অভাবের তাড়নায় রাজধানীর সড়কে নেমেছেন এক নারী
অটো চালানোকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন সাহিদা
বনিবনা না হওয়ায় বেশিদিন টেকেনি সংসার। অভাবের তাড়নায় রাজধানীর সড়কে নেমেছেন এক নারী। প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বেছে নেন অটোরিকশা চালকের পেশা। বাধা-বিপত্তি ও কটাক্ষের শিকার হলেও ধৈর্য ধরেছেন। পরিশ্রম করেই পরিবারের হাল ধরেছেন। দুই সন্তানকে স্কুলে পড়াচ্ছেন। সেই নারীর নাম সাহিদা বেগম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুনূর রহমান হৃদয়—
মামুনূর রহমান হৃদয় : এই পেশাকেই কেন বেছে নিয়েছেন?
সাহিদা বেগম : অন্য পেশার চেয়ে আমি এখানে বাড়তি রোজগার করতে পারবো। যেহেতু লেখাপড়া কম করেছি, তাই ভালো চাকরি তো কপালে জুটবে না। চাকরির বয়সও নেই। আর গার্মেন্টসে গেলে পর্যাপ্ত আয়ও হবে না। এছাড়াও আমার পরিবারের ভরণ-পোষণ, সময় দেওয়াটাও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। তাই অটো চালানোকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি।
মামুনূর রহমান হৃদয় : অটো চালানোর শুরুটা কীভাবে?
সাহিদা বেগম : আমি প্রথমে আমার এলাকার গ্যারেজে ঘুরে ঘুরে খোঁজ নিয়েছি অটো চালানো শেখার বিষয়ে। এরপর জানতে পারলাম, আমার প্রতিবেশী এক ভাই অটো চালান। তিনি আমার সংসারের টানাপোড়েনের গল্প শুনে অটো চালানো শেখাতে রাজি হন।
মামুনূর রহমান হৃদয় : শিখতে গিয়ে হয়রানি বা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?
সাহিদা বেগম : কখনো হয়রানির শিকার না হলেও বাধা ও কটাক্ষের শিকার হয়েছি। প্রথমে কেউ অটো চালানো শেখাতে রাজি হননি। নানা প্রতিবন্ধকতায় অটো চালানো শেখার পর ভাড়া গাড়ি খুঁজেছিলাম, তা-ও পাইনি। নারী দেখে প্রথমে কেউ গাড়ি ভাড়া দিতে রাজি হননি। তাই আমার কাছে কোনো নারী যদি এ ক্ষেত্রে সাহায্য চান, তাহলে আমি তার পাশে থাকবো।
মামুনূর রহমান হৃদয় : সারাদিন অটো চালিয়ে ঘরের কাজ সামলান কীভাবে?
সাহিদা বেগম : সারাদিন অটো চালিয়ে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরি। ঘরে ফিরে রান্না করতে খারাপ লাগে। রান্নাটা যদি কেউ করে দিতো, তাহলে বোধহয় ভালো হতো। আমার ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়ে। তাদের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে যাওয়ায় কষ্ট হলেও অবহেলা করার সুযোগ নেই।
মামুনূর রহমান হৃদয় : সমাজে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
সাহিদা বেগম : সমাজে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য বার্তা থাকবে, কারো কাছে হাত পেতে নয়; কাজ করে মাথা উঁচিয়ে এগিয়ে চলুন। আর কেউ যদি আমার কাছে অটো চালানো শিখতে চান, তাহলে আমি তাকে বিনা মূল্যে শেখাবো।
মামুনূর রহমান হৃদয় : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সাহিদা বেগম : অটো কেনার জন্য ঋণ নিয়েছিলাম, সেটি এখনো পরিশোধ হয়নি। সামনে ঋণ পরিশোধ হলে দর্জির দোকান দেওয়ার ইচ্ছা আছে। দর্জির কাজও আমি জানি। হাতে কিছু টাকা হলে দোকান নিয়ে বসবো। আপাতত এটাই ভবিষ্যৎ স্বপ্ন।
সূত্র : জাগো নিউজ
Post Views:
২৭৪
|