|
রোগী ও ডাক্তারের মধ্যে কাউন্সিলিং গ্যাপ ছিল, এ কারণে এমন অভিযোগ-সহকারী পরিচালক
সমস্যা গলায়, শিশুর হার্নিয়া অপারেশন করলেন বরিশাল শেবাচিম’র চিকিৎসক
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : ঘাড়ের সমস্যা নিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছয় বছরের এক শিশুর তলপেটে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অভিভাবকরা বলছেন, ওই শিশুর পেটে অপারেশনের বিষয়ে চিকিৎসকরা তাদের কিছু জানাননি। অন্যদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, নিয়মের কিছুটা ব্যত্যয় ঘটলেও ঘাড়ে সমস্যার চিকিৎসা করতে গিয়ে শিশুটির হার্নিয়া ধরা পড়ে। আর তাই ঘাড়ের ওই অপারেশনের আগে ছোট এ অপারেশনটি করা হয়েছে। পরে ঘাড়ের অপারেশন করা হবে। শিশু রায়হান বরিশাল মহানগরের এয়ারপোর্ট থানা এলাকার নথুল্লাবাদ লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দা দিনমজুর শাহজালালের ছেলে। স্থানীয় একটি মাদরাসার ছাত্র রায়হান জন্ম থেকেই ঘাড়বাঁকা রোগে আক্রান্ত। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। জানা যায়, গত ১৬ জুলাই শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয় শিশু রায়হানকে। বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে শনিবার (জুলাই ২২) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে তার অপারেশন করেন চিকিৎসকরা। তবে অপারেশনের পর রায়হানের ঘাড়ে ক্ষতচিহ্নের পরিবর্তে তলপেটের নিচের অংশে সেলাইয়ের দাগ দেখে অবাক হন অভিভাবকরা। পরে রায়হানের মা-বাবা চিকিৎসকদের কাছে কারণ জানতে গেলে ওই বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, শিশুটির হার্নিয়ার অপারেশন করা হয়েছে। তবে এ অপারেশনের কথা তাদের কেন জানানো হয়নি, এমন প্রশ্নে চিকিৎসকরা শিশুটির অভিভাবকের কাছে তাদের ভুল স্বীকার করেন। এরপর সোমবার (জুলাই ২৪) সকালে শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। রায়হানের মা সুমি আক্তার বলেন, ঘাড়ের সমস্যার কারণে রায়হানকে প্রথমে শেবাচিম হাসপাতালের বহির্বিভাগে এনে ডাক্তার দেখাই। সেখানকার ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করি। এরপর পাঁচ ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডা: তৌহিদুল ইসলাম জানান, রায়হানের ঘাড়ের একপাশের কিছু মাংস বেড়েছে। আর এজন্য অপারেশন করা প্রয়োজন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকায় সিরিয়াল অনুযায়ী শনিবার আমার ছেলেকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করানোর দেড় ঘণ্টা পর রায়হানকে যখন বের করা হয়, তখন ঘাড়ে অপারেশনের কোনো চিহ্ন দেখতে পাইনি। তবে তলপেটে ক্ষত দেখে জিজ্ঞাসা করি। তখন জানতে পারি সেখানে অপারেশন হয়েছে। এরপর দায়িত্বরত চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, রায়হানের হার্নিয়া অপারেশন করা হয়েছে। নিজের সন্তানের হার্নিয়ার কোনো সমস্যা ছিল না জানিয়ে সুমি বলেন, আমার ছেলের ঘাড়ে সমস্যা, ডাক্তার বলেছেন, এজন্য গলার অংশে অপারেশন হবে। হার্নিয়ার বিষয়ে কোনো কথাই হয়নি। আর তারা আমাদের না জানিয়ে তলপেটে অপারেশন করে ফেলল! রায়হানের বাবা শাহজালাল বলেন, প্রয়োজন ছাড়া তলপেটে কী অপারেশন করল, তা তো আর আমরা বুঝব না। তবে আমার ছেলের যে সর্বনাশ হয়েছে তা বুঝছি। আমার ছেলের কিডনি কিংবা অন্যকিছু নিয়ে গেছে কি না তাও তো জানতে পারব না। খুব আতঙ্কে আছি, যারা আমার ছেলের সঙ্গে এমনটা করলো, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর আমার সন্তানের ভবিষ্যতে যে ক্ষতি হবে না, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া হোক। তিনি বলেন, ছেলের কিছু হলে কী করতে পারব জানি না। হাসপাতালের যাকেই জিজ্ঞাসা করছি, তারা বলছেন, অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া কোনো কিছুই করতে পারেন না ডাক্তাররা। তাহলে ঘাড়ের অপারেশনের কথা বলে তলপেটে অপারেশন করলো কীভাবে? এ বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি। ঘাড়বাঁকা রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়া শিশুটির হার্নিয়া রোগও ধরা পড়েছিল। ঘাড়বাঁকা রোগটি একটু জটিল, তা ছাড়া দুটি অপারেশন একসঙ্গে করা যায় না। এজন্য চিকিৎসক হার্নিয়া অপারেশন করেছেন। ঘাড়বাঁকা অপারেশন পরবর্তী সময়ে করা হবে। আর অভিভাবকদের না জানিয়ে এভাবে অপারেশন বিধি মোতাবেক হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগী ও ডাক্তারের মধ্যে কাউন্সিলিং গ্যাপ ছিল। এ কারণে এমন অভিযোগ উঠছে। তবে এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ আমরা পাইনি। পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Post Views:
১০৬
|
|