|
কেন্দ্র এবং জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ
বিএনপি নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি করতে দিয়েছি, সান্টুর বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল!
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : ‘নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি করতে দিয়েছি’- কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও দলের বরিশাল উজিরপুর উপজেলা সভাপতি সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই বক্তব্য নিয়ে চলছে সমালোচনা। এর আগে সান্টু উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে দেওয়া এক বক্তব্যে এই নেতা দাবি করেছিলেন, ‘বিএনপিতে যোগদানের আগে দল চালানোর জন্য খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন’। ওই বক্তব্যও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই নেতার বিতর্কিত বক্তব্য ও কথাবার্তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। সম্প্রতি সান্টু উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়ায় তার নির্মিত অত্যাধুনিক বায়তুল আমান মসজিদের বিপরীতে পাশে ‘বায়তুল ভিউ পার্টি সেন্টারে’ উপজেলা নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করেন।

ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা যে চাঁদাবাজি করেছে, সেটা আমি তাদের করতে দিছি।’ ‘কেন দিছি কারণ গত ১৭ বছর নেতাকর্মীরা কিছু খায় নায়। অবস্থা কিন্তু ভালো না, আমি থাকি আর না থাকি আপনারা এক থাকেন, দল ক্ষমতায় না এলে কিন্তু কিছু পাবেন না। নেতাকর্মীদের পকেটে যদি পয়সা না থাকে তাহলে সমস্যা হলে আমার কাছে আসেন। আর পকেটে যদি পয়সা থাকে তাহলে তো আর আসবেন না। তাই আমি চাই কর্মীরা ভালো থাকুক।’ জুলাই মাসে এক সভায় সান্টুর দেওয়ার সেই বক্তব্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে চাঁদাবাজি নিয়ে সান্টু যে বক্তব্যটি দিয়েছেন- তা স্পষ্ট। এমনকি তার এ ধরনের বক্তব্যের বিষয়টি স্বীকার করেছেন সেখানে উপস্থিত একাধিক নেতাকর্মী। বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম মাহমুদ মাহবুব মাস্টার ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই মাসের ২২ কি ২৩ তারিখ সান্টু ভাইর মালিকানাধীন বায়তুল ভিউ পার্টি সেন্টারে বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে এ ধরনের কিছু কথা বলেছেন। কথাগুলো হয়তো তার (সান্টু) অজান্তে বের হয়েছে। পরে তার বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছেন।’ এর আগে ২০ জুলাই বানারীপাড়া উপজেলার সম্মেলনে ‘খালেদা জিয়ার হাতে দল চালাতে ১০ লাখ টাকা দিয়ে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন’ বলে সান্টুর তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘৯৩ সালে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে হেলিকপ্টারে উজিরপুরে আসেন এবং তার হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করেন।’ ফালু (মোসাদ্দেক হোসেন ফালু) ভাই সব জানেন বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন সান্টু। এ সময় সান্টু বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে জড়িয়েও বক্তব্য দেন। আলালকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তাকে নমিনেশন এনে দিয়ে ভোটে জেতাতে ৬ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন সে আমারে বাঁশ দেওয়া শুরু করছে। আমাকে মামলায় দিয়েছে’। সরোয়ারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘সেই দিন ভুইল্লা যান। আমারে আঙুল দিয়েন না। আমি কিন্তু বরিশালে একবার ভোট করেছি, আবারও করে দেখাবো।’ ২০০৮ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মরহুম শওকত হোসেন হিরনের সঙ্গে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। নির্বাচনে ৫০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ওই সময় সান্টু বিএনপিতে যোগদান করেননি। ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন বলেন, ‘সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু জেলা বিএনপির সদস্য পদেও রয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। সর্বশেষ চাঁদাবাজি নিয়ে তার (সান্টু) যে বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তা বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি।’ তবে সেখানে এ ধরনের কথা বলেছেন কি না তা তিনি নিশ্চিত নন। এ ছাড়া আগেও দলের জন্য খালেদা জিয়াকে টাকা দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন হয়েছিল সেখানে-আগে ও পেছনের কথা কাটছাঁট করা হয়েছে বলে শাহিন দাবি করেন। এরপরও কেন্দ্র এবং জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বলেও জানান তিনি।
Post Views: ০
|
|