Current Bangladesh Time
শনিবার জুলাই ১২, ২০২৫ ৮:০২ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » খুনের পর লাশের ওপর লাফায় ঘাতকরা 
Friday July 11, 2025 , 6:31 pm
Print this E-mail this

রক্তাক্ত লাশের ওপর যা হয়েছে, সেটি অবর্ণনীয়

খুনের পর লাশের ওপর লাফায় ঘাতকরা


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের পাশে সোহাগ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয় গত বুধবার (৯ জুলাই)।  মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর হত্যাকারীরা লাশের ওপরে লাফায়। হত্যাকাণ্ডের এই বীভৎসতা দেখা গেছে সিসিটিভি ফুটেজেও। ঘটনার দিন বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা। মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটক। সামনে মানুষের জটলা। পাশ দিয়ে চলছে যানবাহন। এক ব্যক্তির প্রায় বস্ত্রহীন রক্তাক্ত দেহ ফটকের ভেতর থেকে টেনে বের করছে দুই তরুণ।  কালো প্যান্ট পরা খালি গায়ের এক তরুণ তার গালে চড় মারছে। কালো গেঞ্জি পরা আরেকজন এসে ওই ব্যক্তির বুকের ওপর লাফাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে একই কাজ করছে। একপর্যায়ে আরেকজন এসে লাশের মাথায় লাথি মারছে।  ব্যস্ত সড়কে অনেক মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটছে। লোকজন উৎসাহ নিয়ে দেখছে। কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতায় তারাও হতবিহ্বল। কেউ এগিয়ে আসেনি।

যা বলছে পরিবার

সেদিন দুপুরের দিকে সোহাগকে ডেকে নিয়ে যায় পুরান ঢাকার পূর্বপরিচিত কয়েক তরুণ। সন্ধ্যায় তাকে হত্যা করা হয়। সোহাগ পুরোনো তামার তার ও অ্যালুমিনিয়াম শিটসহ ভাঙারি জিনিসের ব্যবসা করতেন।  পরিবার জানায়, সোহাগ একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ১১ বছর বয়সী ছেলে সোহান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, স্থানীয় মহিনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আশপাশে অনেক লোক থাকলেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার জানান, কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন সোহাগ। তিনি অনেক বছর ধরে ভাঙারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আগে তিনি পলাশ নামে একজনের অধীনে কাজ করতেন। তিনি ভাঙারি এনে ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। তিনি জানান, চার-পাঁচ বছর আগে সোহাগ আলাদা ব্যবসা শুরু করেন। অনেক পরিশ্রমে তিনি সচ্ছলতার মুখ দেখেন। অভিযুক্ত মহিনসহ বেশ কয়েকজন তার বন্ধুস্থানীয়। মাঝেমধ্যে বাসায় যেতেন, খাওয়া-দাওয়া করতেন। সর্বশেষ কিছুদিন ধরে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মহিন। তার প্রস্তাবে সোহাগ রাজি হননি। এ নিয়ে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। হত্যার আগের দিন তার গুদামে গুলি চালানো হয়। বুধবার দুপুরে মীমাংসা করার কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেন মহিন। মিটফোর্ড এলাকার রজনী বোস লেনে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম সোহানা মেটাল।

প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয়রা যা বলছেন  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোহাগকে প্রথমে মারধর করেন মহিনরা। মারতে মারতে মিটফোর্ড হাসপাতালের ভেতরে নেওয়া হয়। সোহাগ বাঁচার অনেক চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পুলিশকে ফোন করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মহিনসহ অন্যরা সোহাগকে ওই এলাকার ভাঙারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়। বিনিময়ে তাদের লাভের একটি অংশ দেওয়ার কথা ছিল। টাকার অঙ্ক বড় দেখে তারা ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে। সেখান থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। আর

১৯ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা

সোহাগ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিনের কাছে পাওয়া গেছে একটি পিস্তল। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজনসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার বাদী নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম।

কী আছে এজাহারে

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সোহাগ দীর্ঘদিন ওই এলাকায় ব্যবসা করায় ব্যবসায়িক বিভিন্ন বিষয়সহ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আসামিদের সঙ্গে তার বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে তারা সোহাগের গুদাম তালাবদ্ধ করে রেখেছিল। সেই সঙ্গে তাকে এলাকাছাড়া করতে নানারকম ভয় দেখিয়ে আসছিল। পরে বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সোহাগের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে। তাকে মারধর করতে করতে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর ফটকের ভেতরে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে রড, লাঠি, সিমেন্টের ব্লক বা ইট দিয়ে আঘাত করে। মারতে মারতে তাকে বিবস্ত্র করে ফেলে। এক পর্যায়ে সোহাগ নিস্তেজ হয়ে ড্রেনের পাশে লুটিয়ে পড়েন। তখন তার নিথর দেহ টেনে হাসপাতালের সামনের রাস্তায় নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মহিন ও রবিন ছাড়া অন্য আসামিদের মধ্যে নাম রয়েছে, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদারের।

 দলীয় নেতার বক্তব্য, কী বলছে পুলিশ 

পুরান ঢাকার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল বারেক বলেন, নিহত সোহাগ এবং হত্যায় জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার মহিন আগে যুবদল করতেন শুনেছি। তবে তাদের ভালোভাবে চিনি না। তারা দলীয় কোনো কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন না।

কী বলছে পুলিশ

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, এমন বীভৎসতা আগে দেখিনি। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। তরুণদের একটা অংশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সমাজে শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় না থাকলে বিপদ আরও বাড়বে। রক্তাক্ত লাশের ওপর যা হয়েছে, সেটি অবর্ণনীয়। এই আচরণ চিন্তার বাইরে।




Archives
Image
খুনের পর লাশের ওপর লাফায় ঘাতকরা
Image
খুলনায় বাসার সামনে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা
Image
বরিশাল ক্যাডেট কলেজের সব পরীক্ষার্থী পেল জিপিএ-৫
Image
নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ বলার নির্দেশনা বাতিল
Image
বিএনপির জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে : মির্জা ফখরুল