|
মিন্নির গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও পরে আসামি নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার, রিমান্ডে নেয়া এবং ১৬৪ ধারায় মিন্নির দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া ওই মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডকে ক্রসফায়ারে হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তও চাওয়া হয়েছে এই আবেদনে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ এই আবেদন করেন। এ আবেদনে মামলাটি পিবিআই অথবা সিআইডকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি এফআরএম নামজুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে স্বরাষ্ট্র ও আইন সচিব, পুলিশের আইজি, পুলিশের ডিআইজি (বরিশাল), বরগুণার এসপিসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছে। প্রসঙ্গত বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে গিয়ে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর থেকে মামলা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। ১৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশলাইনসে নিয়ে যায় পুলিশ। এর পর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পর দিন মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোঃ সিরাজুল ইসলাম গাজী। পর দিন বৃহস্পতিবার বরগুনার পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। গত শুক্রবার বিকালে মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের দাবি, মিন্নির কাছ থেকে জোর করে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। তিনি এ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষীকে (মিন্নি) আসামি করা ও রিমান্ডে নেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে দায়ী করে আসছেন। শুক্রবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘সবকিছুই শম্ভু বাবুর খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে রক্ষা করার জন্য আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে।’ শম্ভুর ছেলে সুনামের বিরুদ্ধে কিশোরের অভিযোগ, তার জন্যই এতদিন মিন্নির পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি আইনজীবীরা। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু সমালোচনার পর বরগুনা ও ঢাকার আইনজীবীদের একটি অংশ মিন্নির পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
Post Views: ০
|
|