নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের প্রধান কার্যালয়সহ বিভাগের সকল পোস্ট অফিসগুলোতেই চলছে ‘কামাল আতঙ্ক’। কোন কিছুতেই যেন লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না কামালের। একাধিক বিভাগীয় মামলা, থানায় হাফডজন সাধারণ ডায়েরি থাকার পরেও থামছেনা কামালের ত্রাস। এমনকি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রধান কঠোর অবস্থান নেয়ায় সুচতুর কামাল নিজেকে বাঁচাতে ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মিজানুর রহমানকেও ছাড় দেননি। তার বিরুদ্ধেও আদালতে মামলা দায়ের করেন কামাল। নগর অভিভাবক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর কঠোর হুঁশিয়ারিতেও থেমে নেই এই কামাল। যার ফলে সকল পোস্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। তবে তার সকল অপকর্মের বিষয় প্রধান কার্যালয় ও বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে এই প্রতিবেদককে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। কামালকে চাকুরিচ্যুত করার মত কঠোর কোন সিদ্ধান্তও নিতে পারেন তারা। যদিও তার বিভিন্ন অপকর্মে চতুর্থ শ্রেণী ডাক কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠায় তাকে হারাতে হয় সম্পাদকের পদ। তার পরিবর্তে নেতৃত্বে আনা হয় সংগঠনের সদস্যদের পাশে থাকা আলাউদ্দিন শিকদারকে। সূত্র মতে, নোয়াখালীর সেনবাগ থানার বজলুর রহমানের পুত্র মো: কামাল হোসেন (৪৫)। চাকুরির সুবাদে আসেন বরিশালে। এমএলএসএস হিসেবে চাকুরি শুরু করেন ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল’র কার্যালয়ে। চাকুরির শুরুতেই জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মের সাথে। চতুর কামাল নাম ভাঙাতে শুরু করেন বরিশালের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের। বিভিন্ন সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশলটা খুব সহজেই রপ্ত করে নেন। একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার থেকে শুরু করে সহায় সম্বল পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছেন এই কামাল। তার পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কাছে ১৩৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ দেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ায় লাঞ্ছিত, হত্যা ও চাকুরিচ্যুত করার হুমকি প্রদান করেন তিনি। এ সকল বিষয় নিয়ে হাফডজন সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয় তার বিরুদ্ধে।
এদের মধ্যে পোস্টাল অপারেটর আবদুল আজিজ খান (৫৫), রানার (সংযুক্ত ড্রাইভার) মোশারেফ হোসেন (৫৯), রানার (সংযুক্ত নৈশ প্রহরী) জব্বার মোল্লা (৫০) ও ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল এর ড্রাইভার দেলোয়ার হোসেনসহ প্রায় ডজন খানেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেদম প্রহার করেন কামাল। মারধর ও হুমকি প্রদানের কারণ ছিলো-পদোন্নতি ও চাকুরি স্থায়ী, বদলী ও ই-সেন্টারে কম্পিউটার দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়া। টাকা চাইলেই লাঞ্ছিত করতেন কামাল। অপকর্মের পাল্লা ভারী হয়ে গেলে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে তাকে পিরোজপুরের প্রধান ডাকঘরে অপারেটর পদে বদলী করা হয়। বদলীর পর তিনি ওই অফিসে যোগদান করার পরে বর্তমান সময় পর্যন্ত অফিসে যাননি। ৩০ জানুয়ারি তিনি ১ মাসের ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। ছুটির আবেদন মঞ্জুর না হলেও তিনি অফিসে যান না। বরং বরিশাল শহরেই ঘোরাঘুরি করেন। যারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন এখনও। এসকল বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো: মিজানুর রহমান বলেন, বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে কামালের বিরুদ্ধে ৩টি বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। তাছাড়াও অফিসের বিভিন্ন স্টাফকে মারধর করার দায়ে থানায় বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। চতুর্থ শ্রেণী ডাক কর্মচারী ইউনিয়নের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন সিকদার বলেন, আমার সংগঠনের অনেকের কাছ থেকেই প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কামাল। সংগঠনের সকল সদস্যদের পক্ষে আমি কামালের বিচার দাবি করছি। কামালের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সংগঠনের অনেক সদস্যই এখন নিরাপত্তাহীনতায় জীবনযাপন করছেন।