অপসো স্যালাইন দেশের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ প্রস্তুতকারী অপসোনিন গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান
চাকরিতে পুনর্বহালসহ দুই দফা দাবিতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : চাকরিতে পুনর্বহালসহ দুই দফা দাবিতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন অপসো স্যালাইন ফার্মাসিউটিক্যালসের ছাঁটাইকৃত শ্রমিকরা। শনিবার (নভেম্বর ১৫) দুপুর ১২টা থেকে বরিশাল নগরীর চৌমাথা এলাকায় ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন নারী-পুরুষ শ্রমিকরা। এরআগে নগরীর বগুরা রোডস্থ অপসো স্যালাইন ফার্মাসিউটিক্যালসের কারখানার সামনে জড়ো হন শ্রমিকরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বরিশাল নগরীর চৌমাথা এলাকায় আসেন তারা।
অবরোধের কারণে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং দুই প্রান্তে যানবাহনের লাইন দীর্ঘ হতে থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় শত শত যাত্রী, পরিবহন চালক-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষকে। শুরুতে পুলিশ সদস্যরা মহাসড়ক অবরোধে শ্রমিকদের বাধা দিতে চাইলেও বিক্ষোভের মুখে তারা সরে গিয়ে সড়কের একপাশে অবস্থান নেয়। এ সময় শ্রমিকদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন, বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক ডা: মনীষা চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা অপসো স্যালাইন ফার্মাসিউটিক্যালসে পরিশ্রম করে আসছেন। প্রথমে প্রতিদিন ২২০ টাকার হাজিরায় কাজ করার পর প্রতিষ্ঠানটি তাদের মাস্টাররোলে অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় হঠাৎ করেই ৫৭০ জন শ্রমিককে বিনা নোটিশে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। এতে শ্রমিকদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এবং শ্রমিকবিরোধী। তাদের দাবি, “আমাদের ছাঁটাই করে কোম্পানি নতুনভাবে ১২০০ শ্রমিক নিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছে। এটা স্পষ্টভাবে আমাদের সঙ্গে অন্যায় ও ষড়যন্ত্র।” আন্দোলনে অংশ নেয়া শ্রমিক মো: মিজানুর রহমান জানান, দীর্ঘ ১৭ দিন ধরে তারা আন্দোলন করছেন। এরআগে জেলা প্রশাসন এবং শ্রম অধিদপ্তরের উদ্যোগে আমাদের দাবির বিষয় নিয়ে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু অপসোনিন ফার্মা কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মেনে নিচ্ছে না। চাকরিচ্যুত করার এক মাস আগে আমাদের অপসো স্যালাইন ফার্মায় একটি শ্রমিক ইউনিয়ন অনুমোদন হয়। এ কারণেই আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ছাঁটাইকৃতদের পুনর্বহালের আগপর্যন্ত সংগ্রাম চলবে বলেও জানান তিনি। বাসদ নেত্রী ডা: মনীষা চক্রবর্তী বলেন, সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং অন্যায়ভাবে ৫৭০ জন শ্রমিককে একযোগে ছাঁটাই করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের আন্দোলন চললে অপসো স্যালাইন ফার্মা নেতাদের শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহাল এবং তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেনি। শ্রমিকদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে অপসো স্যালাইন ফার্মা শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এ কারণে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে বরিশালে অপসো স্যালাইন কারখানায় আন্দোলন তৃতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কয়েকশ শ্রমিক কারখানার প্রধান ফটকসংলগ্ন বগুড়া সড়কে সকাল-সন্ধ্যা প্রতীকী অনশন করেছেন। বুধবার মালিকপক্ষের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনা ভেস্তে গেলে আন্দোলনরত শ্রমিকরা এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন। অপসো স্যালাইন দেশের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ প্রস্তুতকারী অপসোনিন গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। এ কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। গত ২৯ অক্টোবর কারখানার স্টুরিপ্যাক (সিরিঞ্জ ও স্যালাইন সেট প্রস্তুকারক) শাখার ৫৭০ জন শ্রমিককে চাকরিচ্যুতির চিঠি দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে এসব শ্রমিকসহ কারখানার সব শ্রমিক ৩০ অক্টোবর থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। অপসো স্যালাইন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: রাকিব মিয়া বলেন, বুধবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের মধ্যস্থতায় তার সভাকক্ষে একটি বৈঠক হয়। মালিকপক্ষের কয়েকজন কর্মকর্তা এতে অংশ নেন। তারা শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এ ক্ষেত্রে তারা যুক্তি দেখান, এ কারখানা চালাতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের লোকসান হচ্ছে। অপরদিকে শ্রমিকরা চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল করে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি তোলেন। কোনো পক্ষ ছাড় না দেওয়ায় সভাটি সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়।