Current Bangladesh Time
শুক্রবার মে ১০, ২০২৪ ৭:০০ পূর্বাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » হারিয়ে যেতে বসেছে বরিশালের ‘মাসিমা’র ঐতিহ্য 
Saturday May 21, 2022 , 6:25 pm
Print this E-mail this

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী কমলা রানী ঘোষ (মাসিমা)

হারিয়ে যেতে বসেছে বরিশালের ‘মাসিমা’র ঐতিহ্য


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বলার ভাষা হারিয়ে ফেললেও না বলে, না লিখে পারা যায় না। তাইতো একটু লিখতে হচ্ছে, বরিশালের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রদূত বীর কন্যা, বরিশালের নারী নেত্রী কমলা রানী ঘোষের কথা। যিনি ছিলেন বরিশালের মনোরমা (মাসিমার) উত্তরসূরি। দেশ আজ স্বাধীন, স্বাধীন দেশের মানুষ আমরা, কে দেশ স্বাধীন করল কারা স্বাধীন কারল, কীভাবে দেশ স্বাধীন হলো, কারা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ছিল, কারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করল, তাদেরকে আমরা কতটুকু স্মরণে এবং মনে রাখতে পেরেছি। আজ আমরা নিজেরা নিজেদেরকে নিয়ে ব্যাস্ত, এই ব্যাস্ততার কারণে আমরা ভুলে গেছি যাদের অবদানে এই দেশ, সে দেশের নেতা ও নেত্রীদের। স্বনামধন্য বিভাগ বরিশাল বিভাগে রয়েছে স্বনামধন্য ব্যক্তিও। তাদেরই একজন বরিশালের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী কমলা রানী ঘোষ (মাসিমা)। জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৬ সালে বাকেরগঞ্জে। ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন বরিশাল সদর গার্লস থেকে। ৭ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় নারীনেত্রী  ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৩ সালে মাতৃমন্দির নামক একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু এই কর্মজীবন মাসিমাকে একটুও সমাজসেবা, বিভিন্ন আন্দোলন থেকে অবসর নিতে দেয়নি, বরং ছুটে চলেছেন নিজের গন্তব্যর দিকে। ওই বছরই ফকির বাড়ি রোডে বৃটিশদের গরুর গাড়ি থেকে চাল নামিয়ে দুস্থ ও অসহায় মানুষদের মাঝে বিতরণ করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ সব আন্দোলনেই নিজের জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেছেন। ১৯৭১ সালে তিনি ভারত চলে যান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য এবং সল্ট লেক শরণার্থী ক্যাম্পে সংগঠক হিসেবে যোগদান করেন। সহপাঠীদের নিয়ে সংগঠনের প্রেরিত কাপড় দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রের হাজার হাজার পতাকা তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হস্তান্তর করেন। স্বাধীনতার পর যখন দেশে ফিরে এসে বরিশাল জেলা মহিলা কমিউনিস্টের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শুধু কমিউনিস্ট না ছিলেন বরং নিজের অর্থায়নে দিয়েছেন অস্যংখ মেয়েদের বিবাহ খরচ, দিয়েছেন লেখাপড়ার খরচও। ২০০৮ সালে আন্তজাতিক নারী দিবসে অশ্বিনী কুমার টাউন হলে তৎকালীন ডিসি সন্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন। পরের বছর সদর গার্লসের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে নারী ও শিক্ষা আন্দোলনের জন্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী  দীপু মনি সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন। ফকির বাড়ি রোডে মাসিমার বাড়ির (স্বামীর বাড়ি) নাম মাতৃকুটির, ১৯৭৫ র পর থেকে প্রায় ২৫ বছর এই বাড়িটি ছিল আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নির্বাচনী ও অফিস কার্যালয়। যার কারনে শত শত বোমা ও ইট-পাটকেলের আগাত সহ্য করতে হয়েছে মাসিমার পরিবারকে। হুমকী খেতে হয়েছে জীবন নাশের, স্বাধীনতার সময়কার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের বর্ননা না হয় নাইবা দিলাম। মানুষের হুমকি-ধামকী উপেক্ষা করেও নিজ অর্থায়নে চা-বিস্কিট খাইয়ে সতেজ রাখতেন অফিসে যাওয়া নেতাকর্মীদের। এদের ভিতরে অন্যতম ছিলেন সাবেক বরিশালের জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক প্যানেল মেয়র নিজামুল ইসলাম নিজাম, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আদনান হোসেন অনি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিষ্ণুপদ মুখার্জী। কিন্তু দুঃখের কথা হল ১৯৯৬ র পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অফিসটি স্থানারিত হয়। তারপর থেকে আর নজর নেই দুর্দিনের দিনে উপকার করা আওয়ামী অফিসটির। অফিসটির দিকে তাকালে মনে হয়, জরাজীর্ণভাবে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে ভবনটি। কিন্তু দাড়ানোটাও শক্ত না, যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়ে যেতে পারে। অফিস ঘরটির দিকে তাকালে মনে হয় এত জরাজীর্ণ এবং এত পুরোনো ঘর বরিশালের কোথাও আছো কিনা তা হয়তোবা খুঁজে দেখা লাগবে। মাসিমার ৬ সন্তান, ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে, ৪ ছেলের ৩ ছেলেই মুক্তিযোদ্ধা, আর এক ছেলে সক্রিয় আওয়ামী লীগ কর্মী, মেয়ে মায়া রানী ঘোষ বাংলাদেশ বেতার ও মুক্তিযোদ্ধাকালীন আকাশ বানীর সংবাদ পাঠিকা ছিলেন। তার ছবিটি সংরক্ষণ করে সন্মানের সহিত রাখা হয়েছে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরে।মাসিমার রেখে যাওয়া উত্তরসুরীদের দাবি, মৃত্যুর আগে যদি তাদের মায়ের অথাৎ আওয়ামী লীগের দুর্দিনের অফিসটি যদি সংস্কার করে নতুন কোন রুপ দেয়া হয় তাহলে  হয়তো আমার মা অর্র্থাৎ মাসিমার আত্নায় শান্তি পেত। তাই তাদের দাবি, বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বরিশালের সিটি মেয়র, জেলা প্রশাষকসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দর কাছে যাতে অচিরেই পুরানো জরাজীর্ণ অফিস ঘরটিকে নতুন রুপ দেয়া যায়। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. তালুকদার মো: ইউনুস জানান, আসলে ওখানে যে আওয়ামী লীগের অফিস ছিল কিনা, সে বিষয়ে আমি অবগত নেই। মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদার জানান, যেহেতু মাসিমা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ছিল, আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, তার ঘরটা যেভাবে জরাজীর্ণ এবং ভাঙ্গা তা সংষ্করে সমাজের বিত্তবানদের উচিত এ বিষয়ে এগিয়ে আসা। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দায়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাকে অফিসে না পাওয়ায় কথা হয় ভারপ্রাপ্ত এনডিসি সুব্রত বিশ্বাস দাসের সঙ্গে। তিনি জানান, আসলে ডিসি স্যার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এই বিষয়ে আমি কোন বক্তব্য দিতে পারবো না।




Archives
Image
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা : আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের যাবজ্জীবন
Image
এবার পুলিশের দ্বারস্থ হলেন চিত্রনায়িকা বুবলী
Image
রাজধানীতে মিলল ‘পুনর্জন্ম’র প্রযোজক রুহানের ঝুলন্ত মরদেহ
Image
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় আজ
Image
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বরিশাল সদরে ভোট সম্পন্ন