Current Bangladesh Time
মঙ্গলবার মে ২১, ২০২৪ ৩:৫৮ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » কাম ডাউন, কাম ডাউন, এরপর গুলি-বর্ণনা দিলেন সিনহা হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী সিফাত 
Thursday August 13, 2020 , 7:07 am
Print this E-mail this

না কোনো অস্ত্র ছিল না, আমাদের হাতে ট্রাইপড ছিলো; সম্ভবত এটা তারা ভুল বুঝতে পারে-সিফাত

কাম ডাউন, কাম ডাউন, এরপর গুলি-বর্ণনা দিলেন সিনহা হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী সিফাত


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : কক্সবাজারের শাপলাপুর চেকপোস্টে কী ঘটেছিল অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সাথে? সিনহার মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখেছেন, তার সফরসঙ্গী সিফাত। হত্যার সময় কি ঘটেছিলো সে বর্ণনা এবার উঠে এলো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিফাতের মুখে।সিফাত জানান, শামলাপুর চেকপোস্টে এপিবিএন ছেড়ে দিলেও কিছু দূর যাওয়ার পর ড্রাম ফেলে তাদের পথরোধ করে টেকনাফ থানা পুলিশ। সিফাতের দাবি, হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নেমেছিলেন সিনহা। গত ৩১ জুলাই কক্সবাজার শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্যদের তল্লাসি চৌকিতে গাড়ি থামান মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মো: রাশেদ খান। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা ছেড়ে দিলেও ড্রাম ফেলে পথ রোধ করে টেকনাফ থানা পুলিশ। সিনহা হত্যার ঘটনার বর্ণনায় শুরুটা এমনই ছিলো সিনহা হত্যার সাক্ষী সিফতের মুখে। সিফাত জানান, তথ্যচিত্রের জন্য ছবি ধারণ করতে বিকেলে পাহাড়ে ওঠেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা। তার সঙ্গী ছিলেন সিফাত। আটক হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদেও বলেছিলেন, পাহাড়ে সিনহার সঙ্গে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। সিফাত বলেন, না কোনো অস্ত্র ছিল না। সিফাত জানান, আমাদের হাতে ট্রাইপড ছিলো; সম্ভবত এটা তারা ভুল বুঝতে পারে। গাড়িতে নামার সময় আমাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিলো না। গাড়ি থেকে নামতেই গুলির শব্দ, তারপর মাটিতে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য। যেন কল্পনাকেও হার মানায় সেদিনের ঘটনা। সিফাত বলেন, উনি (সিনহা) নামার সময়ে দুই হাত উঁচু করে নামেন। এরপর আমি পিছনে চলে যাই। কিন্তু গাড়ির কারণে আমি আর কিছু দেখতে পারি নাই। যখন নামেন তখন বলেন, কাম ডাউন, কাম ডাউন – আওয়াজ শুনতে পাই। যে অফিসার বন্দুক তাক করেছিলেন (তিনি বলছিলেন)। এর ভিতরে গুলির শব্দ শুনি। পরে দেখি সিনহা সাহেব শুয়ে পড়েন; আমি ভাবছি; হয়-তো উনার শরীরে গুলি লাগেনি। ফাঁকা আওয়াজ হয়েছে। তারপর দেখি উনার শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সিফাতের দাবি, সিনহার ব্যক্তিগত অস্ত্রটিও ছিলো গাড়িতে, সিনহা নেমেছিলেন হাত উঁচু করেই। সেদিনের পুরো ঘটনার সাক্ষী সিফাত গত ১০ আগস্ট কক্সবাজার কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। যদিও পুরো ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরতে খানিকটা সময়ও চেয়েছেন সিনহার সঙ্গী সিফাত ও শিপ্রা। প্রসঙ্গত, দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া সিনহা মো: রাশেদ খান ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। আরো তিন সঙ্গীকে নিয়ে তিনি উঠেছিলেন নীলিমা রিসোর্টে। গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের কথা জানিয়ে সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। এই ঘটনায় পুলিশ মামলাও করে। তবে পুলিশের এই ভাষ্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিনিধি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে সিনহাকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে বুধবার কক্সবাজারের আদালতে মোট ৯ পুলিশকে আসামি করে মামলা করেন তার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আদালতের নির্দেশে বুধবার রাতেই মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত হয়। এই হত্যা মামলায় বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে ১ নম্বর এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন-এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মো: মোস্তফা। মামলার পর ওইদিন বিকালে টেকনাফ থানা থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে প্রত্যাহার করা হয়। পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ২০ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে পাঠানো হয় দুদিন আগেই। এ মামলায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, শামলাপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতসহ ৭ আসামির প্রত্যেককে র‌্যাব হেফাজতে সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে পলাতক ২ আসামি এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মো: মোস্তফাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পুলিশের দায়ের করা মামলার তিনজন সাক্ষীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে র‌্যাব। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) নুরুল আমিন, আয়াছ উদ্দিন ও নিজাম নামে তিনজন সাক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে উপস্থাপন করলে প্রত্যেকের সাত করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এজাহারে সিনহার বোন অভিযোগ করেন, ওসি প্রদীপের ফোনে পাওয়া নির্দেশে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই লিয়াকত আলী গুলি করেছিলেন সিনহাকে। এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ‘ইচ্ছাকৃত নরহত্যা’, ২০১ ধারায় আলামত নষ্ট ও মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি এবং ৩৪ ধারায় পরস্পর ‘সাধারণ অভিপ্রায়ে’ অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০২ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে (২১) মামলার প্রধান সাক্ষী করা হয়েছে। ঘটনার দিনই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, মাদক ও অস্ত্র আইনের মামলায় তাকেও আসামি করা হয়। সিনহা নিহতের ঘটনায় জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বুধবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের সমিতি রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া)। একই দিন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ কক্সবাজারে গিয়ে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, এই ঘটনায় যে এই ঘটনায় দায়ী হিসেবে যে বা যারা চিহ্নিত হবে, তারাই শাস্তি পাবে। এর দায় বাহিনীর উপর পড়বে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মঙ্গলবার সিনহার মা নাসিমা আখতারকে ফোন করে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাদের আরেক সঙ্গী শিপ্রা রাণী দেবনাথকে নিয়ে বিভ্রান্তি অবসানে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা। সোমবার (১০ আগস্ট) রাতে হঠাৎ একটি আবাসিক হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে কথা বলেন এ দুই শিক্ষার্থী।

সংবাদ সম্মেলনে সিফাত বলেন, মেজর সিনহা হত্যার সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করছে সারাদেশ। কারাগার থেকে বেরিয়ে সেই বিষয়টি অনুধাবন করলাম। তবে কিছু বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এতদিন জেলে ছিলাম তাই কিছুই জানতে পারিনি। এখন জেল থেকে বের হয়ে দেখছি প্রায় সব মিডিয়া আমাদের জন্য লিখেছে। আমরা কৃতজ্ঞ। সব সত্যি আমরা তুলে ধরব। সিফাত বলেন, কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে বের হওয়ার পর একটি নম্বরবিহীন গাড়িতে করে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে যে গুঞ্জন গণমাধ্যমে ছড়িয়েছে সেটি ঠিক নয়। ওই গাড়িটি আমাদের পারিবারিক গাড়ি ছিল। তার বিরুদ্ধে করা মামলায় ন্যায়বিচার পাবেন বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি। সুস্থ ও নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছেন জামিনে মুক্তি পাওয়া সাহেদুল ইসলাস সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ। শিপ্রা বলেন, প্লিজ, প্রে ফর আস। সিফাত ও আমি আপনাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাদের পাশে ছিলেন, পাশে থাকবেন। আপাতত এতটুকুই বলার আছে। আমরা প্রত্যেকটা কথা বলব। সিফাত সাংবাদিকদের বলেন, অনেক গণমাধ্যমে আমার পায়ে গুলি লেগেছে বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এটা সঠিক নয়। মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। আমার পায়ে গুলি লাগেনি। আশা করি সুষ্ঠু তদন্ত হবে। আমরা রাষ্ট্রের কাছে কৃতজ্ঞ।শিপ্রা ও সিফাত তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রয়েছেন। সোমবার দুপুরে সিফাত এবং রোববার শিপ্রা কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত ৩১ জুলাই রাতে সিনহা নিহতের ঘটনার পর পুলিশের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কক্সবাজার কারাগারে ছিলেন বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ। নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সঙ্গে কক্সবাজারে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিলেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নূর। পুলিশ সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মাদক দ্রব্য ও হত্যা মামলা এবং কক্সবাজারের রামু থানায় শিপ্রার বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য আইনে মামলা করে। এছাড়া তাহসিন রিফাত নূরকে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ রোডে টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পরিদর্শক লিয়াকত আলী, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ৬ আগস্ট বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপসহ সাত আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। মামলার শুনানিতে র্যাবের পক্ষ থেকে প্রত্যেক আসামির ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত লিয়াকত, প্রদীপ ও নন্দ দুলাল রক্ষিতের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি চারজনকে দুই দিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। চারজনকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আবারও ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে তদন্ত সংস্থা।




Archives
Image
বরিশালে অনলাইন জুয়াড়িদের দলনেতা গ্রেপ্তার!
Image
বরিশাল নগরীর নির্মাণাধীন ভবনের চাঁদাবাজি ঠেকাতে মাঠে পুলিশ
Image
বরিশাল শেবাচিমের সংকট কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করেছে : সচিব
Image
বরিশালে ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাঠে পুলিশ
Image
বরিশালসহ ৫ বিভাগে ৪৮ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি