Current Bangladesh Time
শনিবার নভেম্বর ২২, ২০২৫ ১২:১৪ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » অসচেতনতার ভয়াবহতা : আসুন সচেতন হই – মো: আবদুল হালিম 
Wednesday April 22, 2020 , 12:32 am
Print this E-mail this

অসচেতনতার ভয়াবহতা : আসুন সচেতন হই – মো: আবদুল হালিম


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : মকবুল মিয়া বয়স ৬০ ছুই ছুই। দুই ছেলে তিন মেয়ে আর ৫ নাতি নাতনির সংসার।ছেলে দুটোকে মাস্টার রোলে চাকুরী দিয়ে একরকম নিশ্চিন্তে দিন পার করছিল। ডিসি অফিসের চাকুরি থেকে অবসর নেবার পর এলাকার সালিশ বিচার করে তার দিন ভালোই চলে যাচ্ছে। জায়গা জমির হিসাবে সে খুব পাকা তাই গ্রামে তার সুনাম ও বেশ। বেশিরভাগ সময় সাহেবের হাট কালামের চা দোকানে তার দিন কেটে যায়। কিছুদিন যাবত মকবুল মিয়া শুনছে কি এক করোনা না ফরোনা আসছে। সরকার নাকি সবাইকে বাড়ীর ভিতরে থাকতে বলছে। কালাম দোকানির ক্লাস এইটে পড়ুয়া ছেলেও স্কুলে শুনে এসে তাকে বলেছে।

মকবুল মিয়া বাচ্চার কথা উড়িয়ে দেয় বলে ‘ব্যাটা চুপ কর আমাগো বয়স তো আর কম হইল না কত কিছু তো দুনিয়ায় দেখলাম-কলেরা, প্লেগ আমাগো কিছু করতে পারে নাই করোনা আর কি করবে। আর কই রইছে ইতালি, আমেরিকা, চীন এতদুর করোনা আইতে পারবো না।’

মকবুল মিয়ার চা চক্র চলতে থাকে কিছুই তাকে থামাতে পারে না। সে তো এলাকার সব চেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি টিভিতে সবসময় আপডেট খবর দেখে। হঠাৎ সে টিভিতে দেখল একদল ইতালি প্রবাসিকে পুলিশ এয়ারপোর্ট ১৪ দিন আলাদা রাখার জন্য আটকে দিল এই দৃশ্য দেখে সে আর সহ্য করতে না পেরে পুলিশকে যে কি গালাগালটাই না দিল। কিছু দিন পর আবার খবরে দেখল আমেরিকায় করোনা মহামারিতে একদিনে মৃত্যু পাচ হাজার এর উপরে। ভ্রু কুচকে মনযোগ দিয়ে খবর দেখছে যে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ এ ও করোনা রোগী ধরা পরেছে তারা নাকি ইতালি থেকে এসেছে। তবে মনে মনে ভাবল আর যাই হোক তার এলাকায় কোন ইতালি প্রবাসি নেই।

কিছু দিন পর পুলিশ, আর্মি, ম্যাজিস্ট্রেট সহ অন্যান্য সরকারি লোক তাদের গ্রামে আসল করোনা নিয়ে সতর্ক করতে। ব্রাক, কুদ্দুস বয়াতির গান বাজানো শুরু করল কিন্তু মকবুল মিয়া এতে কোন কর্নপাত ই করল না। সে তার মত চা বাজি করতে থাকল। কিছুদিন পর সরকারি লোক আরো তৎপরতা বাড়ালো কারন নারায়নগঞ্জ থেকে লোকজন পালিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। অবশ্য এতেও মকবুল মিয়ার কিছু আসে যায় না কারন তার তো কেউ নারায়ণগঞ্জ থাকে না।

বাজারের অদূরে মোল্লা বাড়ির জঙ্গলে অনেক চিৎকার চেচামেচির শব্দ শোনা যাচ্ছিলো কোন মতে মানুষের ভিড় ঠেলে মকবুল মিয়া এগিয়ে গিয়ে দেখে ২/৩ জন পুলিশ করিম মোল্লার পোলারে ধাওয়া করছে। সোলেমান মেম্বার কে জিজ্ঞাস করলে বলে সে নাকি নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছে ৩/৪ দিন আগে কাউকে কিছু না বলে বাজারে, তালোই বাড়ী বেড়িয়েছে। তাই পুলিশ এসেছে তাকে ঘরে রাখতে ১৪ দিন নাকি তার নিজ ঘরে থাকতে হবে।

পরের দিন সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে যায় মকবুল মিয়ার, গা কেমন জানি ম্যাজ ম্যাজ করে কিছু ভাল লাগে না, রাতে দুই বার পাতলা পায়খানাও হয়েছে, কিন্তু মনে করতে পারছে না খারাপ কি খেয়েছে। শরীরে শীত শীত অনুভব হচ্ছে সাথে গা ব্যথা। কোন মতে দুপুরের ভাত খেয়ে গ্রামের নগেন ডাক্তার কে দেখায় কিছু ঔষধপত্র নিয়ে বাড়ীতে আসে। রাতে জ্বরের মাত্রা আরো বেড়ে যায় সাথে শ্বাসকষ্ট মকবুলের ছেলে কি করবে বুঝতে পারে না কারন সে জানে এই সময় কোন হাসপাতালে চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই, তার মনে পরে পুলিশ দিন তিনেক আগে তাকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়েছিল সেখানে করোনার উপসর্গ এবং করনীয় লেখা ছিল। সেখান থেকে সে IEDCR এ ফোন করলে তারা সব শুনে মকবুল মিয়া কে আলাদা ঘরে রাখতে বলে।

মকবুল মিয়ার ছেলে মেয়ে তাকে ঘরের বাইরে আলাদা করে তোলা একটা রান্নাঘরে বিছানা করে দেয় বলে বাবা রোগ তো কারো আপন না তাই তুমি বাইরে থাক সুস্থ হলে ঘরে নিয়ে আসব। তারা পরিবারের অন্য কাউকে ভিড়তে দেয় না। মানসিক ভাবে কিছুটা ভেঙ্গে পরে মকবুল চিন্তা করতে থাকে কিভাবে তার এই অসুখ হলো। ভাবতে থাকে যদি সে মরে যায় তাহলে এই সুন্দর পৃথিবী তার আর দেখা হবে না- কি সুন্দর কৃষ্ণচুড়ায় লাল হয়ে আছে দক্ষিনের আকাশ, বর্ষার শুরুতে হওয়া বৃষ্টির টলটলে পানিতে ভরা পুকুরে নিজের মুখের ছবি আর দেখতে পারব না। কত আশা ছিল যত পাপ করেছি এইবার রমজানে আল্লার কাছে সব মাফ করিয়ে নিব। ভাবতে ভাবতে দম যেন বন্ধ হয়ে আসে মকবুল মিয়ার, খুব পানির পিপাসা পায় অনেক ডাকাডাকি করেও কাওকে পায় না।

বাড়িতে ভিষন হইচই হট্টগোল মকবুল মিয়ার নিথর দেহ পরে আছে রান্না ঘরের এক কোনায় কেউ সাহস করে কাছে যাচ্ছে না ঘরের লোক সবাই কোথায় যেন পালিয়ে গেছে। বাড়ির কেউ একজন থানার ওসি কে ফনে বিষয়টি জানালে পুলিশ এসে তাকে দাফন করে। পরের দিন তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

কবরে ফেরেশতারা মকবুল মিয়াকে জিজ্ঞাসা করে কিরে মরলি কিভাবে তোর তো জানাজা ও হইল না? মকবুল মিয়া বলে কি যে এক ভাইরাস আসছে পৃথিবীতে… বুকটা ফুইলা গেছিল দম নিতে পারি নাই। হুজুর, আমি তো আল্লার উপর ভরসা করছি, ফেরেশতা বলে তুই আল্লার উপর ভরসার নামে আল্লার পরীক্ষা করতে চাইছ ব্যাটা তুই তো দোজখে যাবি। মন খারাপ করে মকবুল, কিছু বুঝে উঠতে পারে না, ভাল কাজ তেমন কিছু নাই কিভাবে এই হাশর- মিযান পার করবে তা ভেবে পায় না। ভাবে জীবনের সকল অর্জন যাদের জন্য ব্যয় করল সেই স্ত্রী, পুত্র,কন্যা মরার সময় তার কাছে এলোনা। ভাবে, কিভাবে এই ভাইরাস তার ফুসফুসে ডুকেছিল সে ভাবতে থাকে; এর মধ্যে এক ফেরেশতা এসে বলে তুই তো তোর দেশের কোন বিধি বিধান মানিস নি আমি দেখতে পাচ্ছি যে চায়ের দোকানে তুই চা খেয়েছিলি সেখানে একই কাপে করিম মোল্লার ছেলেও চা খেয়েছিল। নারায়ণগঞ্জ এর এক গার্মেন্টস এ কাজ করার সময় সে ভাইরাসে আক্রান্ত হয় বয়স অল্প হওয়ায় তার কোন উপসর্গ ছিল না। তুই তো আত্মহনন করেছিস আর জানিস তো আত্মহত্যার শাস্তি সরাসরি দোজখ।
মকবুল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, দূরে দোজখের আগুন দেখতে পায় সে…..

লেখক : মো: আবদুল হালিম
এসি কাউনিয়া থানা, বরিশাল




Archives
Image
সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Image
বরিশালে সড়কের পাশে থাকা বাসে আগুন
Image
যুবদল নেতা কিবরিয়াকে হত্যা : বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
Image
শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে মিষ্টি বিতরণে সংঘর্ষ : বরিশালে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতার মৃত্যু
Image
মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনে যা বললেন শেখ হাসিনা