|
ঐতিহ্যবাহী প্যাডেলচালিত যাত্রীবাহী নৌযান
অবশেষে ‘পিএস মাহসুদ’ এর যাত্রা শুরু
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : রাষ্ট্রীয় নৌ–বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসির ঐতিহ্যবাহী প্যাডেলচালিত যাত্রীবাহী নৌযান ‘পিএস মাহসুদ’ অবশেষে ৩২ জন যাত্রী নিয়ে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় পর্যটক সার্ভিস হিসেবে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। ৯৬০ যাত্রীবহন সক্ষম এই জাহাজে প্রথম শ্রেণীর ১২ কক্ষে ২৪ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীর ১০ কক্ষের ২০ শয্যার মধ্যে ৪ জন এবং ডেক শ্রেণীতে মাত্র ৪ জন যাত্রী ভ্রমণ করছেন বলে জানা গেছে।১৯৩৮ সালে কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্সে নির্মিত ‘পিএস মাহসুদ’সহ অন্তত ২০টি প্যাডেলচালিত যাত্রীবাহী নৌযান দেশভাগের পর পাকিস্তান রিভার স্টিমার্সের অধীনে যায়। স্বাধীনতার পরে প্রতিষ্ঠানটি বিআইডব্লিউটিসির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মূলত এসব নৌযান কয়লা–চালিত বাষ্পীয় ইঞ্জিনে চললেও স্বাধীনতার পর বেশ কয়েকটিতে ফার্নেস অয়েলচালিত ব্যবস্থায় রূপান্তর করা হয়।

পরে ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে বেলজিয়ান সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পিএস মাহসুদ, পিএস অস্ট্রিচ ও পিএস লেপচায় এবিসি মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ হাইড্রোলিক গিয়ারের কারণে মাত্র তিন হাজার ঘণ্টা চলার পরই তিনটি নৌযানই বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৪–৯৫ অর্থবছরে সবগুলো নৌযানে হাইড্রোলিক গিয়ারের পরিবর্তে মেকানিক্যাল গিয়ার সংযোজন করে পুনরায় চালু করা হয়। ২০০২ সালে পিএস টার্ন জাহাজেও এবিসি ইঞ্জিন বসানো হয়। দীর্ঘ অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতির কারণে ২০২০ সাল নাগাদ পিএস মাহসুদসহ সব প্যাডেলচালিত জাহাজই সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। ইতিহাসবিদদের মতে, এসব নৌযান সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে ইউনেস্কোর মাধ্যমে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণার সুযোগ রয়েছে। পিএস মাহসুদ ২১ নভেম্বর থেকে ঢাকা–চাঁদপুর–বরিশাল রুটে পর্যটক সার্ভিস হিসেবে চলার কথা থাকলেও পরে বাণিজ্যিকভাবে ২৮ নভেম্বর যাত্রার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বরিশাল বন্দরে জাহাজ ভেড়ানোর মতো কোনো ঘাট প্রস্তুত না থাকায় প্রথম দিনে খাদ্য বিভাগের সিএসডি সংলগ্ন ৩০ গোডাউন ঘাটে জাহাজটি ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বরিশাল নৌবন্দরে বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএর সমন্বয়ের অভাবে ৬টি পন্টুন থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রথম ট্রিপেই যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাদ্য বিভাগের গোডাউন ঘাটে কোনো যানবাহন না থাকায় যাত্রীদের নেমে চলাচল করতেও সমস্যা হবে। বিআইডব্লিউটিসি নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী প্রথম শ্রেণী: ২,৬০০ টাক, দ্বিতীয় শ্রেণী: ১,৬৫০ টাকা, ডেক শ্রেণী: ৬০০ টাকা। পিএস মাহসুদ প্রতি শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা এবং শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বরিশাল থেকে ছেড়ে যাবে।বিআইডব্লিউটিসির অধীনে থাকা চারটি নৌযানের মধ্যে ‘পিএস অস্ট্রিচ’ বিনা দরপত্রে বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার পর ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়। ইজারাদার জাহাজটির ওপর কাঠামো ভেঙে ফেলে এবং নির্ধারিত ভাড়াও পরিশোধ করেনি। পরে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ নিয়ে জাহাজটি উদ্ধার করতে হয়। আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও জাহাজটি আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এমনকি পূর্বের ইজারাদারও পুনরায় ইজারা নিতে তদবির করছেন। তবে নৌপরিবহন উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার সামনে ঘোষণা করেছেন ‘পিএস অস্ট্রিচ’সহ সব প্যাডেলচালিত নৌযানই ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে।
Post Views: ০
|
|