মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই পুরো ফুটবল বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে
কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে কিংবদন্তি ফুটবলার ম্যারাডোনা
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : মাত্র কয়েকদিন আগেই রক্তক্ষরণ জনিত কারণে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর ডাক্তাররা তাকে পূনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই আজ হার্ট অ্যাটাক করলেন আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তি। যেখান থেকে আর ফিরলেন না তিনি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। বিশ্বে কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন এই ফুটবল মহানায়ক।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। ম্যারাডোনার আইনজীবী ম্যাথিয়াস মারলাহোস এই তথ্য নিশ্চিত করেন। স্থানীয় সময় বিকেলে (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে) এই খবর ব্রেক করে আর্জেন্টাইন গণমাথ্যম ক্লারিন। এরপরই ছড়িয়ে পড়ে আর্জেন্টিনার মিডিয়াগুলোতে। এরপর সারাবিশ্বের মিডিয়ায়। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতিয়েছিলেন ম্যারাডোনা।

১৯৯০ বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। সেবার জার্মানির কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করতে হয় তাঁকে। এছাড়া ইউরোপিয়ান ফুটবল ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির অবিসংবাদিত কিংবদন্তি ছিলেন তিনি। দুই সপ্তাহ আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হলেও, ডাক্তাররা বলেছিলেন আশাতীত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। যদিও মাদকাসক্তির কারণে তাঁকে বাড়িতে নয়, পাঠানো হয়েছিল বুয়েন্স আয়ার্সের একটি পূনর্বাসন কেন্দ্রে। এরপর তাঁকে নেয়া হয় নিজের বাড়ি তিগ্রেতে। সেখানেই আজ হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই কিংবদন্তি। আর্জেন্টাইন ক্লাব বোকা জুনিয়র্স থেকে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ম্যারাডোনা।

এরপর ইতালিয়ান ক্লাব ন্যাপোলি ছিল তার সোনালি যুগের ক্লাব। খেলেছেন বার্সেলোনার জার্সিতেও। কিন্তু ১৯৮৬ বিশ্বকাপে একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর পর থেকেই ফুটবল বিশ্বে অবিসংবাধিত কিংবদন্তিতে পরিণত হন তিনি। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে দুটি গোল করেছিলেন, সে দুটিই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে। প্রথমটি করেছিলেন হাত দিয়ে। যে কারণে এটাকে বলা হয় ‘দ্য হ্যান্ড অব গড’। অন্যটি করেছিলেন মাঝ মাঠ থেকে এককভাবে টেনে নিয়ে গিয়ে। সেই গোলটারই নাম হয়ে যায় ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। মাদকাসক্তির কারণে বারবার শিরোনামে আসেন ম্যারাডোনা। তবে সর্বশেষ মস্তিষ্কে জমাট বাধা রক্ত অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর গত ১১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে রিলিজ দেয়ার পর তিনি ওলিভোস ক্লিনিক থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় শত শত ভক্ত সমর্থক এবং ফটোগ্রাফার চেষ্টা করেছিলেন তার একটি ছবি তোলার জন্য। কিন্তু সঠিকভাবে কেউই ছবি তুলতে পারেনি কিংবা ভিডিও’ও করা যায়নি।

ম্যারাডোনার আইনজীবী ম্যাথিয়াস মারলাহোস ওই সময় জানিয়েছিলেন, মাদকাসক্তি থেকে ফেরাতে তাঁকে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। তিগ্রের একটি নিরাময় কেন্দ্রে কয়েকদিন থাকার পর নিজের বাসায় নেয়া হয়। যেখানে তাঁর বড় মেয়ে থাকতেন। আজ বিকেলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। কিন্তু কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই পুরো ফুটবল বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। অগণিত ভক্ত-সমর্থক সোশ্যাল মিডিয়ায় ম্যারানডোনার ছবি দিয়ে শোক প্রকাশ করতে শুরু করেন।
কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে আর্জেন্টিনা। যেটা বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে। বিকেলে এমনটাই ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। এক বার্তায় তিনি জানান, ‘আপনি আমাদের বিশ্বের মধ্যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের আনন্দের বন্যায় ভাসিয়েছিলেন। আপনি সর্বকালের সেরা ছিলেন। আপনার আগমনের জন্য ধন্যবাদ, দিয়েগো। আমরা সারাজীবন আপনাকে স্মরণ করবো। আজকের দিনটি সকল আর্জেন্টাইনের জন্য খারাপ একটি দিন। শোকের দিন। আমার সন্দেহ হয় ম্যারাডোনার মতো খেলোয়াড় আমরা হয়তো আর দেখবো না।’ এদিকে ম্যারাডোনার মৃত্যুকে শোক প্রকাশ করেছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা।

ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়াগো ম্যারাদোনার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন এবং যুগে যুগে তাঁর ক্রীড়া নৈপুণ্য ভবিষ্যত ফুটবল খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী এই ফুটবল মহানায়কের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
তাঁর এই মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে – বরিশাল মুক্তখবর পরিবার।
Post Views: ০
|