|
কার্ড দেয়ার আগে তালিকা করার দায়িত্বে থাকা নেতাদের ভালো করে যাচাই করা উচিত ছিলো
বরিশাল ১৫নং ওয়ার্ডে ওএসএম’র কার্ড বিতরণে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী!
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) ১৫নং ওয়ার্ডে বিশেষ সহায়তা ওএসএম কার্ড বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করে কার্ড বিতরণ ও একই পরিবারে একাধিক কার্ড দেয়ায় হতদরিদ্ররা বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, স্থানীয় নিজ ঘরানার এক তলা, ২ তলা ভবনের মালিকসহ, লক্ষ লক্ষ টাকার সুদ ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, সরকারী চাকুরিজীবিও বিত্তশালীদের নামে কার্ড দেয়া হয়েছে। সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় স্বল্প আয়ের মানুষ যেন খাদ্য সংকটে না পড়ে সে জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনায় খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১০ টাকা দরের চাল বিক্রি শুরু করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এই বিশেষ সুবিধা দিনমজুর, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, ভিক্ষুক, সহ অন্যান্য সকল কর্মহীন মানুষ পাবে বলে পরিপত্র জারি করা হয়। নগরীর ১৫নং ওয়ার্ডে অনেক নিম্নআয়ের মানুষের বসবাস রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রকৃতপক্ষে নিম্ন মধ্যবিত্ত অধিকাংশ পরিবারই পায়নি এ কার্ড। সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ চায়ের দোকানি, রিক্সাচালক, খাবার হোটেল কর্মচারী, আয়া, ভিক্ষুকসহ দিনমজুদের নাম নেই এই ওয়ার্ডের তালিকায়। জানা গেছে, বটতলা এলাকায় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সহ কয়েক নেতাকে এই তালিকা করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। বিসিসি’র পক্ষ থেকে এবং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তদারকি করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু মেয়রের কঠোর নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে ওয়ার্ড আ:লীগ সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন কবর নিজের ইচ্ছামত হত দরিদ্রদেরকে বঞ্চিত করে নিজ ঘরানার স্বচ্ছলদেরকেও, আবার একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে বিশেষ ওএমএস’র তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকার একাধিক কর্মহীন মানুষ। বটতলা এলাকার মৃত কাঞ্চন মোল্লার ছোট মেয়ে রুমকি ১৫ নং ওয়ার্ডের ভোটার তবে ১৮ নং ওয়ার্ডে তার স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করেন। কবির তার নামে কার্ড করিয়ে দেয় পাশাপাশি সরকারি চাকুরিজীবি বেশ কয়েকজনকে কার্ড করিয়ে দেয়। অথচ অভিযোগ করে জানান, এলাকাবাসী প্রকৃতপক্ষে যাদের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ওএমএস কার্ড পাওয়ার কথা তারা পায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ওয়ার্ড আ:লীগের স্বঘোষিত সাধারণ সম্পাদক বনেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ্’র সাথে যোগাযোগ করে সভাপতি হয় কবির৷ এর আগে বটতলা এলাকার শরীফ বাড়িতে আগুন লাগলে ক্ষতিগ্রস্তদের জামায়াতের আমির মোয়াজ্জেম হোসেনের দেয়া অর্থ তিনি আত্মসাৎ করার মত একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দা সুমন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিশেষ ওএসএম কার্ড আনতে কাউন্সিলরের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমাদের জানায় তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমি দিনমজুর হিসেবে কাজ করে খাই আমার সংসারে ৪জন লোক কোন রকম আধ পেট খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। তারপরও সরকারের দেয়া একটি ওএসএম কার্ড আমরা পাইনি। তিনি আরো বলেন, এই এলাকায় যাদের টাকা, বাড়ি, গাড়ি সরকারি চাকরি আছে তাদের কার্ড দেয়া হয়েছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্ড অফিসের এক কর্মচারী জানান, সময়ের অভাবে একই তালিকার ১০/ ১৫ টি নাম পরিবর্তন করে সরকারি ত্রাণ, এনজিও’র ত্রাণ এমনকি ১০ টাকার চালের নামের তালিকা দেয়া হয়েছে ওয়ার্ড আ:লীগ সভাপতির নির্দেশ মতে। কার্ড বিতরণে তিনি সরকারি কোন নিয়ম কানুন মানছে না। তাদের পছন্দের লোকদেরই বারবার বিভিন্ন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে বলেন, যেখানে আমাদের কিছু বলার বা করার থাকে না। এ বিষয় জানতে বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসার তাজুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত) একাধীকবার ফোন দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি। এজন্য তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একধিক আ:লীগ নেতারা বলেন, তালিকা করেছিলো ওয়ার্ড আ:লীগ নেতৃবৃন্দরা, তাতে ওয়ার্ড যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সহযোগিতা করার নির্দেশনা ছিলো। কার্ড দেয়ার আগে তালিকা করার দায়িত্বে থাকা নেতাদের ভালো করে যাচাই করা উচিত ছিলো। নেতারা তাদের স্বজনপ্রীতি করে তাদের লোকদের কার্ড বিতরণ করেছেন। এদিকে ১৫নং ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশেষ ওএসএম কার্ড তালিকা করতে ১৫নং ওয়ার্ডে প্রতিটি ইউনিটিতে ৫/৬জন করে লোক দেয়া হয়েছিলো। তবে সেই সব লোকজন নিজেদের আখের ঘোচাতে স্বজন দেখে ও সম্পর্ক রাখার জন্য বিত্তবানদের নামের তালিকা করে থাকলে তা সঠিক করেননি বলে এড়িয়ে যায়। যাদের বিশ্বাস করে তালিকা করতে দেয়া হয়েছে তারাই নিজেদের তালিকা করে নিলে বিষয়টি খুবই দু:খজনক বলে নিজেদের সাধু বলে জাহির করেন। এ বিষয়ে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ্’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি একটি মিটিং এ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে মেয়রের সূত্র জানায়, যারা এই কার্ড পাওয়া যোগ্য তাদের প্রয়োজন হলে বিত্তবানদের যাচাই করে বাদ দিয়ে নতুন করে তালিকা করবো, ইনশাআল্লাহ। আর যারা এই অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে আমির কুটির বাসিন্দা জব্বার, শামীম বলেন, আমি ভাতের হোটেলে কাজ করি। লকডাউনের কারণে সব বন্ধ থাকায় একবেলা খেতে পারছি না, তার পরও আমাকে একটি কার্ড দেয়নি সভাপতি। সভাপতি তাদের লোকজন দেখে কার্ড দিয়েছে। আমার পরিবারে ৪জন সদস্য একমুঠো ভাত খেতে খুব কষ্ট হয়। এ বিষয় ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত হোসেন খান লাভলু মুঠোফোনে জানায়, বিশেষ ওএসএম কার্ড তালিকা করতে ওয়ার্ডে প্রতিটি ইউনিটিতে ৫/৬ জন করে লোক দেয়া হয়েছিলো সেই কমিটিতে তাকে রাখা হয়নি। যে কারণে এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি নন।
Post Views:
১৬০
|
|