|
এসব বিষয় জানেন হাসপাতালের প্রশাসনিক দপ্তর, কিন্তু প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, নেই মনিটরিংও
বরিশাল শেবাচিমে জরুরি বিভাগে চলে মোটরসাইকেল, আইসিইউতে বিক্রি হয় চা-বাদাম
সৈয়দ মেহেদী হাসান, অতিথি প্রতিবেদক : বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে মোটরসাইকেল চলাচল আর হকারদের উৎপাতে অতিষ্ঠ রোগী ও স্বজনরা। রোগী বহনের ট্রলি যাতায়াতের রাস্তা কিংবা বর্হিবিভাগের বারান্দা সব জায়গা থেকেই চলাচল করে মোটরসাইকেল। এমনকি মোটরসাইকেল ওঠানামা করার সময় রোগীবাহী ট্রলিকেও অপেক্ষা করতে হয়। শিশু ওয়ার্ড, পোস্ট করোনারি কেয়ার ইউনিট, করোনারি কেয়ার ইউনিট, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের মতো স্পর্শকাতর ওয়ার্ডে হকারদের পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। হাসপাতালের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকলেও সুফল পাচ্ছেন না সেবাপ্রত্যাশীরা। এসব বিষয় জানেন হাসপাতালের প্রশাসনিক দপ্তর, কিন্তু প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। নেই মনিটরিংও। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ চিকিৎসাকেন্দ্রে এসে হতাশ হন রোগীরা। কথা হয় গাইনি ওয়ার্ডের রোগী মানছুরা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, চার দিন ধরে চিকিৎসাধীন আছি। কমপক্ষে ২০ জন হকার এসেছেন তাদের পণ্য সামগ্রী বিক্রি করতে। এই ওয়ার্ডে রোগীর স্বজন ছাড়া বহিরাগতদের প্রবেশে কড়াকড়ি করা উচিত। কিন্তু বহিরাগত ঠেকানোর কোনো ব্যবস্থা তো নেই, পাশাপাশি হকার, মুচি, চা-বাদাম বিক্রেতা ঘুরে ঘুরে পণ্য বিক্রি করছে।
প্রসূতি ওয়ার্ডের আরেক রোগীর স্বজন জাহিদুল ইসলাম বলেন, সিজারিয়ানের পর রোগীদের ওয়ার্ডে বা ওয়ার্ডের বারান্দায় রাখা হয়। রোগীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই এখানে। সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার রাতে এক চোর আমার বিছানা থেকে মোবাইল নিয়ে যান। তাকে ধরে মোবাইল উদ্ধার করেছি। আমার কথা হলো, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে যদি মালামাল হারানোর দুশ্চিন্তায় থাকি তাহলে হাসপাতাল প্রশাসন কী করেন? আইসিইউতে ভর্তি এক রোগীর স্বজন আব্দুল ওহাব। তিনি জানান, আইসিইউ হচ্ছে জীবনের শেষ স্টেজ। এখানে রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার কথা। কিন্তু শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তিন দিন থেকে দেখলাম, রোগীদের প্রতি ন্যূনতম খেয়াল নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। পপকর্ন, ঘড়ি-আয়না-চিরুনি বিক্রেতা, চাওয়ালা হরহামেশাই আইসিইউয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ছে। শুধু আইসসিইউ নয়, পিসিসিইউ, সিসিইউতেও একই অবস্থা। হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত বাজে, তার ওপরে হকারদেরও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
বর্হিবিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, রোগী আনা-নেওয়ার পথে, সিঁড়ির নিচে শতাধিক মোটরসাইকেল রাখা আছে। অনেকেই মোটরসাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করেন জরুরি বিভাগ থেকেও। বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রাহেলা খাতুন বলেন, হাসপাতালের মধ্যে মোটরসাইকলে যেভাবে যাতায়াত করে তা রাস্তায় চলে কি না জানি না। হর্ন দিয়ে দিনে হাসপাতালের মধ্যেই প্রবেশ করে এসব মোটরসাইকেল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বপালনকারী দুজন আনসার সদস্য বলেন, যেসব মোটরসাইকেল হাসপাতালের মধ্যে চলাচল করতে দেখছেন তার অধিকাংশই এই হাসপাতালের স্থায়ী বা অস্থায়ী পদে কর্মরত কর্মকর্তাদের। তাদের বাধা দিলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন, লাঞ্ছিত করেন। এজন্য বিষয়টি বিধিবর্হিভূত হলেও কিছু বলতে পারি না। হকারের প্রবেশ প্রশ্নে বলেন, আগে থেকেই হকার হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে মালামাল বিক্রি করে। আমরা কয়েকদিন ওদের ঢুকতে বাধা দিয়েছিলাম। পরে হাসপাতালের কতিপয় কর্মকর্তা বাধা না দেওয়ার জন্য বলেছেন।
তবে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি যোগদানের পর হাসপাতালের মধ্যে মোটরসাইকেল চলাচল এবং হকারদের উৎপাত কিছুটা কমেছে। আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করবেন উল্লেখ করে বলেন, এত বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য জনবল নেই। বর্তমানে ৩১ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। আমি ১০০ জনের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। চাহিদা মোতাবেক আনসার সদস্য পেলে মোটরসাইকেল চলাচল এবং হকার প্রবেশ বন্ধ করা যাবে। তিনি আরও বলেন, যারা মোটরসাইকেল ভেতরে রাখেন তারা হাসপাতালের স্টাফ। বহিরাগতও আছেন কেউ কেউ। তারা গেটে দায়িত্বপালনকারী আনসার সদস্যদের ম্যানেজ বা চাপ প্রয়োগ করে এই কাজ করছে। অথচ মোটরসাইকেল রাখার জন্য নির্ধারিত গ্যারেজ করা আছে। সেখানে টাকা দিতে হবে এই ভয়ে মোটরসাইকেল রাখেন না। প্রসঙ্গত, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও দীর্ঘ দিন ধরেই জনবলের মারাত্মক সংকট রয়েছে।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট
Post Views:
২২১
|
|