|
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান
আই হ্যাভ আ প্ল্যান : তারেক রহমান
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : প্রখ্যাত আফ্রিকান-আমেরিকান মানবাধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’র প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আই হ্যাভ আ প্ল্যান, ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি (আমার একটি পরিকল্পনা আছে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য)। যদি দেশের মানুষের জন্য সেই প্ল্যানকে বাস্তবায়ন করতে হয়, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমাদের লাগবে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচলে ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়েতে’ বিএনপি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বেলা ১১টা ৪৪ মিনিটে ঢাকায় ফেরেন। পরে লাখো জনতাকে অভিবাদন জানাতে জানাতে মঞ্চে এসে পৌঁছান বিকেল পৌনে ৪টার দিকে। এরপর বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে মঞ্চে আসন নেন। পরবর্তীতে তাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখার আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তারেক রহমান বলেন, “মার্টিন লুথার কিংয়ের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে—আই হ্যাভ আ ড্রিম। আজ বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সকলের সামনে আমি বলতে চাই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হিসেবে আমি বলতে চাই—আই হ্যাভ আ প্ল্যান, ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি। আজ এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য যদি সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হয়, এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন, এই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তি যত মানুষ আছেন, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমাদের লাগবে। আপনারা যদি আমাদের সহযোগিতা করেন, ইনশাআল্লাহ—আই হ্যাভ আ প্ল্যান, আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, “প্রিয় বাংলাদেশ। উপস্থিত মুরুব্বিবর্গ, মঞ্চে উপস্থিত জাতীয় নেতৃবৃন্দ, আমার সামনে উপস্থিত প্রিয় ভাই ও বোনেরা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে যারা দেখছেন এই অনুষ্ঠান; প্রিয় ভাই-বোনেরা, প্রিয় মা-বোনেরা আসসালামু আলাইকুম।” “আজ প্রথমেই আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাজারো লক্ষ কোটি শুকরিয়া জানাতে চাই, রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে আজ আমি আমার মাতৃভূমিতে ফিরে আসতে পেরেছি আপনাদের দোয়ায়, আপনাদের মাঝে। প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল। ঠিক একইভাবে ৭৫-এ আবার ৭-ই নভেম্বর আধিপত্যবাদীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য সেদিন সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আধিপত্যবাদ থেকে দেশকে রক্ষা করা হয়েছিল। একইভাবে পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে এ দেশের জনগণ, এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ছিনিয়ে এনেছিল। কিন্তু তারপরও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। আমরা তারপর দেখেছি, ১৯৭১ সালে এ দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ—কৃষক, শ্রমিক, গৃহবধূ, নারী-পুরুষ, মাদ্রাসা ছাত্র—দলমত নির্বিশেষে সবাই এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল।” বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, “তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ চায় তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার পাবে। প্রিয় ভাই-বোনেরা, আজ আমাদের সময় এসেছে, সকলে মিলে দেশকে গড়ার। এই দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছে, এই দেশে একইভাবে সমতলের মানুষ আছে। এই দেশে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। আমরা চাই সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা, যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন। একটি নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশে একজন নারী, একজন পুরুষ, একজন শিশু—যেই হোক না কেন—নিরাপদে ঘর থেকে বের হলে নিরাপদে ইনশাআল্লাহ ঘরে ফিরে আসতে পারে।” তিনি বলেন, “এই দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, চার কোটিরও বেশি তরুণ প্রজন্মের সদস্য, ৫ কোটির মতো শিশু, ৪০ লক্ষের মতো প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে, কয়েক কোটি কৃষক-শ্রমিক রয়েছে। এই মানুষগুলোর একটা প্রত্যাশা আছে এই রাষ্ট্রের কাছে। এই মানুষগুলোর একটি আকাঙ্ক্ষা আছে এই দেশের কাছে। আজ আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হই, আজ আমরা যদি সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, তাহলে আমরা সেই লক্ষ-কোটি মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি, ইনশাআল্লাহ।” তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণ করে বলেন, “প্রিয় ভাই-বোনেরা, ’৭১ সালে আমাদের শহীদরা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, এইরকম একটি বাংলাদেশ গঠনের জন্য। বিগত ১৫ বছর স্বৈরাচারের আমলে শত শত হাজার হাজার মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছে, শুধু রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়, নিরীহ মানুষও প্রতিবাদ করতে গিয়ে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছে, জীবন দিয়েছে। ২০২৪ সাল মাত্র সেদিনের ঘটনা, আমরা দেখেছি কীভাবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের সদস্যরা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে দেশের এই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য।” “প্রিয় ভাই-বোনেরা মাত্র কয়েক দিন আগে এই বাংলাদেশের চব্বিশের আন্দোলনের প্রজন্মের এক সাহসী সদস্য ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে, ওসমান হাদি শহীদ হয়েছেন। প্রিয় ভাই-বোনেরা, ওসমান হাদি চেয়েছিল এই দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক, এই দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। এই দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক ফিরে পাক। আজ চব্বিশের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে, ওসমান হাদিসহ একাত্তরে যারা শহীদ হয়েছেন, বিগত স্বৈরাচারের সময়ে বিভিন্নভাবে খুন-গুমের শিকার হয়েছেন, সেই মানুষগুলোর রক্তের ঋণ যদি শোধ করতে হয়, আসুন আমরা আমাদের সেই প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যেখানে আমরা সকলে মিলে কাজ করব, যেখানে আমরা সকলে মিলে আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে গড়ে তুলব।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “বিভিন্ন আধিপত্যবাদী শক্তির গুপ্তচরেরা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, আমাদের ধৈর্যশীল হতে হবে। আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের যে সদস্যরা আছেন, আপনারাই আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন, দেশকে গড়ে তুলবেন। এই দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের সদস্যদের আজ গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে এই দেশকে আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি। শক্ত ভিত্তির ওপর গণতান্ত্রিক ভিত্তি, শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপরে যাতে দেশকে আমরা গড়ে তুলতে পারি।” তারেক রহমান বলেন, “প্রিয় ভাই-বোনেরা, আসুন, আজকে আমরা দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। আল্লাহর রহমত আমরা চাই। যে সকল জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই মঞ্চে আছেন, এই মঞ্চের বাইরে যে সকল জাতীয় আরও নেতৃবৃন্দ আছেন, আমরা সকলে মিলে এই দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। যে কোনো মূল্যে আমাদের এই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। যে কোনো উসকানির মুখে আমাদের ধীর, শান্ত থাকতে হবে। আমরা দেশে শান্তি চাই, আমরা দেশে শান্তি চাই, আমরা দেশে শান্তি চাই।” “আসুন, আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করি—হে রাব্বুল আলামিন, হে একমাত্র মালিক, হে একমাত্র পরওয়ার দিগার, হে একমাত্র রহমত দানকারী, হে একমাত্র সাহায্যকারী; আজ আপনি যদি আমাদের রহমত দেন, আমরা এই মানুষ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারবো। আজ যদি আল্লাহর রহমত এই দেশ এবং এই দেশের মানুষের পক্ষে থাকে, আল্লাহর সাহায্য আল্লাহর দয়া যদি এই দেশের মানুষের ওপরে এই দেশের ওপরে থাকে, আমরা আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।” তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আসুন, আমরা সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি যে, ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা আসবে, আমরা সবাই মিলে নবী করিমের (সা.) যে ন্যায়পরায়ণতা, সে ন্যায়পরায়ণতার আলোকে আমরা দেশ পরিচালনার চেষ্টা করবো।” “আপনারা জানেন, এখান থেকে আমি আমার দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে যাবো। এই একটি মানুষ, যে মানুষটি এ দেশের মাটি, এই দেশের মানুষকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবেসেছেন। আপনারা প্রত্যেকটি মানুষ সে সম্পর্কে অবগত আছেন। সন্তান হিসেবে আপনাদের কাছেই আমি চাইবো, আপনারা আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন। যাতে আল্লাহ ওনাকে তওফিক দেন, উনি যেন সুস্থ হতে পারেন। সন্তান হিসেবে আমার মন সেই হাসপাতালে আমার মায়ের বিছানার পাশে পড়ে আছে। সেই মানুষ যাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই মানুষগুলোকে আমি কোনোভাবেই ফেলে যেতে পারি না। তাই আজ হাসপাতালে যাওয়ার আগে আপনাদের প্রতিসহ সমগ্র বাংলাদেশে টেলিভিশনগুলোর মাধ্যমে যারা আমাকে দেখছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য দাঁড়িয়েছি আপনাদের সামনে।” তারেক রহমান বলেন, “আসুন, আমাদের আজকে নিশ্চিত করতে হবে, আমরা যে ধর্মের মানুষ হই, যে শ্রেণির মানুষ হই, আমরা যে রাজনৈতিক দলের সদস্য হই, অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই, যে কোনো মূল্যে আমাদের দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে যে কোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে। যে কোনো মূল্যে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে। শিশু হোক, নারী হোক, পুরুষ হোক, যে কোনো বয়স, যে কোনো শ্রেণি, যে কোনো পেশা, যে কোনো ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকতে পারে, এই হোক আমাদের চাওয়া।” বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “প্রিয় ভাই-বোনেরা, আসুন সবাই মিলে আজ আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই-সবাই মিলে করবো কাজ, গড়বো মোদের বাংলাদেশ। যে কোনো মূল্যে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার আহ্বান জানিয়ে, যে কোনো বিশৃঙ্খলাকে ধৈর্যসহকারে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।”
Post Views: ০
|
|