Current Bangladesh Time
সোমবার জুন ২৩, ২০২৫ ১১:০৫ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » আজ ১০ এপ্রিল : তিনি দেখেছিলেন পৃথিবীর মুখ, হ্যাপি বার্থ ডে টু জুয়েল আইচ 
Thursday April 10, 2025 , 5:11 am
Print this E-mail this

তিনি জাদুশিল্পী বা বাঁশিবাদকই নন, একাধারে চিত্রশিল্পী-সমাজসেবী, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা

আজ ১০ এপ্রিল : তিনি দেখেছিলেন পৃথিবীর মুখ, হ্যাপি বার্থ ডে টু জুয়েল আইচ


মুক্তখবর বিনোদন ডেস্ক : আমাদের জুয়েল আইচ, দ্য গ্রেট ম্যাজিশিয়ন। ১০ এপ্রিল তিনি দেখেছিলেন পৃথিবীর মুখ, হ্যাপি বার্থ ডে টু জুয়েল আইচ। বাংলাদেশের জাদুশিল্পের পথিকৃত জুয়েল আইচকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন। জুয়েল আইচ শুধু একজন জাদুকরই নন, তিনি একজন ধ্রুপদী বাঁশিবাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা।

আইচ পরিবার

এক প্রদর্শনীতে দেখা গেল বাঁশি বাজাচ্ছেন জুয়েল আইচ। পাশে দাঁড়ানো স্ত্রী বিপাশা আইচ বাঁশির সুরে তন্ময়। ধীরে ধীরে তার চোখ বুঁজে এলো। বাঁশির সুর ক্রমশই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠলো। আর কী আশ্চর্য বাঁশির সুরে ধীরে ধীরে শুন্যে ভাসলেন বিপাশা। শুধু কী তাই ! গিলোটিনের ভেতর ঘাড় পেতে দিলেন বিপাশা আইচ। জুয়েল আইচের হাতে ঝকঝকে বৈদ্যুতিক করাত। কী পাষণ্ড মানুষ তিনি! বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে প্রিয়তমা স্ত্রীর ঘাড় বরাবর নামিয়ে আনলেন ধাঁরালো করাত। আতঙ্কে শিউরে উঠলো দর্শকেরা। কিন্তু কী তাজ্জব, অক্ষতই রইলেন বিপাশা। হাসি মুখে গিলোটিন থেকে ঘাড় সরিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে মাথা নোয়ালেন। অভিভূত দর্শক দেখলো গিলোটিনের ওপর আর নিচের ফুটোয় রাখা গাজরগুলো করাত-কাটা হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই হলেন আমাদের প্রিয় ম্যাজিশিয়ান জুয়েল আইচ, যিনি বিনোদন থেকে জাদুকে শিল্পের মর্যাদায় উন্নীত করে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে সুপরিচিত ও সম্মানিত করেছেন। তিনি কেবল জাদুশিল্পী বা বাঁশিবাদকই নন, একাধারে চিত্রশিল্পী-সমাজসেবী এবং একাত্তরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

জাদুশিল্পী জুয়েল আইচের জন্মদিনে তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতার নির্বাচিত কিছু অংশ :-

মুক্তখবর : শুরুতেই আপনার শৈশবের গল্প শুনতে চাই।
জুয়েল আইচ : আমি গ্রামের ছেলে। আমার জন্ম পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার সমদেকাঠির গ্রামে। আমার বাবা বি.কে আইচ, তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। মা ছিলেন গৃহিনী। আমরা ৬ বোন ৩ ভাই। আমার পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় গ্রামেই, সমদেকাঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত গ্রামেই ছিলাম। বাবা ব্যবসার কাজে সপ্তাহের ছুটির দিন ছাড়া থাকতেন পিরোজপুর শহরে। ক্লাস ফোরে উঠার পর তিনি আমাকে তার কাছে নিয়ে যান। গ্রামের স্কুল থেকে এনে পিরোজপুর সরকারী হাই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। খুব মন খারাপ হয়েছিল আমার, বাবার উপর রাগও হয়েছিল। সবাই থাকবে গ্রামে আর বাবা আমাকে শহরে নিজের কাছে নিয়ে আসলেন। বাবা যে আমাকে খুব ভালোবাসেন, সেটা আমি বুঝতে পারি অনেক পরে। বাবার মৃত্যুর পর। আসলে আমার মতো অনেকেই বাবার ভালোবাসা টের পায়, বাবা মারা যাবার পর।

মুক্তখবর : আপনি তো খুব ভালো ছাত্র ছিলেন?
জুয়েল আইচ : স্কুল জীবন থেকে সবসময় ভালো রেজাল্ট করেছি। ভালো রেজাল্ট করার পেছনের কারণটা হলো, ছোটবেলা থেকেই আমি আশেপাশের মানুষের হাসি মুখ দেখতে ভালোবাসি। ভালো রেজাল্ট করলে সবাই খুব খুশি হবে, এটাই ছিল আমার ভালো রেজাল্টের আসল কারণ। ছোটবেলা থেকেই আমি মানুষকে মুগ্ধ করতে চাইতাম, এখনও তাই চাই। ম্যাজিক দেখিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করা যায়। মানুষ মুগ্ধ হবে আমার ম্যাজিক দেখে। ম্যাজিকের প্রতি ঝোঁকার এটিও অন্যতম কারণ।

মুক্তখবর : ছোটবেলায় কী হতে চেয়েছিলেন? ম্যাজিশিয়ন অর্থাৎ জাদুশিল্পী হওয়ার স্বপ্নটা তৈরি হলো কীভাবে?
জুয়েল আইচ : অনেক কিছুই তো হতে চেয়েছি ছোটবেলায়। ছোটবেলা থেকেই আমার ঝোঁক তৈরি হয় ছবি আঁকার প্রতি। আমার বাবার শখ ছিল ছবি আঁকা। তার দেখাদেখি আমিও ছবি আঁকা শুরু করি। ছবি আঁকার সেই অভ্যাস এখনো আছে। গ্রামের মেলায় একবার দেখলাম এক বাঁশিওয়ালাকে, বাঁশি বাজিয়ে বাজিয়ে বাঁশি বিক্রি করছে। আমারও ইচ্ছে হলো বাঁশিওয়ালা হওয়ার। শুরু হলো আমার বাঁশি বাজানোর কসরত। একবার আমাদের গ্রামে বেদেবহর এসেছিল। বেদে দলের কাছ থেকেই আমি প্রথম জাদু দেখি। ঠিক কী জাদু দেখেছিলাম মনে নেই, তবে চমৎকৃত হয়েছিলাম এটা বলতে পারি। জাদুর প্রতি আকর্ষণটা তৈরি হয় আরো অনেক পরে। বানারীপাড়া সার্কাস দলের এক জাদুকরের জাদু দেখে তো হতবাক আমি। সেই জাদুকর একটা ছেলের গলা কেটে ফেলছে, আবার জাদু দিয়ে গলা জোড়া লাগিয়ে দিচ্ছে । ঠিক করলাম, আমিও জাদু শিখবো। ছোটবেলায় রূপকথা পড়তে আমি খুব পছন্দ করতাম। বন্দে আলী মিয়ার রূপকথা ছিল আমার খুব প্রিয়। স্বপ্নে প্রায় দেখতাম, আমি বন্দে আলী মিয়ার রূপকথার জাদুর দেশে চলে গেছি। জাদু দিয়ে পাল্টে দিচ্ছি সবকিছু। জাদুর প্রতি আমার আকর্ষণটা উন্মাদনায় পরিণত হয় কলেজে উঠার পর, সিরাজগঞ্জের জাদুকর আবদুর রশিদের জাদু দেখে।   সচেতনভাবে একজন জাদুশিল্পী হওয়ার স্বপ্নটা বোধহয় তখন থেকেই দেখতে শুরু করি। ম্যাজিক সম্পর্কিত রাজ্যের বইপত্র ঘাটাঘাটি করে শুরু করলাম ম্যাজিক প্র্যাকটিস। তবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাকে সেই স্বপ্ন নিয়ে তখন বেশি দূর যেতে দেয় নি। একাত্তরে পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আমরা প্রাণ নিয়ে কোনরকমে পালিয়ে বাঁচি। জাদুর যেসব যন্ত্রপাতি আমি তৈরি করেছিলাম সব পুড়ে ছাড়খার।

মুক্তখবর : আমরা জানি আপনি একাত্তরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন কোন প্রেরণায়?
জুয়েল আইচ : আসলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কোনো পূর্ব প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা ছাড়াই সংঘটিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ করবো, এরকম চিন্তাভাবনা আমার আগে থেকে ছিল না। কারণ আমি প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে কখনোই যুক্ত ছিলাম না। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মনে হলো, দেশে থাকলে মরতে হবে। মরতে যখন হবেই তো এভাবে মার খেয়ে কাপুরুষের মতো মরে যাওয়া ঠিক হবে না। মরবো যখন লড়াই করে মরবো, যুদ্ধ করে মরবো। অবশ্য আগেই উপলব্ধি করেছিলাম যে, পাকিস্তান কিছুতেই আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে না। পাকিস্তান আমাদের  অধিকার বঞ্চিত করে রাখবে। এ থেকে বেরিয়ে আসাতে হলে আমাদের সশস্ত্র সংগ্রাম করতে হবে।

মুক্তখবর : আপনার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কিছু স্মৃতির কথা বলুন?
জুয়েল আইচ : আমি খানিকটা ভীতুপ্রকৃতির ছেলে ছিলাম। কোথাও গাড়ির চাকা বাস্ট হলে আমার পিলে চমকে যেত। বোমাবাজি-মারামারির ভয়ে ছাত্র রাজনীতি থেকে দূরে ছিলাম। সেই আমিই কী করে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছি এলএমজি চালিয়েছি, সেটা এখনও আমার কাছে ম্যাজিকের মতো মনে হয়। সেই ম্যাজিকটা হলো ‘স্বাধীনতার স্বপ্ন’। আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই ৯ নম্বর সেক্টরের হয়ে। আমাদের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল। ছোট বড় অনেক অপারেশনেই আমি অংশ নেই। সবচেয়ে বড় অপারেশনটা করেছিলাম পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি থানায়। সেখানে পেয়ারাবাগান নামের একটা জায়গায় পাকিস্তানি মিলিটারিদের একটি ব্যাটালিয়ান ক্যাম্প করেছিল। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ছোট্ট একটা গ্র“প নিয়ে সেই ক্যাম্পে হামলা চালাই। হানাদারদের সঙ্গে সেখানে সম্মুখযুদ্ধ হয়েছিল। একপর্যায়ে তারা আমাদের আক্রমনে পিছু হটে এবং পালিয়ে যায়। যুদ্ধ জয়ের আনন্দটা কী সেসময় টের পেয়েছিলাম।

মুক্তখবর : মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেই কী পেশাদার ম্যাজিশিয়ান হিসেবে জাদুশিল্পে নিবেদিত হন?
জুয়েল আইচ : নাহ, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পেশা হিসেবে আমি শিক্ষকতা বেছে নেই। জগন্নাথ কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করে একজন শিক্ষক হওয়ার জন্য ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে বিএড কোর্স করি। পিরোজপুরেরই একটি স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু হয়েছিল আমার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো আগুনে পুড়ে ম্যাজিকের সব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষকতার পাশাপাশি আবার টুকটাক করে যন্ত্রপাতি তৈরি করা শুরু করি। স্বাধীনতার বছর দুয়েক পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা হকি ম্যাচ হয়েছিল। খেলায় পাকিস্তানের কাছে আমরা ১৭ গোলে হেরেছিলাম। এই ঘটনাটি আমাকে প্রচন্ড নাড়া দেয়। যাদের আমরা যুদ্ধ করে হারিয়েছি, তাদের কাছে এতো বড় পরাজয়টা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তখনই মনের মধ্যে একটা আলাদা জেদ তৈরি হয়। ঠিক করি আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়ে। আমাদের যে হাজার বছরের ঝলমলে ঐতিহ্য আছে, তা পৃথিবীর মানুষকে জানাতে হবে। আমাদের বাংলা অঞ্চলে জাদু এমন একটি শিল্প, যা হাজার বছরের পুরনো। এই ভাবনা থেকেই আমি পেশাদার জাদুশিল্পী হওয়ার প্রেরণা পাই।   ছোটখাট ঘরোয়া অনুষ্ঠানে জাদু দেখালেও প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে পাবলিক শো করি আমি ১৯৭৩ সালে। আমাদের পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি থানার স্বরূপা সিনেমা হলে। মনে আছে, শোতে আমার এক ছোট ভাইকে আমি শূন্যে ভাসিয়েছিলাম। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় শো করা শুরু করি। ঢাকায় প্রথম শো করি ছিয়াত্তরের দিকে।   এর বছর খানেক পরই শুরু হয় বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে নিয়মিত জাদু দেখানো।

মুক্তখবর : আপনাকে একটা সময় টিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত জাদু প্রদর্শন করতে দেখা গেলেও গত কয়েকবছর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশেও আপনাকে খুব বেশি শো করতে ইদানিং দেখা যায় না। এর কারণ কী?
জুয়েল আইচ : আসলে দীর্ঘদিন ধরে তো জাদুশিল্পের সঙ্গে জড়িত আছি। এখন যেটা হয়েছে, ম্যাজিকের ক্ষেত্রে আমি ইন্টারন্যাশানাল স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করি। আজকাল ছোট্ট একটা স্টুডিওতে সীমিত পরিসরে একেকটা টিভিপ্রোগ্রাম তৈরি হয়। এসব প্রোগ্রামে এতো সীমাবদ্ধতার মাঝে কোনোভাবেই সেই স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখা সম্ভব নয়। তবুও আমার প্রিয় দর্শক-বন্ধুদের কথা ভেবে বছরে ২/১টা অনুষ্ঠানে ম্যাজিক দেখানোর চেষ্টা করি। দেশেও গত কয়েকবছর হলো বড় বড় ভেন্যু ছাড়া আমি শো করছি না। এটার কারণও সেই ইন্টারন্যাশানাল স্টান্ডার্ড বজায় রাখার চেষ্টা। এই স্টান্ডার্ড বজায় রাখতে গিয়ে শোর বাজেটও অনেক হয়ে যায়। কিন্তু ম্যাজিককে একটা স্টান্ডার্ড জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পর তা থেকে তো সরে আসা যায় না। দেশের বাইরেই গত কয়েক বছর ধরে আমি তুলনামুলক বেশি পারফর্ম করি। আমার জাদুতে থাকে দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া। জাদু দিয়েই দেশকে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করছি।

মুক্তখবর : এবার একটু অন্যরকম প্রশ্ন, আপনি কী ভূত বিশ্বাস করেন?
জুয়েল আইচ : ওরে বাবা, ভূত বিশ্বাস না করে কী উপায় আছে! কারণ আমি খুব কাছে থেকে ভূত দেখেছি। আগে ঢাকা থেকে লঞ্চে নিয়মিত পিরোজপুর যাতায়াত করতাম। গভীর রাতে গ্রামের কাছাকাছি একটি ঘাটে লঞ্চ থেকে নামতাম। এক একা বনজঙ্গলে ঘেরা নির্জন পথ ধরে কয়েক মাইল হেঁটে বাড়ি পৌঁছাতে হতো। সে সময়ই একাধিকবার ভয়ংকর সব ভূত-প্রেতের খপ্পড়ে পড়ি। এরকমই একটা বাস্তব অভিজ্ঞতার ঘটনা বলি। প্রায় শেষ রাত। একটা শ্বশান ঘাট পাড় হয়ে বিলের মতো একটা জায়গার পাশ দিয়ে বাড়ির পথে হাঁটছি। পথে ঝোপঝাঁড়। একটু ভয় ভয় লাগছিল, তাই খুব দ্রুত হাঁটছিলাম। হঠাৎ দেখি, একটা ঝোঁপের ধারে একটা বউ বসে আছে। মাথায় ঘোমটা দেওয়া একটা ছোট্ট বউ। এতো রাতে এই নির্জন জায়গায় বউ আসবে কোথা থেকে? এটা কী ! ভালো করে তাকাতেই দেখি বউটা আমার উদ্দেশ্যে মাথা নাড়ছে। হৃদপিণ্ড ধরাস করে উঠলো, আতংকে পা ফেলতে ভুলে গেছি। বউটা থেকে চোখও সরাতে পারছি না। শীতল একটা হাওয়া বয়ে গেল। বউটা এবার জোরে জোরে মাথা নাড়তে শুরু করলো, অর্থাৎ আমাকে সে কাছে ডাকছে। বুঝলাম আমার সময় ঘনিয়ে এসেছে, আর রক্ষা নেই। মরতে যখন হবেই, তখন শুনি বউটা আমাকে কী বলতে চায়। খুব কষ্টে দুরু দুরু বুকে বউটার কাছে গেলাম। এবার হতাশ হতে হলো আমাকে। ঝোঁপের ধারে বিশাল একটা মান কঁচু গাছ। মান কঁচুর একটা পাতার উপর বিল থেকে প্রতিফলিত হালকা আলো এমনভাবে পড়েছে যে মনে হচ্ছে, একটা বউ ঘোমটা মাথায় বসে আছে। বাতাসে কাঁপছে পাতা, মনে হচ্ছে বউটা মাথা নাড়ছে। আরেকবার বাঁশঝাড় থেকে হঠাৎ লিকলিকে একটা হাত আমাকে ধরার জন্য বের হয়ে এসেছিল। চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হওয়ার আগে দেখি, ঝাঁড় থেকে একটা সরু বাঁশ বাতাসে হেলে পড়ছে বার বার। আমাদের প্রায় সবারই ভূত দেখার অভিজ্ঞতা এরকমই। অনেককেই বলতে শুনেছি, তারা ভূতের দেখা পেয়েছেন। ছুটে গেছি তাদের কাছে। কিন্তু কেউই ভূতের সঙ্গে আমাকে দেখা করিয়ে দিতে পারেন নি। আমার সঙ্গে দেখা করতে কেন জানি, কোনো ভূত-প্রেত রাজি হয়নি।

মুক্তখবর : আপনি একবার ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, অলৌকিক বলে কিছু নেই। সবই লৌকিক। কেউ আপনাকে অলৌকিক কিছু দেখাতে পারলে তাকে মোটা অংকের পুরস্কার দিবেন? কোনো সাড়া পেয়েছিলেন কী?
জুয়েল আইচ : আসলে বিষয়টা ঠিক ওরকম নয়। আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এই সুযোগে কিছু অতি ধুরন্ধর প্রকৃতির মানুষ নিজেদের অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে নানা কৌশলের মাধ্যমে সহজ-সরল মানুষকে প্রতারিত করছে। কেউ ফকির-দরবেশ সেজে মানুষ ঠকাচ্ছে। কেউ তাবিজ-কবজ বা মাজারের অলৌকিক ক্ষমতার কথা বলে বিপদাপন্ন মানুষদের ঠকিয়ে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। এ ধরনের অলৌকিক ক্ষমতার দাবি আগেও ছিল, এখনও আছে। দৈনিক পত্রিকার পাতায় এরকম বিজ্ঞাপনও প্রতিদিন চোখে পড়ে। আমি অসম্ভব কৌতুহল নিয়ে অলৌকিক ক্ষমতাধর অনেকের কাছে ছুটে গেছি। কিন্তু কারও মাঝেই অলৌকিকতার কিছু খুঁজে পাই নি। খুবই সাধারণ কিছু জাদুর কৌশল কেবল কয়েকজনকে ব্যবহার করতে দেখেছি। মানুষকে এদের সম্পর্কে সচেতন করার জন্যই এই ঘোষণা দিয়েছিলাম। এখনও বলছি, যদি কেউ এরকম অলৌকিক শক্তির অধিকারী কাউকে দেখাতে পারেন, আমি তাকে অবশ্যই পুরস্কৃত করবো।

মুক্তখবর: জাদুতেও কি অলৌকিক বলে কিছু নেই?
জুয়েল আইচ : না নেই।   জাদু এমন একটি শিল্প, যা পুরোপুরি বিজ্ঞান সম্মত। জাদু প্রদর্শনের মধ্যে আছে কিছু কৌশল। তন্ত্রমন্ত্র বা জাদুর কাঠি জাদু প্রদর্শনের অলংকার মাত্র। জাদুর প্রাণ হলো বিজ্ঞান। গান বা নাচ শেখার জন্য যেমন চর্চার দরকার, তেমনি জাদু দেখানোর জন্যও চর্চা দরকার। চর্চার মাধ্যমে যিনি যতো ভালো করে কৌশলগুলো রপ্ত করতে পারবেন, তিনি  ততো  বড় জাদুকর।

মুক্তখবর : আমাদের ‘ঈশ্বর’  লৌকিক নাকি অলৌকিক, আপনি কী ঈশ্বর বিশ্বাসী?
জুয়েল আইচ :  ‘ঈশ্বর’  লৌকিক নাকি অলৌকিক, এ নিয়া কথা বলার চেয়ে বরং ঈশ্বর বিশ্বাসের কথা বলি। বিশ্বাস সবসময় সত্য। যেখান থেকে অবিশ্বাস শুরু, মিথ্যার সূচনা সেখানেই। আমার ঈশ্বর বিশ্বাসের জায়গাটা অনেক বড়। প্রচলিত ঈশ্বর বিশ্বাসের সঙ্গে তা হয়তো নাও মিলতে পারে। আমাদের এই সৌরজগত লক্ষ কোটি ছায়াপথের মধ্যে অনু-পরমানুর সমান। এই বিশাল ইউনিভার্সের অতি ক্ষুদ্র এক গ্রহ হলো পৃথিবী। এই পৃথিবীর অতি নগন্য এক প্রাণী আমরা। আমাদের মেধা-বুদ্ধি-ধারনা খুব সীমিত। আমাদের চিন্তাশক্তিও খুব সীমাবদ্ধ। চারপাশের গন্ডির মধ্যে ঘুরপাক খায় আমাদের চিন্তা-চেতনা। তাই ঈশ্বরের অসীম পরিধি কল্পনা করা আমাদের সাধ্যের বাইরে।

মুক্তখবর : যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তার কতোটুকু পূরণ হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য?
জুয়েল আইচ : অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলাম। এই স্বপ্নে আবেগের পরিমানই ছিল বেশি, বাস্তবতা ছিল কম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই বাস্তবতার মুখোমুখি হই, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন হোঁচট খায়। মুক্তিযুদ্ধ করার সময় মনে হয় না কোনো মুক্তিযোদ্ধা কল্পনাও করেনি যে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চল্লিশ বছর পর এতোটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে। তবু এখনো আমাদের স্বপ্ন দেখতেই হবে। তাই স্বপ্ন দেখি, অবশ্যই একদিন দেশের রাজনীতিকরা সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা বুঁঝতে পারবেন। স্বপ্ন ছাড়া মানুষের জীবন অর্থহীন। স্বপ্নই মানুষের বেঁচে থাকার প্রেরণা। স্বপ্নই আমাদের এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে, আমরা বেঁচে আছি।

একনজরে আমাদের জুয়েল আইচ :-

পুরো নাম : জুয়েল আইচ
ডাক নাম : জুয়েল
স্ত্রী : বিপাশা আইচ (গৃহিনী ও জাদুশিল্পের সহযোগী)
সন্তান : একটি (কন্যা : খেয়া আইচ)
জন্মদিন : ১০ এপ্রিল
জন্মস্থান : পিরোজপুর
বিয়ে : ১৯৮৫
মঞ্চে প্রথম জাদু প্রদর্শনী : ১৯৭৩ সালে
ঢাকায় প্রথম জাদু প্রদর্শনী : ১৯৭৬ সালে
মিডিয়ায় প্রথম যাদু প্রদর্শন : ১৯৭৮ সালে
দেশ ভ্রমণ : যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি, জার্মানি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুর, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের সব কটি দেশ
প্রথম বিদেশ সফর : যুক্তরাষ্ট্র (১৯৮১ সালে)
প্রিয় যাদু শিল্পী : পিসি সরকার সিনিয়র ও ডেভিড কপারফিল্ড




Archives
Image
সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের প্লট ক্রোক
Image
ইভ্যালির রাসেলের ৩ মাসের কারাদণ্ড
Image
নিবন্ধন আবেদনে তিন প্রতীক এনসিপির, পেতে চায় ‘শাপলা’
Image
ইলেকট্রিক সিগারেটের চালান আটক বিমানবন্দরে
Image
বরিশালের পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শেখ পরিবারের নাম বাদ