|
ঢাকা বোর্ডের এসএসসি প্রশ্ন নিয়ে তোলপাড় : বাজারের গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তৈরি করেছিলেন বরিশালের ৫ শিক্ষক!
নিজস্ব প্রতিবেদক : এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রথম দিনে সোমবার (৩ জানুয়ারি) বাজারের গাইড বই থেকে হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এসএসসির বাংলা প্রথম পত্রের সৃজনশীল প্রশ্ন। এছাড়া এমসিকিউ অংশের একাধিক প্রশ্নের রয়েছে একাধিক উত্তর। এতে বিভ্রান্ত হয়েছে পরীক্ষার্থীরা। এছাড়া নতুন ও পুরাতন সিলেবাসের প্রশ্ন নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকরা। এসব ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সেই প্রশ্নপত্র তৈরি করা নিয়েও বরিশালসহ সমগ্র বাংলাদেশের বিশ্লেষক ও শিক্ষাবিদরা করেছেন নানান মন্তব্য। জানা গেছে, বরিশাল বোর্ড থেকে সেই প্রশ্নপত্র প্রেরণ করা হয় ঢাকা বোর্ডে। আর এই প্রশ্নপত্র তৈরির সাথে যুক্ত রয়েছেন বরিশালেরই ৫ শিক্ষক। বিষয়টি নিয়ে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বিস্তারিত মুখ খুলতে না চাইলেও একটি বিশ্বস্ত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিষয়টি স্বীকার করে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন কুমার গাইন জানান, বরিশালের এই ৫ শিক্ষকের মধ্যে ১ জন প্রশ্ন প্রণেতা এবং অপর ৪ জন মডারেটর। ঢাকা বোর্ডের ওই প্রশ্নটি প্রণয়ন করেন, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাজনিন আক্তার (বেসরকারি)। আর প্রশ্নের মডারেটর সরকারি ৪ শিক্ষক। এই ৪ জনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তদন্ত চলমান। তবে প্রশ্ন প্রণয়নকারী নাজনিন আক্তারকে ইতিমধ্যে নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে জানা গেছে, ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার প্রশ্ন গাইড বই থেকে হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে। মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৭০ নম্বরের সৃজনশীল। আর ত্রিশ নম্বরের এমসিকিউ। সৃজনশীল প্রশ্নের মধ্যে ৪০ নম্বরই হুবহু গাইড বই থেকে কমন পড়েছে। অথবা অন্যভাবে বলা যায়, ৪০ নম্বরের প্রশ্ন তিন/চার বছর আগের অন্য শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নের সঙ্গে প্রায় মিল। অথচ পুরনো প্রশ্ন না দেয়ার বিধান রয়েছে। যেখানে উদ্দীপক অংশের কোনো কিছুই মেলার কথা নয়। সেখানে সবকিছুই মিলে যাচ্ছে। এছাড়া এমসিকিউ অংশের কয়েকটি প্রশ্নের রয়েছে একাধিক উত্তর। ভুল প্রশ্নও রয়েছে। এতে বিভ্রান্ত হয়েছে পরীক্ষার্থীরা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রটিতে কুমিল্লা ও সিলেট বোর্ডের ২০১৬ সালের একটি উদ্দীপক ও সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন হুবহু এ বছরের ৯নং প্রশ্ন হিসেবে সেট করা হয়েছে। উপন্যাস অংশের সঙ্গে ২০১৭ সালের বাংলা প্রথম পত্রের উপন্যাস অংশের ৮নং প্রশ্নটি এ বছরের উপন্যাস অংশের ১০নং প্রশ্ন হিসেবে সেট করা হয়েছে। যেখানে শুধু ‘ক’ নং প্রশ্নটি পরিবর্তন করা হয়েছে। যেটা কাম্য নয়। প্রশ্নগুলো বিগত কয়েক বছর ধরে টেস্ট পেপার ও গাইড বইতে ছিল। বিষয়টি স্বীকার করে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস জানান, যারা এই প্রশ্নপত্র তৈরির সাথে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে প্রশ্ন প্রণয়নকারীকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। তিনি বেসরকারি শিক্ষক এবং এই প্রশ্নপত্রের সাথে জড়িত অপর ৪ শিক্ষক সরকারি। এই মুহূর্তে তাদের নাম প্রকাশ করবো না, তবে বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বরিশাল হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি এমএম আমজাদ হোসাইন বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। বোর্ডগুলে বিশেষ করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ পরীক্ষা সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন প্রণয়নে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে যেন এমন ভুল না হয় সেই জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: আসাদুল আলম আসাদ বলেন, একজন শিক্ষকের এমন করে গাইড বই দেখে হুবহু প্রশ্ন করা ঠিক নয়। একজন শিক্ষকের ক্রিয়েটিভিটি থাকতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
Post Views:
১৪২
|
|