|
ইস্কাবেজ আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি-বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক
পানিবাহিত চর্মরোগ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বরিশালে
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : পানিবাহিত চর্মরোগ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বরিশালে। নগরীর বস্তি এলাকাগুলোতে ঘরে ঘরে ছড়িয়েছে এই রোগ। শুধু তাই নয় আবাসিক এলাকা গুলোতেও ছড়াচ্ছে এই রোগ। নিচু এলাকাগুলোতে বিভিন্ন সময় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পানির দূষণে এ রোগ ছড়াচ্ছে বলে দাবি করছে বিসিসি কর্তৃপক্ষ। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০% হলো শিশু, নারী ও বৃদ্ধ। চর্ম বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চলতি গরমে পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার শংকা রয়েছে। নগরীর ৫ নং পলাশপুর বস্তির জনসংখ্যা ৬ হাজার ১৪৯ জন। তবে গত একমাসে এখানে ৩ হাজার ৭৮৮ জন ফাংগাস জাতীয় চুলকানী রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এখানকার সবাই খালের ময়লা পানিতে গোসল, কাপড় ও বাসন ধোয়ার কাজ করে থাকেন। এলাকাটি নিচু হওয়ায় বর্ষা ও জোয়ারে পানিতে জলাবদ্ধতা যেন তাদের সঙ্গী। তাদের শরীরের অস্থির জীবন যাপনের বর্ননা দিয়েছেন আক্রান্তরা। চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীরা বলেন, কোন ঔষুধে কাজ হচ্ছে না শরীরে। কবির নামে এক চর্মরোগী বলেন, আমাদের এখানে আগে এ রোগ ছিলো না। তবে রোগটি ছড়িয়েছে অল্প দিন হয়। প্রথমে দানা হয়, পরে চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে দানা থেকে পানি বের হয়। তারপর এটি সারা শরীরে ছড়িয়ে গড়ে। অনেক ওষুধ খেয়েছি কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। রোগাক্রান্তদের সারা শরীরে নিম পাতা, বরইপাতা ও কাচা হলুদ মাখিয়ে রাখছি। খালের পানি দূষিত বলে এটা হচ্ছে তাদের দাবি। কেডিসি বস্তির বাসিন্দা শেফালী বেগম বলেন, শরীর চুলকানোর কারনে সারা রাত পারিনি ঘুমাতে। অনেক ওষুধ খেয়েছি কোন কাজ হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে শরীরে কাচা হলুদ ও নিমপাতা মেখে দিয়েছি। আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষেরই এই অবস্থা। মোহাম্মাদপুর এলাকার দিন খেটে খাওয়া খান রিয়াজ বলেন, হঠাৎ আমার দুই ছেলের শরীরে বিচি বিচি উঠে। পরে তারা চুলকাতে চুলকাতে শরীর থেকে রক্ত বের করে ফেলে। পরে শের-ই-বাংলা মেডিকেলের চর্ম ডাক্তার দেখালে তিনি বলেন দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে এই রোগ দেখা দিয়েছে তাদের শরীরে। ডাক্তার আরো বলেন, প্রথমে দূষিত পানি দূর করতে হবে এবং ভালো পানি ব্যবহার করতে হবে। ঔষুধ লিখে দিলাম আশা করি কমে যাবে। একই অবস্থা নগরীর স্টেডিয়াম কলোনী, নামার চর, ভাটার খাল, শিশু পার্ক ও বিডিএস বস্তির। নগরীর ১৮টি বস্তির সবগুলোতেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এসব বস্তির শতকরা ৮০ ভাগ শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা এই চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: রেজওয়ান কায়সার বলেন, আগেও আমাদের কাছে এমন রোগী আসতো কিন্তু তার সংখ্যা ছিলো অনেকটা কম। তবে গত কয়েকমাস থেকে চর্ম রোগী আসছে তিনগুন। আমরা ভয় পাচ্ছি আসছে গরমে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এই রোগীর সংখ্যা। তখন এদের কিভাবে ম্যানেজ করা হবে এটাও চিন্তার বিষয়। শুধু ঔষুধ নয় এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে কিছু নিয়ম মানতে হয় আক্রান্তদের। বেশিরভাগ রোগী তা মানে না। বেশিরভাগ রোগী ওষুধ খাবার পর আরাম বোধ করলে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে। শুধু রোগী হয় এর সাথে যারা সংশ্লিষ্ট আছেন তাদেরও আরো সতর্ক হতে হবে। বরিশাল সিটি এলাকার বস্তির সীমানা পেরিয়ে এই রোগ ক্রমেই অন্য আবাসিক এলাকাগুলোতেও সংক্রামিত হচ্ছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এখনো কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তারা এটিকে পানি ও ড্রেনেজ সমস্যায় সৃষ্ট বলে দাবী করছে। বিসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খন্দকার মঞ্জুরুল ইমাম বলেন, এইসব এলাকায় এ রোগ ছড়ানোর অন্যতম কারন পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং দূষিত পানি প্রবাহ। আমরা এ সমস্যা সমাধানে পানি পরীক্ষাসহ অন্য কাজ শুরু করছি। বেশিরভাগ বস্তিতে স্বাদু পানি এবং ড্রেনেজ সমস্যা রয়েছে। এসব স্থানে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের যাতে ব্যবস্থা হয় আমরা সে চেষ্টা করছি। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের চেষ্টাও আমরা করছি। আক্রান্তরা যাতে স্বাস্থ্যগত সুবিধা পায় তার জন্য আমরা বিভিন্ন এনজিও’র সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, অন্য সব বছরের চেয়ে এবছর ইস্কাবেজ আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। জনবহুল এলাকায় এ রোগ বেশি ছড়াচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় আমরা এ রোগে আক্রান্তদের সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে এক্ষেত্রে রোগীদের চিকিৎসকের দেওয়া সব উপদেশ মেনে চলতে হবে। রাখতে হবে পরিচ্ছন্নতা বজায়।
Post Views: ০
|
|