে। এজন্য কোন কোন সময় কৌশলগত কারণে নামিদামী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মৃত্যুর গুঞ্জনও ছড়িয়ে দিচ্ছে সংঘবব্ধ এই দালাল চক্র। লঞ্চ ঘাট, বাস টার্মিনাল এবং সদর রোড এলাকায় চিকিৎসকের খোঁজ করা কিংবা হাতে পরীক্ষা নিরীক্ষার কাগজপত্র দেখা মাত্রই তাদের উপরে ঝাপিয়ে পড়ে রিক্সা এবং অটোরিক্সা চালক বেশে রোগী ধরার দালালরা। এমনকি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদেরকেও ফুসলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে হাতুড়ে চিকিৎসকদের চেম্বার, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। বিনিময় চিকিৎসক এবং দালাল নির্ভর প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাচ্ছে মোটা অংকের পার্সেন্টেজ। জানাগেছে, লঞ্চঘাট, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল, রূপাতলী বাস টার্মিনাল, সদর রোড এলাকা এবং বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল এলাকায় অর্ধশতাধিক দালাল রয়েছে। এদের মধ্যে পেশাদার চিহ্নিত দালালের চালিকায় রয়েছে প্রায় অর্ধশত দালাল। যারা শুধুমাত্র দালালি পেশার উপর নির্ভরশীল। এদের মধ্যে রয়েছে-চিহ্নিত দালাল সহিদ। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন হচ্ছে নগরীর বিশাল দালাল সিন্ডিকেট। সহিদের সিন্ডিকেটে রয়েছে-রিপন, রুহুল, নাসির, টেন্ডার আনিস, আনোয়ার, কালা মানিক, পাগলা মানিক, আমতলার মোড় এলাকার ছদ্দনাম কাডবডি, বাচ্চু, কামাল লিটন, মনির। এ দিকে উল্লেখিত দালাল চক্রটি সদর রোডের পাশাপাশি নথুল্লাবাদ, রূপাতলী বাস টার্মিনাল এবং লঞ্চ ঘাট এলাকায় রোগী ধরার ফাঁদ পাতছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ দালালই অটোরিক্সা এবং রিক্সা চালক বেশে গ্রামাঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে বরিশালে আসা রোগীদের ফাঁদে ফেলছে। এদের বাইরে সদর রোড এলাকায় রয়েছে দালালদের বিশাল সিন্ডিকেট। কাকলির মোড় থেকে হাসপাতাল রোডে সদর হাসপাতাল পর্যন্ত রোগী ধরার জাল বিস্তার করে রেখেছে চক্রটি। বিশেষ করে সদর রোডে বিবিরপুকুর পাড় সংলগ্ন ডাক্তার পাড়ায় এদের আনোগোনা বেশি। ১৫ থেকে ২০ জনের সংঘবদ্ধ দালাল ওৎ পেতে থাকছে রোগীদের আসায়। রিক্সা চালক বেশে রয়েছে দালাল শাহ আলম, লিয়াকত ও সোহরাব। এর মধ্যে সোহরাব বেশিরভাগ সময় লঞ্চঘাট এলাকায় রিক্সা চালক বেশি রোগী ধরার কাজ করছে। ইতিপূর্বে এসব দালালরা কয়েকবার ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। কিন্তু আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পূণরায় পরিচালনা করে আসছে দালালি কার্যক্রম। দালালদের এই নৈরাজ্য রুখতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর ) সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একটানা বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল এবং আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে ১৪ জন দালালকে আটক করা হয়। এ সময় আটক ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনকে ১ মাস করে কারাদন্ড ও ১ জনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: মারুফ দস্তগীর। এছাড়া একজনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করে র‌্যাব। দালাল প্রসঙ্গে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: মো: জহিরুল হক মানিক বলেন, দালালদের কারণে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই দালালদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও তৎপর হওয়া উচিত। বরিশাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজি মফিজুল ইসলাম বলেন, আমার একটা তালিকা করছি। সে তালিকা অনুযায়ী দালালনির্ভর ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। দালাল আছে, এমন ডায়াগনস্টিক সেন্টার সম্পর্কে কেউ যথাযথ প্রমাণ দিলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে প্রতিমাসেই জেলা প্রশাসক, র‌্যাব ও পুলিশকে অবহিত করা হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে নিয়মিত চেকিং ও রোগীদের সতর্ক করছি। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, রোগী ধরার দালাল সম্পর্কে আগেও শুনেছি। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত যথেষ্ট সজাগ আছে। র‌্যাব-৮ কর্মকর্তা কমান্ডার মেজর মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে জনগণকে নির্ভেজাল সেবা পাইয়ে দেয়ার জন্য র‌্যাবের দালাল বিরোধী এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।




Archives
Image
বরিশালে ভোক্তার অভিযান, ৯ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
Image
উপজেলা নির্বাচন : বরিশালে ভোট সামগ্রী বিতরণ
Image
উপজেলা নির্বাচন : লাইসেন্সধারীরাও অস্ত্র বহন-প্রদর্শন করতে পারবে না
Image
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
Image
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোট শুরু