মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম)-এ দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় দালালচক্রের দৌরাত্ম্যে সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জরুরি বিভাগ, আউটডোর থেকে শুরু করে অপারেশন থিয়েটারের সামনেও দালালদের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে। রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা, ভর্তি ও বিশেষ চিকিৎসকের কাছে “দ্রুত ব্যবস্থা করে দেওয়ার” আশ্বাস দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পুরনো হলেও, নতুন করে বায়োপসি পরীক্ষার নামে ভয়াবহ প্রতারণা রোগীদের জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। অভিযোগ রয়েছে, বায়োপসি পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে রিপোর্ট দিতে অযথা কালক্ষেপণ, ভুল কিংবা জাল রিপোর্ট তৈরি এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে রোগীদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে।

এতে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সময়মতো রোগ নির্ণয় করতে না পারায় রোগীর অবস্থা জটিল হয়ে উঠছে। ধলা জাফর নামে এক ব্যক্তি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সামনে অবস্থান করেন। তিনি নিজেকে ঢাকার আনোয়ারা হাসপাতালের ‘বায়োপসি পরীক্ষার এজেন্ট’ পরিচয় দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। অভিযোগকারীদের ভাষ্যানুযায়ী, ঢাকায় পরীক্ষা পাঠানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে জাফর নিজেই কম্পিউটারে রিপোর্ট তৈরি করেন। রোগীদের বলা হয় রিপোর্ট পেতে এক থেকে দেড় সপ্তাহ সময় লাগবে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মাসের পর মাস রিপোর্ট দেওয়া হয় না। ফলে চিকিৎসা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে এবং বাধ্য হয়ে রোগীকে হাসপাতাল ছাড়তে হয়। বরিশাল সার্জারি ওয়ার্ডের রোগী স্বজন নাসিমা বেগম বলেন, “আমার ছেলের অপারেশনের সময় থিয়েটারের সামনে থেকে চিকিৎসকের দেওয়া মাংসের নমুনা নিয়ে যান জাফর ভাই। কয়েকদিন ঘোরানোর পরও রিপোর্ট দেননি, অথচ ২,৫০০ টাকা নিয়েছেন।” সরকারি মেডিকেলে যেখানে বায়োপসি পরীক্ষার নির্ধারিত ফি মাত্র ৩০০ টাকা, সেখানে জাফর ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা, কখনো তারও বেশি আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল কর্মচারীর পরিচয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন অপারেশন থিয়েটার থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। এ কাজে কিছু ওটি স্টাফ ও দালালচক্রের সদস্যরা কমিশনের বিনিময়ে সহযোগিতা করে থাকেন। জাফরের প্রতিষ্ঠানের নাম ইউনিটি মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টার, আর তার চেম্বার পরিচালিত হয় দি বরিশাল মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার নামে। এ বিষয়ে ধলা জাফর অভিযোগের আংশিক সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “আমি শের-ই বাংলা মেডিকেলে চাকরি করি না। যাদের বায়োপসি দরকার, তাদের নমুনা ঢাকায় পাঠাই। রিপোর্ট দিতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে। এই কাজ করেই সংসার চালাই।” তবে নিজে রিপোর্ট তৈরি করেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘দেখা করে বলবেন’ বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর রোগী ও স্বজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল খাত উল্লেখ করে স্বাস্থ্যসচেতন মহল বলছে, এ ধরণের প্রতারণা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, দালালবিরোধী অভিযানে ধলা জাফর একাধিকবার আটক হয়ে জেলও খেটেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, দালালচক্র দমনে নিয়মিত অভিযান চালানো হলেও রোগীর চাপ ও হাসপাতালের বিশাল পরিসরের কারণে সবসময় কঠোর নজরদারি সম্ভব হয় না। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। সাধারণ মানুষের দাবি, হাসপাতালে দালালচক্র নির্মূলে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, সিসিটিভি মনিটরিং এবং রোগীসেবা বিষয়ে জনসচেতনতা জরুরি। নচেৎ সেবাপ্রার্থীরা প্রতিনিয়ত এমন হয়রানির শিকার হবেন।







