মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : রাতের আঁধারে ভরাট করা হচ্ছে বরিশাল নগরীর ভাটিখানা এলাকার প্রায় শতবর্ষী একটি পুকুর। পুকুরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও এর সুফল ভোগ করছে স্থানীয় হাজারো পরিবার। তাই পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকি যে কোন মূল্যে পুকুরটি ভরাট ঠেকাতে শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে ওই এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। ঘোষণা দিয়েছেন পুকুর ভরাট প্রতিরোধের। ভাটিখানা-আমানতগঞ্জ সংযোগ সড়কের পাশে অবস্থিত বিশাল আয়তনের এই পুকুরটি এলাকার ঐতিহ্য। পুকুরের পূর্ব পাড়ে শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক এর ফুফু’র নামে প্রতিষ্ঠিত ‘আলতাফুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। ১৯২৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় ওই পুকুরটি খনন করা হয়। স্থানীয় কাজীবাড়ি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি সেলিম মৃধা জানান, শের-ই বাংলার ফুফু আলতাফুন্নেছার বিশাল ভূ-সম্পত্তি ছিল ওই এলাকায়। তারাই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। কালক্রমে ক্রয় সূত্রে পুকুরটির মালিক হন নগরীর আলেকান্দা নিবাসী ফয়েজ আহমেদ। তার উত্তরাধিকাররা এখন পুকুরটির মালিক। তিনি আরও বলেন, ১০ বছর পূর্বে পুকুরটি ক্রয়ের জন্য মসজিদ কমিটির সঙ্গে ফয়েজ আহমেদের চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু তার আকস্মিক মৃত্যুতে সেটি আর শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে পুকুরটি লিজে নিয়ে মাছ চাষ করেন স্থানীয় বিলকিস বেগম। তার স্বামী ফয়েজ আহমেদ’র সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন। তিনিও মারা গেছেন কয়েক মাস পূর্বে। এদিকে গত বুধবার হঠাৎ করেই পুকুরটি সেচ করে বৃহস্পতিবার দিনে মাছ ধরে নেন বিলকিস বেগমের ছেলে মিন্টু মুন্সি। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে শতাধিক ট্রাক বালু ফেলে পুকুরটির ভরাট শুরু করেন। বহিরাগত কিছু লোক সেখানে অবস্থান নিয়ে বালু ফেলার কাজে তদারকি করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা একাট্টা হয়ে পুকুর ভরাট রোধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। এমনকি পুকুর ভরাট রোধে শুক্রবার বিকালে ওই এলাকায় মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। এদিকে নগরীর চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বাদশা বলেন, সিটি কর্পোরেশন নগরীর দেড়শ পুকুর সংরক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে। যার মধ্যে কাজীবাড়ি মসজিদ সংলগ্ন পুকুরটিও রয়েছে। রাতের আঁধারে অসৎ উদ্দেশ্যে বালু ফেলে পুকুরটি ভরাটের চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই জমির বর্তমান কেয়ারটেকার মিন্টু মুন্সি বলেন, মৃত ফয়েজ আহমেদের উত্তরাধিকার মেয়ে এবং মৃত ছেলে তারেক আহমেদ’র স্ত্রী রাতে উপস্থিত থেকে পুকুর ভরাট শুরু করেন। সেখানে তারা বহুতল ভবন নির্মাণ করবেন। এ প্রসঙ্গে বরিশাল নদী-খাল-জলাশায় রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরীর মধ্যে চাইলেই পুকুর ভরাট করা যাবে না। সেটা হোক মালিকানা জমি। ওই এলাকায় অগ্নিদুর্ঘটনা হলে নিবার্পণে পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস্য এ পুকুরটি রক্ষায় আইনী লড়াই করার কথা বলেন তিনি। পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মো: আব্দুল হালিম বলেন, পুকুর ভরাটের খবর আমি শুনেছি। তবে ভাটিখানায় কাউকে পুকুর ভরাটের অনুমতি দেয়া হয়নি। এ ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেন তিনি। বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, সরকারি, বেসরকারি কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন আছে। তারা পুকুর ভরাটের অনুমতি নেয়নি। পুকুর ভরাট বন্ধে সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন তিনি।