|
করোনাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়লে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে
করোনার মধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : করোনা মহামারির মধ্যে রাজধানীতে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বাড়তে শুরু করেছে এডিস মশা। রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, বনানী, মোহাম্মদপুর, শাহবাগ ও পরীবাগ এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এমন তথ্য উঠে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়। আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জুন মাসের প্রথম ২৪ দিনে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৬১ জন, যেখানে বছরের প্রথম ৫ মাসে ডেঙ্গু রোগী ছিল মাত্র ১০১ জন। এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যদি এখনই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে ২০২০ সালের চেয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হবে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়ে প্রায় চারগুণ হয়েছিল। তখন থেকেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন রাজধানীর মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে আসছে। মশক নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনামাফিক কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান দুই সিটির কর্তাব্যক্তিরা। অথচ দুই সিটির এসব পরিকল্পনার তোয়াক্কা না করে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। আর এতে এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। উদ্বেগের বিষয়, করোনা এবং ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো একই। ফলে অনেকেই জ্বর হলে বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকছেন। এ কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রকৃত সংখ্যাটা চাপা পড়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজধানীর যত্রতত্র পড়ে থাকা গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, বাসাবাড়ির ওয়াটার মিটার হোল, নির্মাণাধীন ভবন, বাড়ির ছাদ এবং রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা ভাঙা পাত্রসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির কারণে জমে থাকছে পানি। আর এই জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই জন্মাচ্ছে এডিস মশা। ফলে নগরবাসী আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুতে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৫৩ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৯ জুন ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে ২৮ জুন ১২ জন ও ২৭ জুন ২১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফল বলছে, রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডেই এডিস বেড়েছে, ব্রুটো ইনডেক্সে যার ঘনত্ব পাওয়া গেছে ২৫ থেকে ৫০ পর্যন্ত। তা ছাড়া সর্বোচ্চসংখ্যক মশার লার্ভা পাওয়া গেছে পরিত্যক্ত টায়ারে। সংগত কারণেই প্রতিটি ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটানো নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, মশার ওষুধ যেন নির্ভেজাল হয়। লক্ষণীয় বিষয়, দুই সিটি করপোরেশনেই মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, তার পরও দেখা যাচ্ছে মশা কমছে না। কেন এমন হচ্ছে, একটি কার্যকর কমিটি করে এর কারণ অনুসন্ধান করা উচিত। সেই সঙ্গে এডিস নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সঙ্গে মানুষকে যুক্ত করতে হবে। কারণ শুধু সিটি করপোরেশন বা কেন্দ্রীয় সরকার এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। সাধারণ মানুষকে তার ঘর ও আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে, যেন কোনোভাবেই এডিস মশার জন্ম না হয়। মনে রাখতে হবে, করোনাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়লে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তাই ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে ব্যাপক হারে সংক্রমণ বাড়ার আগেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু প্রতিরোধে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ বসবাসের জায়গা এডিস মশামুক্ত রাখতে সচেতনতার পরিচয় দেবে এমনটাই প্রত্যাশা।
Post Views:
১৭৩
|
|