|
বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উদ্বেগ প্রকাশ
হাদি-দীপু হত্যার বিচার চাইল কংগ্রেস-বিজেপি-বিশ্ব হিন্দু পরিষদ
মুক্তখবর আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিবাদে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কলকাতার বাংলাদেশ মিশন সংলগ্ন এলাকা। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ধাপে ধাপে জাতীয় কংগ্রেস, বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও কয়েকটি অরাজনৈতিক সংগঠনের বিক্ষোভে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় পার্ক সার্কাস এলাকার যান চলাচল। দুপুরের পর থেকে একের পর এক মিছিল বাংলাদেশ মিশনের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়। কলকাতা পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ মিশনের ভেতরে বা ভবনে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি এবং ময়মনসিংহে দীপু দাস হত্যার প্রতিবাদেও বাংলাদেশ মিশনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে একদল সাধারণ মানুষ। উল্লেখ্য, দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। ময়মনসিংহেও দীপু দাস নামে এক যুবককের পিটিয়ে হত্যার পর শরীরে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে খুলনায় গুলিবিদ্ধ হন এনসিপি নেতা মোতালেব শিকদার। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের অনেকের মতে, এসব ঘটনা বাংলাদেশে ‘মব ভায়োলেন্স’ নামের একটি ভয়াবহ প্রবণতার জন্ম দিচ্ছে, যেখানে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সোমবার কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সামনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে ধাপে ধাপে বিক্ষোভে অংশ নেয় ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, বিজেপি এবং ‘নাস্তিক মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন। নাস্তিক মঞ্চের প্রতিনিধি সাধন বিশ্বাস বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর থেকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি শক্তি ও ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী ইন্ধন জোগাচ্ছে। ফলে সেখানে ‘মব ভায়োলেন্স’ নামে নতুন এক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। তিনি হাদি ও দীপু দাস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন, এসবের পেছনে মৌলবাদী শক্তি রয়েছে এবং এই শক্তি গোটা রাষ্ট্রকে শাসকহীন করে দিয়েছে। ফলে কেবল ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই নয়, মুক্তমনা মানুষ, ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা করা মানুষ, বাউল ফকির, ছায়ানট, উদীচির মতো প্রতিষ্ঠানগুলিকেও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনো হত্যাকেই আমরা মেনে নেব না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নির্দেশে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলও বিক্ষোভে অংশ নেয়। রাজ্য কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সেখানে হিন্দু ও মুসলিম উভয়ই নিহত হচ্ছে, আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানবিকতা।

তিনি এসব ঘটনার বিচার দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে কার্যকর সরকার ও প্রশাসনের অভাবেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকার ও বিজেপির সমালোচনা করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আকিব গুলজার বলেন, আগুন কখনো ধর্ম দেখে না। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে সরকারের ব্যর্থতার কারণেই তরুণ হাদি ও দীপুকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। পরে নাস্তিক মঞ্চ ও কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ মিশনে গিয়ে ডেপুটেশন জমা দেয়। অন্যদিকে বিকেলের দিকে ‘হিন্দু সনাতনী’ ব্যানারে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার সঙ্গে যোগ দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলসহ একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। প্রায় তিন হাজার মানুষের জমায়েতে ওই এলাকা আবারও অচল হয়ে পড়ে। পুলিশ বাধা দিলে শুভেন্দু অধিকারী রাস্তায় বসে পড়েন। এ সময় ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও তারা বাংলাদেশ মিশনে কোনো ডেপুটেশন জমা দেয়নি। কিছুক্ষণ বিক্ষোভের পর তারা এলাকা ত্যাগ করে।
Post Views: ০
|
|