|
নগরীতে চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি, রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না পুলিশ
বড়দিনের ছুটিতে বরিশালে দিন-দুপুরে ‘কলমের কন্ঠ’ পত্রিকা অফিস চুরি
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : গত এক মাস ধরে দিন নয়, রাত নয়, দুপুর নয় প্রতিদিনই বরিশাল শহরের একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে। চুরির ঘটনাটি যেন চোর চক্রের কাছে নিয়মিত হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমানে নগরবাসীর কাছে চোর আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে চুরির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কোনো পেশাজীবী মানুষই। সাম্প্রতিক সময়ে নগরীতে চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেলেও অধিকাংশ ঘটনারই রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (ডিসেম্বর ২২) রাতে বরিশাল নগরীর আলেকান্দা কাজিপাড়া এলাকায় সাংবাদিক আরিফুর রহমানের বাসায় দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে। তার তিন দিনের মাথায় এবার বরিশালের দৈনিক কলমের কন্ঠ পত্রিকা অফিসের ভবনে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় চোর চক্রটির বিরুদ্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে উভয় পক্ষই বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফ হোসেন বলেন, চলতি মাসের ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১২ টায় প্রতিদিনের মত তিনি সেদিনও নগরীর ফকির বাড়ি রোডস্থ দৈনিক কলমের কন্ঠ ও আমার সংবাদ, বিজয় টিভির বরিশাল ব্যুরো অফিসে অফিসে যায়। অফিসে ঢুকতে তিনি দেখতে পান দ্বিতীয় তলার দরজা খোলা রয়েছে। পরে ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পান একটি লোক তার কাধে একটি স্কুল ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। তখন সাংবাদিক আরিফ হোসেন তার কাছে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কে, কেন এখানে এসেছেন? বলতেই, চোর চক্রর সদস্য দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে গিয়ে বাহির থেকে দরজা আটকে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে চোর চক্র শনাক্তর জন্য ভবনে থাকা সিসি টিভির ক্যামেরা চেক করে ভিডিও ফুটেজ ও চোর চক্রর ছবি বের করে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি ডিউটি অফিসার এস আই রুনু সরকার এর সাথে আলাপ করলে দায়িত্বে থাকা এস আই রুনু সরকার চোর চক্রটির ছবি দেখতে চান। পরে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফ হোসেন চোরের ছবিটি তাকে দেখানোর সাথে সাথেই চোর চক্রের সদস্যকে চিনিতে পেরে এস আই রুনু সরকার বলেন, এই চোরের নাম হলো বশির চোরা। তার বাড়ি হলো, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার ১২ নং রঙ্গশ্রী ইউনয়নের গড়িয়া গ্রাম। চোর বশিরের বাবার নাম জব্বার মোল্লা। কিছু দিন আগে তাকে একটি চুরি মামলায় গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি এবং আলাদতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করি। এস আই রুনু সরকার আরও বলেন, এই চোরা বশিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রায় ৩০ টির উপরে চুরি মামলা রয়েছে। তাকে পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এর কাজই হলো দিন-দুপুরে চুরি করা। ২২ ডিসেম্বর নগরীর আলেকান্দা কাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা অন্য আরেক সাংবাদিক যায়যায় দিন পত্রিকার আরিফুর রহমান তার বাসায়ও চুরির ঘটনার তিন দিন পাড় হতে না হতেই এবার পত্রিকা অফিসে চুরির ঘটনার ৩ দিন পূর্বে এবার নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের ফকির বাড়ি রোর্ডের সিহাব ভিলা ও বরিশালের দৈনিক কলমের কন্ঠ পত্রিকা অফিসের ভবনে দিন-দুপুরে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরির বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক আরিফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলার গেট তালাবদ্ধ থাকলেও পাশের ভবন ব্যবহার করে চোরেরা ছাদ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে মেশিনের সাহায্যে বাথরুমের পাইপ ও স্যানিটারি ফিটিংস কাটার চেষ্টা করে। এ সময় শব্দ শুনে পরিবারের সদস্যরা বেরিয়ে এলে চোরেরা পালিয়ে যায়। তবে তার আগেই বাথরুমের কিছু ফিটিংস চুরি করে নিয়ে যায় এবং বেশ কয়েকটি স্যানিটারি পাইপ নষ্ট করে ক্ষতিসাধন করে। তিনি জানান, ঘটনাটি দেখে উদ্দেশ্যমূলক বলেও মনে হয়েছে। অন্যদিকে ২৫ ডিসেম্বর বড় দিন উপলক্ষে সরকারী ছুটিতে দিন-দুপুরে পত্রিকা অফিসের কার্যলয়ে চুরি ঘটনায় সাংবাদিক আরিফ হোসেন বাদী হয়ে চুরির ঘটনাটি কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানিয়ে এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনিও। উল্লেখ্য, বরিশাল নগরীতে দিন দিন চোরের উৎপাত যেন বেড়েই চলছে। আর এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। চোরের হামলা থেকে কোনো পেশাজীবী মানুষই রেহাই পাচ্ছেন না। সোমবার (ডিসেম্বর ২২) রাতে বরিশালের এক সাংবাদিকের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত দুই মাসে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে শতাধিক চুরির ঘটনার খবর পাওয়া গেলেও অধিকাংশ ঘটনাই এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। আটক হচ্ছে না কোনো চোর চক্রের সদস্য কিবা মূল হোতা। এবিষয়ে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন উর রহমান জানান, চুরির ঘটনায় যে অভিযোগগুলো থানায় আসছে সেগুলো দ্রুত তদন্ত করা হচ্ছে। চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও আটক করতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাসে বরিশাল নগরী ও আশপাশের এলাকায় কমপক্ষে শতাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। এমনকি দিনের আলোতে দোকানের তালা ভেঙে ট্রাক ভর্তি করে মালামাল নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। দিন দুপুরে পত্রিকা অফিসের তালা ভেঙ্গে চুরি ঘটনাও ঘটেছে। আর রাতের আঁধারে বাসাবাড়িতে চুরি যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব চুরির অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গেই জড়িতদের আটক করতে ব্যর্থ হয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশ।নগরবাসীর অভিযোগ, চোর আটক করতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই দিন দিন চুরির ঘটনা মহামারির রূপ নিচ্ছে। এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, অধিকাংশ চুরির ঘটনায় মামলা না হওয়ায় তদন্ত কার্যক্রমে তেমন অগ্রগতি হয় না। তবে নগরীতে চুরি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে পুলিশ।
Post Views: ০
|
|