রানির মৃত্যুতে বাংলাদেশে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
বিদায় দ্বিতীয় রানি এলিজাবেথ : শোকে স্তব্ধ ব্রিটেন
মুক্তখবর আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কুইন আর কান্ট্রিকে ব্রিটেনের মানুষ ভালোবাসে। সেই কুইন ব্রিটেনের ইতিহাসের দীর্ঘতম সময়ের রানি এলিজাবেথ আলেক্সজান্দ্রা মেরি উইন্ডসর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে পাড়ি জমিয়েছেন পরলোকে। ব্রিটেন ও কমনওয়েলথভুক্ত ১৪টি দেশের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন স্কটল্যান্ডের এবারর্ডিনের কাছে বালমোরালে তার স্কটিশ এস্টেটে। সেখানেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে বৃহস্পতিবার বাকিংহাম প্যালেসের পক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে। ৯৬ বছর বয়সী রানীর মৃত্যুর খবরে ব্রিটেনজুড়ে মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উদ্বেগ বিরাজ করছে। বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে বহু মানুষকে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা গেছে। সেখানে শোকার্ত মানুষের ভিড় তৈরি হয়েছে। রানি এলিজাবেথ কেবল সম্রাজ্ঞী হিসেবেই নন, আবেগের জায়গা থেকে ও নানা কারণে তিনি ব্রিটেনসহ বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার জায়গা দখল করে ছিলেন। রাজশাষণ না থাকলেও ব্রিটিশ জনগণের শ্রদ্ধা, আস্থা আর ভালোবাসার আসনে ছিলেন রানি। ছিলেন তাদের সম্মানের প্রতীক। রানির মৃত্যুর খবরে মানুষ কাঁদছে। কেবল রানি হিসেবে নয়, ব্রিটেনসহ বিশ্বজুড়ে অসংখ্য সমাজসেবামূলক দাতব্য প্রতিষ্ঠান তিনি যুগের পর যুগ চালিয়ে গেছেন। খুব শৃঙ্খলার মধ্যে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে পরিচালিত করেছেন।
বাংলাদেশে রানি এলিজাবেথ
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সফর করেন। সেবছর ১৪ থেকে ১৯ নভেম্বর তিনি রাজকীয় সফরকালে চট্টগ্রামের একটি গ্রামে ট্রেনে ভ্রমণ করেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের সম্মানে পুস্পার্ঘও অর্পন করেন রানি।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে- শুক্র, শনি ও রোববার জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এদিকে রানির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেলে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্যালেসে ৯৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রিটেনের সিংহাসনে আসীন ছিলেন ৭০ বছর ধরে। চলতি বছরই তাঁর সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর উদযাপিত হয়েছে। গত জুলাই মাস থেকে স্কটল্যান্ডের বারমোরাল প্রাসাদে অবস্থান করছিলেন তিনি।
চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে তাঁর ৭০ বছরের শাসনামলের অবসান হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যুর পর ব্রিটেনের রাজা হয়েছেন তাঁর ছেলে চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে। কয়েক প্রজন্ম ধরে যুক্তরাজ্যকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন রানি এলিজাবেথ। দায়িত্বের প্রতি তাঁর নিষ্ঠার কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষের শ্রদ্ধা ও প্রশংসা অর্জন করেছেন। ১৯৫২ সালে সিংহাসনে আরোহন করেছিলেন তিনি। এই বছর সিংহাসন আরোহণের ৭০ বছর তিনি পালন করেছেন। অনেকের নতুন এলিজাবেথীয় যুগ বলে পরিচিত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে বৃহস্পতিবার। আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের নতুন রাজার নাম হবে রাজা চার্লস তৃতীয়। সরকারিভাবে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছে বিবিসি।
ব্রিটেনে দীর্ঘ ৭০ বছর রাজকার্য পরিচালনাকারী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাকিংহাম প্যালেস কর্তৃপক্ষ দিনটি নির্দিষ্ট করে জানাবে। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে হচ্ছে সেই ঐতিহাসিক গির্জা যেখানে ব্রিটেনের রাজা এবং রানিদের মুকুট পরানো হয়। এখানেই ১৯৫৩ সালে রানি হিসেবে এলিজাবেথের অভিষেক এবং ১৯৪৭ সালে প্রিন্স ফিলিপকে বিয়ে করেছিলেন এলিজাবেথ। ১৮ শতক থেকে অ্যাবেতে কোনও রাজার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান হয়নি। তবে ২০০২ সালে সেখানে রানির মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়েছিল। সেখানে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। রানির জীবন ও সেবামূলক কাজকে স্মরণ করতে রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সেখানে জড়ো হবেন বিশ্বনেতারাও। যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীরাও সেখানে থাকবেন। দিনটি শুরু হবে যখন রানির কফিনবাহী গাড়িবহর (রয়্যাল নেভির স্টেট গান ক্যারেজ) ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নিয়ে যাওয়া হয়। রানির কফিনটি ১১ শতকে মধ্যযুগীয় আদলে গড়া কাঠের ছাদের নিচে একটি উচুঁ প্ল্যাটফর্মে রাখা হবে। বিশেষ স্থানটিকে বলা হয় ক্যাটাফাল্ক। প্ল্যাটফর্মের প্রতিটি কিনারায় রয়্যাল সেনাসদস্যরা দাঁড়িয়ে থাকবেন। বাকিংহাম প্যালেস থেকে একটি ধীরগতির পথযাত্রার মাধ্যমে ওয়েস্টমিনস্টার হলে নিয়ে আসা হবে তাঁকে। সেখানে দেয়া হবে সামরিক কুচকাওয়াজ। থাকবেন রাজপরিবারের সদস্যরা। এই ধরনের রাজকীয় গাড়িবহর সবশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৭৯ সালে। সে সময় প্রিন্স ফিলিপ্সের চাচা লর্ড মাইন্টব্যাটেনের কফিন নিয়ে এগিয়ে যান ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ১৪২ মেরিনসেনা। রাজপরিবারের সদস্যরা ও নতুন রাজা প্রিন্স চালর্সও এই বহরের সামনের দিকে থাকবেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে ওয়েস্টমিনস্টারের ডিন ডেভিড হোয়েল অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন এবং ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি সেখানে ধর্মীয় বক্তব্য দেবেন। দেশটির নতুন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসও সেখানে ধর্মীয় উপদেশ (সারমন) পড়ে শুনাবেন। এরপর অ্যাবে থেকে রানির কফিন নিয়ে যাওয়া হবে হাইড পার্ক কর্নারের ওয়েলিংটন আর্কে। সেখান থেকে কফিনবাহী বহর উইন্সরের পথে যাত্রা করবে। উইন্সরের জর্জ চ্যাপেলে রাখা কফিনে আবারও শ্রদ্ধা জানাবেন রাজপরিবারের সদস্যরা। সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের ভেতর কিং জর্জ ফোর মেমোরিয়াল চ্যাপেলে চিরনিন্দ্রায় শায়িত হবেন রানি। ব্রিটিশ ইতিহাসে দীর্ঘতম রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে রানি মারা গেছেন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে শান্তিপূর্ণভাবে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটিশ রাজকার্যের দায়িত্ব গ্রহণকারী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৭০ বছর সিংহাসন পরিচালনার অনন্য ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটেছে। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে তাঁর মতো দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকার রেকর্ড আর কারও নেই। ৯৬ বছর বয়সে রাজকার্য পরিচালনাও একটি অনন্য সফলতা। ব্রিটেন ছাড়াও তিনি ছিলেন কানাডা, অস্ট্রিলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ১৪টি দেশ ও একাধিক অঞ্চলের রানি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন ছিল এমন ৫৪টি দেশের জোট কমনওয়েলথের প্রধান ছিলেন তিনি।
Post Views:
১৩৬
|