|
তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা-ওসি, কোতোয়ালি মডেল থানা
বরিশালে ব্ল্যাকমেইল করতে গিয়ে দুই ভুয়া সাংবাদিক আটক
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশালে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতে গিয়ে দুই ভুয়া সাংবাদিক জনতার হাতে ধরা খেয়েছে। পরে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (ডিসেম্বর ৯) আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। আটককৃতরা হলেন-নগরীর ভাটার খাল এলাকার হাকিম আলীর ছেলে মো: মামুন রেদোয়ান ও পলাশপুর এলাকার সালাম মোল্লার ছেলে জাহাঙ্গীর মোল্লা। অভিযোগ রয়েছে, তাদের নেতৃত্বে ১৫–২০ জনের একটি চক্র সাংবাদিক পরিচয়ে শহরের বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ আদায় করে আসছিল। সম্প্রতি এদের কাছে ব্লাকমেইলের শিকার হন হাসপাতাল রোডের খন্দকার ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী মো: লিয়াকত আলী খন্দকার। বেশ কিছুদিন আগে স্ব-রোডে বসবাসকারী একজন বিএনপি নেত্রীর সাথে সুসম্পর্কের সুবাদে তার বাসায় যাওয়া আসা করতো আরেক কথিত (ট্যারা) সাংবাদিক। কিছুদিন পর একটি ফেক আইডি থেকে তাকে ব্লাকমেই করার চেষ্টা করে সে। প্রথমে বিশ হাজার ও পরে আরো বেশি টাকা দাবি করে সেই চক্র। এক পর্যায়ে ফেক আইডির পরিচয় পাওয়া গেলে নিজে বাদি হয়ে ঐ কথিত সাংবাদিক চক্রের নামে মামলা দেন বিএনপি নেত্রী। তখন বরিশালে বেশ তোলপাড় হলেও এক আওয়ামীলীগ নেতার হস্তক্ষেপে তখন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে এই চক্র আরো ডালপালা মেলেছে।

তারই ধারাবাহিকতায় আবারো ব্ল্যাকমেই চক্রের আরো দুই সদস্য আটক হলো। খন্দকার ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী মো: লিয়াকত আলী খন্দকার জানান, চলতি মাসের ৬ ডিসেম্বর মামুন রেদোয়ান সাংবাদিক পরিচয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন এবং দাবি করেন যে কাশিপুর এলাকায় এক নারীর সঙ্গে তার ‘গোপন ভিডিও’ রয়েছে। ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে এক লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। লিয়াকত আলী এ অভিযোগ অস্বীকার করে মামুন রেদোয়ানকে দোকানে এসে প্রমাণ দেখাতে বলেন। ৭ ডিসেম্বর সে দোকানে এলেও কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে ব্যর্থ হয়। এরপরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরদিন আবার ফোনে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী ও প্রকৃত সাংবাদিকদের জানানো হলে তারা ৯ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় দোকানে অবস্থান নেন। নির্ধারিত সময়ে মামুন রেদোয়ান ও জাহাঙ্গীর মোল্লা এলে স্থানীয় জনতা দু’জনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে দু’জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত হাওয়া বেগম নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, চলতি মাসের ৪ ডিসেম্বর মামুন রেদোয়ান তাকে ও তার মেয়েকে খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে দুই লক্ষ টাকার সোনার গয়না নিয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমার সর্বস্ব লুটে নিয়েছে তারা। আরও অনেক মানুষ প্রতারিত হয়েছে—আমরা বিচার চাই।” মো: লিয়াকত আলী বলেন, “আমি বয়স্ক মানুষ, দোকান চালিয়ে সংসার চালাই । আমার সঙ্গে যে প্রতারণা হয়েছে তার কঠোর বিচার চাই। তাই আমি ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছি। আশাকরি, সঠিক বিচার পাবো।’ অপসাংবাদিকতা দমনে বরিশালের ১৫টি সাংবাদিক সংগঠনের সমন্বিত জোটের মুখপাত্র মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন,“বরিশালে একটি চক্র সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে অপরাধ করছে। এতে প্রকৃত সাংবাদিকতার সুনামহানি হচ্ছে। আগেও দুজন ভুয়া সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে—আজও দু’জন ধরা পড়েছে। রিমান্ডে নিলে পুরো চক্রের তথ্য বেরিয়ে আসবে।” পেশাদার সাংবাদিকদের ৩৫ সংগঠনের প্রধান সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী বলেন, “সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম চলতে দেওয়া হবে না। সবার সহযোগিতায় এই চক্রকে নির্মূল করা হবে।” বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আল মামুন–উল–ইসলাম বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Post Views: ০
|
|