বাংলা নামের নকশী কাঁথায় – লুৎফর রহমান রিটন
বাংলা নামের নকশী কাঁথায়
– লুৎফর রহমান রিটন
[প্রীতিভাজন চঞ্চল চৌধুরী এবং ওর মায়ের প্রতি ভালোবাসা।]
তোমার আছে দুর্গাপূজা আমার আছে ঈদ
তোমার যদি মন্দির তো আমারটা মসজিদ।
তোমার আছে দেব দেবী আর তোমার ভগবান
আমার আছে নবী-রাসূল আল্লা মেহেরবান।
দেখতে তুমি আমার মতোই তোমার মতোই আমি
তবুও কেনো পরস্পরে যুদ্ধে আমরা নামি!?
তফাতটা পাই নামের মধ্যে পদ-পদবীর বেশে–
চট্টোপাধ্যায় গঙ্গোপাধ্যায় তোমার নামের শেষে।
আমরা বসাই খান-আলী-শেখ কিংবা মোহাম্মদ।
একই রকম তোমার আমার কৃষ্টি-পরিষদ।
খানাখাদ্যের মিল রয়েছে মিল রয়েছে গানে
তাকাই আমরা চন্দ্র-তারার একই আকাশ পানে।
তোমার আমার একই সূর্য একই আঁধার-আলো
তবুও কারা হানাহানির বিষের কৌটা ঢালো?
আমার রক্ত লাল টুকটুক তোমারটা কি নীল?
সেখানটাতেও তোমার আমার কী অপরূপ মিল!!
তারপরেও সাম্প্রদায়িক আঁধার কেনো নামে!?
তোমার আমার পার্থক্য? সেইটা শুধুই নামে…
তোমার মায়ের কপালে টিপ সিঁথির সিঁদুর লাল
আমার মা আর তোমার মা-তো বন্ধু চিরকাল।
তুমিও আমার বন্ধু স্বজন আমিও তোমার ভাই
খেয়াল করো তোমার আমার কোনোই তফাৎ নাই!
একই রকম আমরা দু’জন বাংলা মায়ের ছেলে
অবিনাশী সম্প্রীতির এই প্রদীপ রাখি জ্বেলে।
একই রকম আমরা দু’জন বাংলা মায়ের মেয়ে
অন্ধকারে আলো ছড়াই বাংলার গান গেয়ে।
পাশাপাশি বাস করছি ‘মানুষ’ পরিচয়ে
গুটিকতক সাম্প্রদায়িক কুলাঙ্গারের ভয়ে–
সেই পরিচয় যাই না ভুলে। ভুলবো না ভুলবো না–
বাংলা নামের নকশী কাঁথায় ‘সম্প্রীতি ফুল’ বোনা…
জড়িয়ে আছি জন্মাবধি আমরা ওতপ্রোত
এই দেশটা আমার যেমন তেমনি তোমারও তো!
লাল সবুজের এই পতাকায় রক্ত আছে মাখা
পতাকার ঐ লাল সূর্য যৌথ রক্তে আঁকা।
আমরা বলি ভাইয়া আপু তোমরা দাদা দিদি
তিরিশ লক্ষ শহিদ, সেথায় যৌথ প্রতিনিধি।
আমরা বলি ফুপু খালা তোমরা পিসি মাসী
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’…
অটোয়া ১০ মে ২০২১
Post Views: ০
|