মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : ঝালকাঠিতে মা ও সৎ বাবার সহযোগিতায় কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য হওয়া সেই স্কুলছাত্রী (১৩) মা হয়েছে। বুধবার সকালে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে একটি ফুটফুটে ছেলেসন্তানের জন্ম দেয় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই শিশু। বর্তমানে সে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজনিন বেগম বলেন, মেয়েটির প্রসব বেদনা শুরু হলে বুধবার সকালে ঝালকাঠি হাসপাতালে এসে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই জরুরি বিভাগে সে স্বাভাবিকভাবে একটি ছেলেসন্তান প্রসব করে। এরপর তাকে গাইনি ওয়ার্ডে আনা হয়। অপরিণত বয়সে মা হওয়ায় মেয়েটি কিছুটা অসুস্থ। নবজাতক স্বভাবিক ও সুস্থ রয়েছে। মা সাহেরা আক্তার কাজল এবং সৎ বাবা কাজী আলম ওই ছাত্রীকে কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেন। এ ব্যাপারে সে নিজে বাদী হয়ে ১০ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠি থানায় মামলা করলে পুলিশ মা সাহেরা আক্তার কাজল এবং সৎবাবা কাজী আলমকে গ্রেফতার করে। তারা বর্তমানে জেলহাজতে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি সদর উপজেলার মহদীপুর গ্রামের ইউনুস হাওলাদারের সঙ্গে ১৫-১৬ বছর আগে একই এলাকার সাহেরা আক্তার কাজলের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে জন্ম নেয় একটি কন্যাসন্তান। পারিবারিক কলহের জেরে সাহেরা ও ইউনুসের সংসার ভেঙে যায়। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কাজল ঝালকাঠি শহরের কাঠপট্টি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় চলে আসেন। ২০১৪ সালে কাজল শহরের কালীবাড়ি সড়কের টেলিভিশন মেকার কাজী আলমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পরও কাজলের মেয়ে তাদের সঙ্গেই থাকত। মেয়েটি যখন ৫ম শ্রেণিতে পড়ে তখন থেকেই তাকে জোর করে মা ও সৎ বাবা বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন। বর্তমানে সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। মাস খানেক আগে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তার মা ও সৎ বাবা শহরের মৌ-মিতা ক্লিনিকে গর্ভপাত করাতে নিয়ে যান। ওই ক্লিনিক থেকে তাদের পরদিন আসতে বলা হয়। পরে খবর পেয়ে ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে পুলিশ কাঠপট্টির বাসা থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ওইদিনই শহরের কালীবাড়ি সড়কে অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রীর মা সাহেরা আক্তার কাজল ও সৎ বাবা কাজী আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মেয়েটি জানায়, তাকে জোর করে এ কাজে বাধ্য করা হয়েছে। তার মা ও সৎ বাবা অন্য পুরুষ ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে পাহারা দিত। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ ধরনের কাজ করা হয়েছে। বিষয়টি কাউকে জানালে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখানো হতো। তার সৎ বাবাও প্রায়ই তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতেন বলেও জানায় ওই শিশু। ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আবু তাহের বলেন, মেয়েটির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মামলা নিয়ে তার মা ও সৎ বাবাকে গ্রেফতার করেছি। তার সন্তানের পিতৃপরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য নবজাতক এবং সৎ বাবা কাজী আলমের শরীর থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।