|
থানা পুলিশের ব্যর্থতা ও প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম এখনও আড়ালেই রয়ে গেছে
বরিশালে পুলিশের সামনেই খুন হয় স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা লিটু
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশাল বিমান বন্দর থানা পুলিশ তদন্তের নামে ডেকে নিয়ে তাদের সামনে দায়েরকৃত মামলার আসামিরা সহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো: লিটন শিকদার ওরফে লিটু (৩২) কে প্রকাশ্যে হত্যার পাশাপাশি বসতঘর ভাঙচুর সহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে।

লিটুকে বাঁচাতে গিয়ে তার ভাই-বোন ও মা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়েছে। বর্তমানে কিছু সংখ্যক আসামি জামিনে এসে মামলার বাদি সহ নিহত লিটুর পরিবারের সদস্যদের খুন ও গুমের হুমকি দেয়ায় নিরাপত্তার অভাবে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বসবাস করছে। এমন অভিযোগ এনে মঙ্গলবার (অক্টোবর ৭) সকাল সাড়ে ১১ টায় বরিশাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহত লিটুর বোন ও দায়েরকৃত মামলার বাদি মুন্নি আক্তার (৩৫)। সংবাদ সম্মেলনে মুন্নির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার ভাই সুমন সিকদার। তিনি বলেন, চলতি বছরের ৩১ জুলাই কাশিপুর ইউনিয়নের পূর্ব বিল্ববাড়ি এলাকায় পুলিশের কাছ থেকে লিটুকে ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে হত্যার পাশাপাশি বসতঘর ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করে প্রতিপক্ষ। পরদিন অর্থাৎ ১ আগস্ট বরিশাল বিমান বন্দর থানায় নামধারী ৬১ জন ও অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ জনকে আসামি করে আমি একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ওই দিনই আমাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হামলায় আমার এক পা, ভাইয়ের এক হাত এবং মায়ের হাতের তিনটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে গেছি। তবে আগের তুলনায় আমি কিছুটা সুস্থ হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছি। সংবাদ সম্মেলন করার মূল উদ্দেশ্য-আমি চাই পুরো ঘটনা সিআইডি কর্তৃক সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ন্যায্য বিচার এবং সাংবাদিক ভাইয়েরা সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে সংবাদ প্রকাশ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। কেননা থানা পুলিশের ব্যর্থতা ও প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম এখনও আড়ালেই রয়ে গেছে। থানা পুলিশ আগেও আসামিদের পক্ষ হয়ে কাজ করেছে এখনও কূট কৌশলে আসামিদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত লিটু হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার করছেন অন্য দপ্তরের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যেখানে বিমান বন্দর থানা পুলিশের সরাসরি কোন ভূমিকা নেই। হত্যা মামলা দায়ের হবার প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত সকল আসামিরা এলাকার নিজ বসতঘরে থাকলেও থানা পুলিশ তখন তাদের ধরেনি। ৬ আগস্ট মামলার ৫ নং আসামি মো: রিয়াজ মাহমুদ খান মিল্টন (৪০) গ্রেফতার হবার পরই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালাতে শুরু করে আসামিরা। এই মিল্টন আমার ভাইয়ের ডান হাত কেটে ফেলার পর পরবর্তীতে অন্যান্য আসামিরা লিটুকে পিটিয়ে কুপিয়ে জখম করে। আর আমার স্বামী ও দেবরের পক্ষ হয়ে মিল্টন তার লোকজন নিয়ে প্রকাশ্যে এ হত্যার পাশাপাশি ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে মো: রিয়াজ খান মিল্টনকে বহিষ্কার করা হয়। লিটু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ গত ৩০/০৭/২০২৫ তারিখে দুই পক্ষ অর্থাৎ আমি এবং আমার স্বামী মো: জাকির হোসেন গাজী বিমান বন্দর থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করি। আমার দায়েরকৃত মামলায় জাকির হোসেন গাজী সহ নামধারী ১৭ এবং অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়। অপরদিকে জাকির হোসেন গাজী আমাকে সহ আমার ৪ ভাই বোনকে নামধারী এবং আরাে ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্র পাত্রের কারণ ছিল- আমার অনুমতি ছাড়া স্বামী জাকির গাজী বিয়ে করেন। এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছেন। যা নিয়ে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। পরদিন অর্থাৎ গত ৩১/০৭/২০২৫ তারিখ জাকির হোসেন গাজীর দায়েরকৃত মামলা থেকে আমি সহ আমার ৪ ভাই-বোন আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনে বের হবার পর আমার দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিমান বন্দর থানার এসআই শহিদুল ইসলাম কল দিয়ে আমাকে বলেন, আপনার মামলার আসামি ধরবো। আপনি বাড়িতে আসন এবং আসামিদের বাড়ি দেখিয়ে দেন। আমি বাড়ি যাবার পর দেখতে পাই প্রতিপক্ষরা আমার বসতঘরের চারপাশ ঘিরে রেখেছে। আর আসামিরা সকলেই পুলিশের সামনে ঘুরছে। আমার ভাই লিটু আমাদের সাথেই বাড়িতে ঢুকেছিল। পুলিশের সামনে আমার দায়েরকৃত মামলার আসামিরা সহ প্রায় শতাধিক লোকজন বসতঘর ভাঙচুর শুরু করলে তখন পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। এ সময় বসতঘরের গ্রিল ও দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে লুকিয়ে থাকা লিটুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে জাকির হোসেন গাজী ও তার ভাই মিলন গাজী সহ রিয়াজ হোসেন মিল্টন, নয়ন গাজী বিন্তু, রাসেল কাউসার, আনিস, মিরাজ, রাজিব, রাসেল, মুন্না, সুমন, কামাল ও রায়হান সহ অজ্ঞাত প্রায় অর্ধশত। অজ্ঞাতদের আমি দেখলে চিনবো। কুপিয়ে জখম করার খবর পেয়ে ‘চলে যাওয়া পুলিশ’ আবার ঘটনাস্থলে আসে এবং পুলিশ আহত রক্তাক্ত লিটুকে উদ্ধার করে ঘর থেকে বাহিরে বের করে। উপস্থিত লোকজন পুলিশকে তখন বার বার বলেছিল-ভাই লিটুকে এখান (ঘটনাস্থল) থেকে নিয়ে যান, নয়তো কোন অঘটন ঘটবে। যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ পর এসআই শহিদুল ইসলামের হাত থেকে লিটুকে ছিনিয়ে নিয়ে আমার দেবর মিলন গাজী পানিতে ঝাপ দেয়। এরপর হামলাকারীরা লিটুকে পিটিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলে এবং আমি সহ আমার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে আহত করে হামলাকারীরা। এ ঘটনার আগে আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে দেখে ৯৯৯ এ কল দেই এবং বিমান বন্দর থানার সাবেক ওসি মো: জাকির হোসেনকে বার বার ঘটনাস্থলের পরিস্থিতির বিষয়ে মোবাইল ফোনে প্রায় ১০/১২ বার অবগত করেছি। প্রতিবারই সাবেক ওসি জাকির শুধু বলেছিলেন-আসতেছি আসতেছি। অপরদিকে এ হত্যার সময় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আসামি ধরা ছাড়া নিয়ে বাণিজ্য শুরু করে বিমানবন্দর থানার সাবেক ওসি মো. জাকির হোসেন ও দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. রিয়াজুল ইসলাম। বিষয়টি সম্পর্কে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে মৌখিকভাবে অবগত করেছে এক ভুক্তভোগী। যা আমি স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ পড়ে এমন তথ্য পেয়েছি। আমার জানা মতে, লিটু হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত র্যাব ও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে জাকির গাজী, মিলন গাজী, মিল্টন, জলিল, কামাল, রাজু, রাতুল, সুমন, মিরাজ, সোহাগ ও ইয়াসমিন সহ প্রায় এক ডজন মামলার আসামি। এরমধ্যে কয়েক আসামি জামিনে বেড়িয়েছে। আবার কিছুসংখ্যক আসামি হাইকোর্ট থেকে অগ্রিম জামিন নিয়েছে। বিমান বন্দর থানা পুলিশ যদি তাদের নৈতিক দায়িত্ব ঘটনার দিন পালন করতো তাহলে প্রকাশ্যে হত্যার পাশাপাশি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতো না। আর যারা সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছিল তাদের মধ্য “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে” আমার দায়েরকৃত মামলার আসামিরা ছিল। অথচ পুলিশ ঘটনাস্থলে দর্শকের ন্যায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেছিল। প্রয়োজনে পুলিশ ঘটনাস্থলে আরো পুলিশ আনতে পারতো এবং অন্য দপ্তরের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা চাইতে পারতো। থানা পুলিশ আগেও আসামিদের পক্ষ হয়ে কাজ করেছে এখনও কূট কৌশলে আসামিদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস। ঘটনার শুরুতে থানা পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম এবং হত্যা মামলা দায়েরের পর আসামি ধরা ছাড়া নিয়ে বাণিজ্য শুরু করে সেই তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সুষ্ঠু তদন্ত আশা করা যায় না। উল্লেখ্য, কাশিপুর বিল্ববাড়ি এলাকার নজির শিকদারের মেয়ে মুন্নি ও নিহত লিটু। প্রায় দেড় যুগ পূর্বে এই এলাকায় এসে বসবাস শুরু করে। মূলত: তারা ভোলা জেলার বাসিন্দা। জাকির ও মিল্টন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় এলাকায় তাদের সবই আত্মীয়-স্বজন।
Post Views: ০
|
|