Current Bangladesh Time
বুধবার নভেম্বর ১৯, ২০২৫ ৩:১০ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » আভিজাত্যের প্রতীক বাঙালির সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর 
Tuesday October 18, 2022 , 5:09 pm
Print this E-mail this

অথচ এই কাচারি ঘরই ছিলো গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির একটি অংশ

আভিজাত্যের প্রতীক বাঙালির সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর


শামীম আহমেদ, অতিথি প্রটিবেদক : একসময় গ্রামীণ জনপদের অবস্থাসম্পন্ন অধিকাংশ গৃহস্থের বাড়িতেই ছিল কাচারি ঘর। অথচ এই কাচারি ঘরই ছিলো গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির একটি অংশ। কালের বিবর্তনে আজ কাচারি ঘর বাঙালির সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। গেস্টরুম কিংবা ড্রয়িং রুমের আদি ভার্সন কাচারি ঘর এখন আর গ্রামীণ জনপদে দেখা যায়না। মূল বাড়ির একটু বাহিরে আলাদা খোলামেলা ঘর। অতিথি, পথচারী কিংবা সাক্ষাতপ্রার্থীরা এই ঘরে এসেই বসতেন। প্রয়োজনে এক-দুইদিন রাত যাপনেরও ব্যবস্থা থাকতো কাচারি ঘরে। কাচারি ঘর ছিল বাংলার অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থের আভিজাত্যের প্রতীক। কাঠের কারুকাজ করা টিন অথবা শনের ছাউনি থাকতো কাচারি ঘরে। আলোচনা, শালিস বৈঠক, গল্প-আড্ডার আসর বসত কাচারি ঘরে। বর্ষা মৌসুমে গ্রামের লোকজনদের উপস্থিতিতে কাচারি ঘরে বসতো পুঁথিপাঠ। পথচারীরা এই কাচারি ঘরে ক্ষনিকের জন্য বিশ্রাম নিতেন। বিপদে পরলে রাতযাপনের ব্যবস্থা থাকতো কাচারি ঘরে। গৃহস্থের বাড়ির ভিতর থেকে খাবার পাঠানো হতো কাচারি ঘরের অতিথির জন্য। আবাসিক গৃহশিক্ষকের (লজিং মাস্টার) থাকার ব্যবস্থা থাকতো কাচারি ঘরেই। কোন কোন বাড়ির কাচারি ঘর সকাল বেলা মক্তব হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। ঈশা খাঁর আমলে কর্মচারীদের খাজনা আদায়ের জন্য কাচারি ঘর ব্যবহার করা হতো। জমিদারী প্রথার সময়ও খাজনা আদায় করা হতো গ্রামের প্রভাবশালী গ্রাম্যমোড়লের বাড়ির সামনের কাচারি ঘরে বসে। এখন আর কাচারি ঘর তেমন চোখে পরে না। বরিশালের গ্রামীণ জনপদের অতীতের অবস্থাসম্পন্ন গ্রাম্যমোড়লদের বাড়ির বাহিরে এখনও কালের স্বাক্ষী হয়ে অযত্ন অবহেলায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে কাচারি ঘর। অনেকেই বাবা ও দাদার ঐতিহ্য হিসেবে এখনও কাচারি ঘর সংস্কার করে রাখছেন। ফলে পূর্ব পুরুষদের অসংখ্য স্মৃতি বিজড়িত কাচারি ঘর আজও প্রাচীণতার বার্তা বহন করে আসছে। তেমনি একটি কাচারি ঘরের সন্ধান মিলেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গেরাকুল গ্রামে। ওই গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পরিবার মিঞাবাড়ির সামনে কালের স্বাক্ষী হয়ে সংস্কারের অভাবে আজো অযতœ অবহেলায় দাঁড়িয়ে রয়েছে কাচারি ঘর। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিঞাবাড়ির সন্তান গোলাম মানিক মিঞার (গ্রামবাসীর কাছে যিনি বড় মিঞা নামে পরিচিত) সাথে দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের গভীর সম্পর্ক ছিলো। তিনিও (বড় মিঞা) ছিলেন, বরিশালের একজন খ্যাতনামা ব্যক্তি। তাদের গেরাকুল গ্রামের বসত ঘরের কিছুটা বাহিরে নির্মিত কাচারি ঘরে তৎকালীন সময়ে একদিনের জন্য অতিথি হয়ে এসেছিলেন বাংলার বাঘ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক। শতবছর পূর্বে গোলাম মানিক মিঞার উদ্যোগে এ কাচারি ঘর থেকেই গ্রামের শিশু-কিশোরদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে মিঞা বাড়ির উত্তরসূরীদের দান করা সম্পত্তিতে গড়ে তোলা হয় গেরাকুল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যা আজ দ্বিতল সুরম্য স্কুল ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টার। এছাড়া এ কাচারি ঘর থেকেই তৎকালীন মাহিলাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে মিঞা বাড়ির সম্পত্তিতেই ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য নির্মিত হয় স্থায়ী দুটি পাকা ভবন। ১৯৯৩ সালে এই কাচারি ঘর থেকেই যাত্রা শুরু হয় গেরাকুল বেগম আখতারুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। পরবর্তীতে মিঞাবাড়ির সম্পত্তিতেই ওই বিদ্যালয়টি তৃতীয় তলার ভবনে সুনামের সাথে আজ সহ¯্রাধীক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। এ কাচারি ঘর থেকে শুরু হওয়া মক্তব আজ মিঞাবাড়ির দ্বিতল সুরম্য জামে মসজিদে পরিচালিত হচ্ছে। সামনে একটি বারান্দা বিশিষ্ট মিঞা বাড়ির এই কাচারি ঘরকে ঘিরে গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছে রয়েছে অসংখ্য স্মৃতি। গ্রামবাসীর সকলের কাছে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি গোলাম মানিক মিঞার মৃত্যুর পর এ বাড়ির জৌলুস অনেকটাই হারাতে শুরু করেছে। বাড়ির অধিকাংশ পরিবার বরিশাল শহর, ঢাকাসহ বিদেশে বসবাস করেন। ফলে বাড়ির অন্যান্য ঘরের পাশাপাশি স্মৃতি বিজরীত কাচারি ঘরটিও অযত্ন অবহেলায় সংস্কারের অভাবে দিন দিন ব্যবহারে অনুপযোগি হয়ে পরেছে।




Archives
Image
সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Image
বরিশালে সড়কের পাশে থাকা বাসে আগুন
Image
যুবদল নেতা কিবরিয়াকে হত্যা : বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
Image
শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে মিষ্টি বিতরণে সংঘর্ষ : বরিশালে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতার মৃত্যু
Image
মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনে যা বললেন শেখ হাসিনা