|
তাঁর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীকে গ্রেফতার, পুলিশের ধারণা, অর্থ আত্মসাৎ করার জন্যই সালেহকে খুন করা হয়েছে
টাকার জন্যই খুন হন বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ হত্যার ঘটনায় তাঁর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীকে গ্রেফতার করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম-টাইরেস ডেভন হাসপিল, বয়স ২১ বছর। শুক্রবার (১৭ জুলাই) নিউইয়র্কের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পুলিশের ধারণা, বাংলাদেশের এ তরুণ উদ্যোক্তাকে হত্যার পেছনে ডেভনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং অর্থ আত্মসাৎ করার জন্যই সালেহকে খুন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে গোয়েন্দাদের বরাতে উল্লেখ করা হয়, হাসপিল সালেহের ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন। সালেহ-এর তাঁর কাছ থেকে কয়েক হাজার ডলার আত্মসাৎ করার পরে তাঁকে হত্যা করে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সালেহ একটা সময় জানতে পারেন, হাসপিল তার কাছে থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলেও হাসপিলকে সেটা ফেরত দিতে বলেন সালেহ। এরপরই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) নিউইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকার নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহর ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এখনও হত্যার রহস্য জানা যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ। স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, নজরদারি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে ফাহিমকে সর্বশেষ অ্যাপার্টমেন্টের লিফটে উঠতে দেখা গেছে। ওই লিফটে তাঁর সঙ্গে সম্পূর্ণ কালো পোশাক পরা একজনকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। লিফটটি সোজা তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট ইউনিটে গিয়ে থেমেছে। ওই ব্যক্তিকেই সম্ভাব্য খুনি হিসেবে ধারণা করছে পুলিশ। তারা বলছে, ‘অপরাধীর কাছে একটা স্যুটকেস ছিল। সে ছিল খুবই পেশাদার’। ওই ব্যক্তির পরনে ছিল স্যুট, হাতে গ্লাভস ও মাথায় হ্যাট। নিউইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তা সার্জেন্ট কার্লোস নিভস জানান, ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকেই ফাহিমের খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ‘ঘটনাস্থলে আমরা খণ্ড দেহ, বিচ্ছিন্ন করা মাথা ও হাত-পা পেয়েছি’, বলেন তিনি। পুলিশকে উদ্ধৃত করে ডেইলি নিউজ জানিয়েছে, ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন ফাহিম। দীর্ঘ সময় ভাইয়ের কোনও খোঁজ পাননি বলে মঙ্গলবার ৯১১ নম্বরে ফোন করেন তাঁর বোন।

এরপর পুলিশ এসে অ্যাপার্টমেন্টের ৭ম তলা থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহের পাশেই একটি ইলেকট্রিক করাত মেশিনের সন্ধান পায় পুলিশ। খণ্ডবিচ্ছিন্ন অঙ্গগুলো পাওয়া যায় পাশেই রাখা একটি প্লাস্টিক ব্যাগে। ফাহিম সালেহর জন্ম ১৯৮৬ সালে। তাঁর বাবা সালেহ উদ্দিন চট্টগ্রামের, আর মা নোয়াখালীর মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম পড়াশোনা করতেন ফাহিম। ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় ফিরে যৌথভাবে ‘পাঠাও অ্যাপ’ চালু করে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। নিহত ফাহিম সালেহ বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও ছাড়াও নাইজেরিয়ায় ‘গোকান্ডা’ নামে আরেকটি রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। পেশায় ওয়েবসাইট ডেভেলপার ফাহিম অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্লোবাল নামক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানেরও উদ্যোক্তা ছিলেন। ফাহিমের পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে যে অপরাধের কথা উঠে আসছে তা আমরা এখনও মেনে নিতে পারছি না। হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা ছাড়া কোনও কথা বা পদক্ষেপ আমাদের মনকে শান্ত করতে পারবে না’। এতে আরও বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে আমাদের আহ্বান তারা এই নৃশংস অপরাধের সবকিছু উন্মোচন করবেন এবং ফাহিমের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। ফাহিমের হত্যাকাণ্ডকে তাঁর পরিবার অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে নৃশংসভাবে খুন হওয়া ফাহিম সালেহ নিজের সম্পর্কে ওয়েবসাইটে লিখেছিলেন অন্ট্রেপ্রেনিওর, ইনভেস্টর, ড্রিমার অর্থাৎ উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, স্বপ্নবাজ। ঢাকায় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মী হুসেইন এম ইলিয়াস বলছিলেন যে সত্যিকার অর্থেই একজন স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন ফাহিম সালেহ। ‘পাঠাও’ নামের যে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়, তার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন ফাহিম সালেহ। আরেকজন হলেন হুসেইন এম ইলিয়াস। “খুব কম মানুষই এতো তাড়াতাড়ি কিংবা এতো অল্প বয়সে সফল হয়েছিলেন। এর কারণ হলো খুবই উদ্যমী ও পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন তিনি,” বিবিসি বাংলাকে বলেন হুসেইন ইলিয়াস। “এক জায়গায় আটকে থাকতেন না তিনি। এজন্যই একটার পর একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। কোনটায় সফল হয়েছেন, আবার কোনটায় হননি। কিন্তু হাল ছাড়েননি।” ফাহিম সালেহ বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সন্তান হলেও বাংলাদেশে খুব একটা থাকেননি। ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাত্র ৩৩-বছর বয়সে যে অ্যাপার্টমেন্টে খুন হন তিনি, তার দাম বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২২ কোটি টাকা। নিজের কেনা অ্যাপার্টমেন্টে খুন হওয়া ফাহিম সালেহ বড় হয়েছেন নিউইয়র্কেই এবং পেশায় ছিলেন ওয়েবসাইট ডেভেলপার। সেখানকার গণমাধ্যম তাঁকে চিহ্নিত করেছে “টেক মিলিওনিয়ার” হিসেবে। “খুব অল্প বয়সেই কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। ১৫/১৬ বছর থেকে আমেরিকাতেই কাজ শুরু করেন – আইটি ফিল্ডেই। ফলে ২০১৪ সালে যখন ঢাকায় আসেন, তার আগেই প্রযুক্তির বিশ্বে তিনি পরিচিত ব্যক্তি এবং সেটা তাঁর কাজের জন্যই,” বলছিলেন মিস্টার ইলিয়াস।
Post Views: ০
|
|