Current Bangladesh Time
শুক্রবার মে ৩, ২০২৪ ১:২৩ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » মিড-ডে মিল : একটি সোনালী প্রজন্ম গঠনে এর ভূমিকা ও আমাদের করণীয়-বরিশাল জেলা প্রশাসক 
Friday February 7, 2020 , 8:20 pm
Print this E-mail this

মিড-ডে মিল : একটি সোনালী প্রজন্ম গঠনে এর ভূমিকা ও আমাদের করণীয়-বরিশাল জেলা প্রশাসক


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : ‘No one should be left behind’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে পুরো পৃথিবী যখন এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনি আমরা স্বপ্ন দেখছি একটি সুষম ও সম্ভাবনাময় আগামীর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার। আর এই সোনার বাংলা গড়ার জন্য দরকার একটি সোনালি প্রজন্ম যারা মেধায়, মননে, আচরণে ও কৌশলে থাকবে নেতৃত্বের অগ্রভাগে। একই সাথে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)’ অর্জন বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এসডিজি এর দুই নং লক্ষ্যমাত্রাই হচ্ছে, ‘ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার’। ইতোমধ্যে আমরা জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ সফলতার সাথে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। গত দু’দশকে দারিদ্র্য বিলোপ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী উন্নয়ন, জেন্ডার সমতা অর্জন, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে ছেলে-মেয়ের হারে সমতা, পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। আমরা সবাই জানি, একটি প্রজন্ম গড়ে তোলার সূতিকাগার হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেখানে একটি শিশু প্রথমবারের মতো দেখতে পায় পারিবারিক মন্ডলের বাইরের একটি পৃথিবী এবং যেখান থেকে সে ধীরে ধীরে দেশ, সমাজ ও বহির্বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে। তাই, উন্নত জাতি গঠনে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। প্রাথমিক শিক্ষা শুধু কিছু পুঁথিগত জ্ঞানের সমষ্টি নয়; এর পরিমন্ডল আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো আধুনিক, যুগোপযোগী ও সর্বস্তরে অংশগ্রহণমূলক করার জন্য বর্তমান সরকারের একটি অনবদ্য সংযোজন হলো ‘মিড-ডে মিল।’ ‘মিড-ডে মিল (Mid-day Meal)’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ মধ্যাহ্ন ভোজ। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মিড ডে মিল বলতে বুঝায় বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের দুপুরের খাবার নিশ্চিত করা। আমাদের দেশের বর্তমান কারিকুলামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল ধারণাটি মূলত তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হবে যারা দুপুর ১২ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত একটানা বিদ্যালয়ে অবস্থান করে যেখানে দুপুরের খাবারের জন্য ৪৫ মিনিট বিরতি থাকে। অর্থাৎ, এই বিরতির সময় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করার অপর নামই হচ্ছে ‘মিড-ডে মিল’। বক্সে সাজনো মিড-ডে মিল সংগ্রহ করছেন এক শিক্ষার্থী ‘মিড-ডে মিল’ ধারণাটি শুধু এক বেলা খাবার সরবরাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং একটি সুষম ও সম্ভাবনাময় আগামী প্রজন্ম গঠনে এর রয়েছে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা যারা দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে থাকে তাদের অধিকাংশই এই সময়ে না খেয়ে থাকে যা শারীরিক ও মানসিকভাবে তাদের বেড়ে উঠায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আবার পেটে ক্ষুধা থাকলে পড়াশোনায়ও মনোযোগ কম আসে। মিড-ডে মিল কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রত্যেক মানুষের শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন নির্ধারিত মাত্রার ক্যালরি সম্পন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খবার। শিশুদের বিকাশ নিশ্চিত করার জন্যও প্রাত্যহিক নির্দিষ্ট ক্যালরি সম্পন্ন খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিশু বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অপুষ্টিতে ভোগে। তাদের দৈনিক ক্যালরির চাহিদা পূরণ হয় না। ‘মিড-ডে মিল’ উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার প্রদানের মাধ্যমে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ক্যালরির নূন্যতম ৩০ ভাগ স্কুল মিল থেকে আসা নিশ্চিত করা। এতে করে যে সকল শিশু বাড়ী থেকে থেকে খাবার নিয়ে আসতে পারে না, তাদেরও দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরি গ্রহণ নিশ্চিত হয়। একই সাথে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খবার সরবরাহ করার ফলে অপুষ্টিতে ভোগা শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয় যা তাদের লেখা পড়ার প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক পরিবারের অভিভাবকরা এখনো সন্তানের শিক্ষার বিষয়ে সচেতন নন। আবার, অনেকেই আছেন যারা একবেলা দুপুরের খাবারসহ বাচ্চাকে স্কুল পাঠাতে পারেন না বা পাঠাতে অপারগ। মফস্বল অঞ্চলের স্কুলসমূহ পরিদর্শন করলে দেখা যায়, ‘মিড-ডে মিল’ চালু হলে এসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বেশী থাকে। বাবা মায়েরা সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে সন্তানের খাদ্য প্রাপ্তির বিষয়ে নিশ্চিত থেকে নিজেদের কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন। অনেক ছাত্র-ছাত্রী দুপুরবেলা বিরতির সময়ে বাসায় খাবার গ্রহণের জন্য গেলে আর ফিরে আসে না। এতে অনুপস্থিতি ও ঝরে পড়ার হার বেড়ে যায়। মিড-ডে মিল চালু হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা স্কুলেই খাবার খেয়ে ক্লাসে ফিরে যায় যার ফলশ্রুতিতে অনুপস্থিতি ও ঝরে পড়ার হার হ্রাস পাচ্ছে। কোমলমতি শিশুদেরকে আমরা যেভাবে গড়ে তুলতে চাই সেভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। উন্নত জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন সুস্থ, সবল ও মেধাবী জনবল। সুস্থ দেহ, সুস্থ মন নিশ্চিত করা সম্ভব হলেই অন্যান্য কাজে মনোনিবেশ করা সহজ হয়। শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য সঠিক খাদ্যতালিকা ও খাদ্যমান নিশ্চিতকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকল পরিবার সব সময় এই খাদ্য তালিকা ও খাদ্য মান নিশ্চিত করতে পারে না। মিড-ডে মিল কার্যক্রমের মাধ্যমে এটি দেশের সর্বস্তরে অন্তত এক বেলার জন্য হলেও নিশ্চিত করা সম্ভব।

আমরা যে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ‘মিড-ডে মিল’ হতে পারে একটি অন্যতম মাইলফলক। প্রাথমিক পর্যায়ে সকল শিশু যাতে একবেলা আহার এক সাথে করতে পারে তার জন্য প্রয়োজন ‘মিড-ডে মিল’ এর মত একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকল পরিবারের ছেলেমেয়েরা একসাথে স্কুলে বসেই দুপুরের খাবার গ্রহণ করলে তাদের মধ্যে তৈরি হবে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতার সম্পর্ক যেখানে থাকবে না কোন ভেদাভেদ কিংবা বৈষম্য, যা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে জোরালো ভূমিকা রাখবে। শৈশবে যদি কোন শিশু সুষম ও পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হয় তবে তার বেড়ে উঠার ভিত কখনোই শক্তিশালী হতে পারে না। একটি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী প্রজন্ম ই পারবে শিক্ষার সকল স্তর পার হয়ে জাতির হাল ধরতে। একটি জাতি সঠিক ভাবে গড়ে উঠার জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত জনসম্পদ। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এর লক্ষ্যমাত্রা ৪ এ ‘সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টি’ করার কথা বলা হয়ছে। গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার প্রথমিক স্তর বা শিক্ষার ভিত্তিস্তর সঠিক ভাবে গড়ে তোলা। সেই প্রাথমিক স্তর সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হলে প্রাথমিক স্তরে শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার নিশ্চিত করতে হবে, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ নিশ্চিত করতে হবে। বাল্যকালে নিছক দুষ্টামির ফলে বাচ্চারা স্কুল পালিয়ে থাকে। কিন্তু, সেই স্কুল পালানো যাতে ক্ষুধার কারণে না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা তখন-ই সম্ভব হবে যখন স্কুলগামী সকল শিক্ষার্থীর দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে দেখা গেছে যেসব স্কুলে ‘মিড-ডে মিল’ এর ব্যবস্থা করা হয়েছে সেসব স্কুলে উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে, হ্রাস পেয়েছে ঝরে পড়ার সংখ্যা। জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ আমরা তখনই তৈরী করতে পারবো যখন আমরা আমদের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানস্পম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারবো। ক্ষুধার্ত অবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়া কোনমতেই ফলপ্রসূ হতে পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য মিড-ডে মিল বা মধ্যাহ্ন ভোজের ব্যবস্থা থাকলে শিখন-শেখানো কার্যক্রম অধিকতর ফলপ্রসূ হবে। মিড-ডে মিল কার্যক্রম বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ও আমাদের করনীয়ঃ সরকারি বা ব্যক্তিগত অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের জন্য মিড-ডে মিল স্থায়ীভাবে চালু করা সম্ভব নয়, সাময়িকভাবে এটি চলতে পারে। এটি স্থায়ীভাবে চালু করতে হলে সরকার, জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি, স্কুল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষসহ সকলকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এই পুরো ব্যবস্থাটি সমন্বয় করার জন্য স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকেও রাখতে হবে কার্যকর ভূমিকা। ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভায় ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি-২০১৯’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়ছে। এই নীতিমালার আলোকে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সকলকে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। এ ধরনের বড় উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা। স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সাথে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সঠিক নজরদারি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সঠিকভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে তার সুফল ভোগ করবে পুরো জাতি। বাংলাদেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে। সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত হবে আগামীর ভবিষ্যৎ, দূর হবে শিশুর পুষ্টিহীনতা, পাশাপাশি কমবে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হার। তাই, মানসম্মত শিক্ষার সাথে সাথে বাংলাদেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল ব্যবস্থা চালু করা এখন সময়ের দাবি।ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২০৩০ বাস্তবায়ন, রুপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে প্রয়োজন শতভাগ শিক্ষার হার নিশ্চিত করা। সর্বোপরি একথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় কাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে ‘মিড-ডে মিল’ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

এস এম অজিয়র রহমান
জেলা প্রশাসক, বরিশাল

সূত্র : বি নিউজ বুলেটিন




Archives
Image
বরিশালের গৌরনদীতে আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ : ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম
Image
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে হতে হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী
Image
মিল্টন সমাদ্দারের নামে তিন মামলায় যেসব অভিযোগ
Image
নগদ ঘুষ ছাড়া নড়েন না বরিশাল পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা!
Image
বরিশালে সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের উপর হামলার অভিযোগ, ইউপি সদস্য গ্রেফতার