পুরো ইউনিফর্ম রক্তে ভিজে গিয়েছিলো, তবুও আমি খুশি, পেশাগত পরিচয়ের চেয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ
গর্ভবতী নারীকে কোলে করে মধ্যরাতে হাসপাতালে নিলেন র্যাব কমান্ডার
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে যখন সারাদেশের যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয় তখন শ্রীমঙ্গল র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার এএসপি মো: আনোয়ার হোসেন ঘোষণা দেন শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জ এলাকায় কোন গর্ভবতী মায়ের প্রসবকালীন জটিলতা নিয়ে যানবাহনের সমস্যা হলে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে ফোন করার। শ্রীমঙ্গল র্যাব-৯ এর কমান্ডার আনোয়ার হোসেন শামীমের এমন মানবিকতায় ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে উপজেলা জুড়ে জনমানুষের প্রশংসায় পান তিনি। প্রসঙ্গত, রবিবার রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে এক নারীর প্রসব বেদনা দেখা দিলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এমতাবস্থায় বাচ্চা প্রসব না হওয়ায় জরুরী ভিত্তিতে গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রাতে অনেক চেষ্টা করেও কোন গাড়ি যোগার করতে পারেনি গর্ভবতী নারীর স্বজনরা। পরিচিত অনেক সিএনজি ড্রাইভারকে অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। তখন শ্রীমঙ্গল র্যাব কমান্ডার, এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীমকে ফোন করা হলে তিনি সেই গর্ভবতী নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। গর্ভবতী নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাঁটতে না পারায় কোলে করে নিয়ে গাড়িতে তুলেন এবং হাসপাতালে পৌঁছার পর আবার কোলে অপারেশন রুমে নিয়ে যান। এ বিষয়ে র্যাব-৯ এর ক্যাম্প কমান্ডার এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, রাত সাড়ে এগারোটার পরে আমার কাছে একটা ফোন আসে যে একজন গর্ভবতী নারীর প্রসবকালীন জটিলতা প্রসব হচ্ছে না এমন কিছু। তখন আমি সেখানে যাই এবং সে বোনটির ক্ষতি হতে পারে ভেবে হাঁটতে না পারায় তখন আমি কোলে করে গাড়িতে উঠাই এবং গাড়ি থেকে হাসপাতালের অপারেশন রুমে তিনতলায় নিয়ে যাই। এদিকে এএসপি মো: আনোয়ার হোসেন শামীম এ বিষয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ফেসবুকে লেখেন, আমি তখন রাত্রিকালীন টহল ডিউটিতে। ফোন পেয়ে সেখানে পৌঁছে দেখি প্রসূতি মা-টি খুব সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আছেন। ব্লিডিং হচ্ছে, বেদনাও প্রচণ্ড, কিন্তু বাচ্চা প্রসব হচ্ছে না। গাড়িতে তুলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই। নিচতলা থেকে কোলে করে তিনতলার প্রসূতি ওয়ার্ড পর্যন্ত নিতে নিতে পুরো ইউনিফর্ম রক্তে ভিজে গিয়েছিলো, তবুও আমি খুশি। যাদের ট্যাক্সের টাকায় দু’মুঠো ডালভাত খাই, তাদের প্রয়োজনের মুহূর্তে রেসপন্স তো করতে পেরেছি। তিনি আরো বলেন, পেশাগত পরিচয়ের চেয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে যে কেউ বিপদে পড়বে বা সমস্যায় পড়বে প্রতিটি মানুষ যেনো মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এগিয়ে আসেন এটাই আমার চাওয়া।