|
শহীদ মিনারে ছাত্রী ও শিক্ষকরা প্রতি বছর ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিল
ঝালকাঠিতে স্কুলের শহীদ মিনার ভাঙচুর মামলায় যুবলীগ নেত্রী গ্রেপ্তার
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : ঝালকাঠির সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভাঙচুর মামলায় স্থানীয় যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফতেমা শরীফকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার (২১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সিটিপার্ক নতুন চরের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হযরত আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ। আদালতের নির্দেশে বুধবার সকালে ঝালকাঠি থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। ঝালকাঠি থানার ওসি মো: খলিলুর রহমান জানান, সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীতা মন্ডল বাদি হয়ে গত রোববার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক শারমীন মৌসুমি কেকা ও শহর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু, ফতেমা শরীফসহ ১৭ জনের নামে দ্রুত বিচার আইনে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন (সিআর মামলা নং : ২৬৪/২০)। বিচারক এ এইচ এম ইমরানুর রহমান থানার ওসি হিসেবে আমাকে বাদির অভিযোগ এফআইআর রেকর্ডের নির্দেশ দেন। বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় আদালতের আদেশ হাতে পেয়ে দ্রুত বিচার আইনের সংশ্লিস্ট ধারায় মামলা রেকর্ড করি। ঝালকাঠি থানার মামলা নং ১৩ তারিখ ২১-১০-২০২০। মামলা দায়েরের পরপরই তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হযরত আলী এজাহার ভুক্ত ৩নং আসামী ফতেমা শরীফকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, তিনজনের নাম উল্লেখ থাকলেও ১৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে মামলায়। মামলায় প্রধান শিক্ষক রীতা মন্ডল অভিযোগ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উত্তরপূর্ব কর্নারে রাস্ট্রীয় মর্যাদার প্রতীক ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরনে পাঁচলাখ টাকা ব্যায়ে একটি শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছিল। শহীদ মিনারে ছাত্রী ও শিক্ষকরা প্রতি বছর ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিল। কিন্তু স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও শিক্ষকদের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ভাল চোখে দেখছিল না স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত ইসলামী চক্রের দোসর পরিবারের সদস্যরা। গত ১৪ আগস্ট বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ থেকে বাদ পড়া শারমীন মৌসুমি কেকা, আনিসুর রহমান তাপু ও ফতেমা শরীফের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা আরও ১২/১৪ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির ব্যাক্তি শাবল, খোন্তা, কোদাল, হামার, বড় হাতুরী, রড, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ হৈ হুল্লর ও ডাক-চিৎকার, ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করতে করতে সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাচীর ঘেরা খেলার মাঠের গেটের তালা ভেঙ্গে অবৈধভাবে স্কুলের কম্পাউন্ডে প্রবেশ শহীদ মিনার ভেঙ্গে মাটির সাথে গুড়িয়ে দেয়। স্থানীয় কিছু লোকজন ও কয়েকজন অভিভাবক শহীদ মিনার ভাঙ্গার কারণ জানতে চাইলে ও বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ১ ও ২ নং আসামী পিস্তল ও ৩নং আসামী দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে সকলকে সরে যেতে বাধ্য করে। রীতা মন্ডলের আইনজীবী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, শহীদ মিনার একটি গুরত্বপূর্ন স্থাবর সম্পত্তি। আসামীরা আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীকার আন্দোলনের প্রতীক শহীদ মিনার ভাংচুর করিয়া মারাত্মক অপরাধ সংগঠন করিয়াছে যাহা দ্রুত বিচার আইনে বিচারযোগ্য। এসআই হযরত আলী বলেন, আসামী ফতেমা শরীফকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রয়োজনে রিমান্ড আবেদন করা হবে। উল্লেখ্য ঝালকাঠি নতুন চর এলাকার ইলেক্ট্রিশিয়ান মোঃ নাছির উদ্দিনের স্ত্রী ফতেমা শরীফ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমীন মৌসুমি কেকার ক্যাডার হিসেবে নানা অপকর্ম করে আসছিল। বিতর্কিত নারী হিসেবে দলের বড় বড় নেতাদের অপমান অপদস্ত এবং হেনস্তা করতো।মানসম্মানের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পেত না। শারমীন মৌসুমি কেকার প্রভাব কাজে লাগিয়ে এক সময়ের হতদরীদ্র রিকসা চালকের মেয়ে বনে যান লাখলাখ টাকার মালিক। প্রায়ই সে উড়োজাহাজে পাড়ি জমাতেন ঢাকা কক্সবাজার। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় সরকার তথা ঝালকাঠি সদর আসনের সংসদ সদস্য সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে ফাতেমা শরীফ ও শারমীন মৌসুমি কেকা। গত ৩০ আগস্ট শহরের পূর্বচাদকাঠি এলাকার বোরহান উদ্দিন খানের দ্বিতীয় স্ত্রী পারভীন আক্তারকে শারীরিক নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে দেয় কেকা ও ফতেমা বাহিনী। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হলেও হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন লাভ করে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ফাতেমা। কিন্তু শহীদ মিনার ভাংচুরের মামলায় পুলিশের খাচাঁয় আটকা পড়েন ফতেমা।
Post Views: ০
|
|