|
শেবাচিম পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী এক অভিভাবক
বরিশাল শেবাচিম’র চিকিৎসক রোগী পাঠান প্রাইভেট চেম্বারে
সৈয়দ মেহেদী হাসান, অতিথি প্রতিবেদক : ‘সরকারি হাসপাতালে অপারেশন করালে রোগী মারা যেতে পারে। এছাড়া সরকারি এই হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষা মানসম্মত নয়। সুচিকিৎসার জন্য বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা ও অপারেশন করাতে হবে।’ এমন কথা বলে রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক একেএম মিজানুর রহমান।
এ ঘটনায় পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী এক অভিভাবক। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. নাজমুল হককে প্রধান করে একটি তদন্ত বোর্ড গঠন দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্তপ্রধান করোনা আক্রান্ত হওয়ায় প্রতিবেদন পেতে দেরি হচ্ছে। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত চিকিৎসক দায়ী হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনাটি ঘটেছে চলতি বছরের ২২ আগস্ট। তবে শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) জানাজানি হয়। ভুক্তভোগী অভিভাবক রাসেল হোসেন ওই লিখিত অভিযোগ দেন। তিনি সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বেলতলা শিকদার বাড়ির এনায়েত হোসেনের ছেলে। অভিভাবক রাসেল বলেন, ১৬ আগস্ট আমার ৯ বছরের অসুস্থ মেয়ে শুকরিয়াকে চিকিৎসার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। তাকে অপারেশনের জন্য শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। তিনি আরও বলেন, শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ডা. মিজানুর রহমান ১৫ দিন আগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করা মেয়ের শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন ও ১৬ আগস্ট শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা পরীক্ষার প্রতিবেদন দেখে বলেন, ‘এই রিপোর্ট চলবে না।’ রাসেল হোসেন বলেন, তিনি (চিকিৎসক একেএম মিজানুর রহমান) হাসপাতালের সামনের আবিদ ইসলামিয়া ডায়গনস্টিক ল্যাব থেকে টেস্ট করিয়ে আনতে বলেন। অন্যথায় সুচিকিৎসা মিলবে না বলে জানান। ডা. মিজানুর রহমানের নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করানোর পর তিনি জানান, ‘শিশু শুকরিয়ার পেটের নাড়িতে প্যাঁচ লেগেছে। রোগীকে জরুরি অপারেশন করাতে হবে। অন্যথায় রোগী বাঁচবে না।’ শুকরিয়ার বাবা রাসেল ডা. মিজানুর রহমানের বরাত দিয়ে বলেন, শুকরিয়ার পেটের নাড়ির প্যাঁচের অপারেশন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হবে না। এখানে অপারেশন করার পর রোগী বাঁচবে কি না তার নিশ্চতয়তা নেই। এজন্য হেমায়েত উদ্দিন ডায়াবেটিক হাসপাতালে অপারেশন করাতে বলেন। এতে খরচ হবে ৩০ হাজার। এছাড়া থাকা-খাওয়ার খরচ আলাদা। পরে ডাক্তারের কথামতো বাধ্য হয়ে হেমায়েত উদ্দিন ডায়াবেটিক হাসপাতালে মেয়ের অপারেশন করান বলে জানান তিনি। শুকরিয়ার বাবা বলেন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের এমন আচরণে আমি হতবাক। কম খরচে ভালো সেবা পাওয়ার আশায় সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে চিকিৎসক আশ্বস্ত করার পরিবর্তে সন্তান (রোগী) মারা যাওয়ার ভয় দেখান। চিকিৎসক একেএম মিজানুর রহমান জানান, আবিদ ইসলামিয়া ডায়গনস্টিক ল্যাবের রিপোর্ট ভালো তাই সেখানে পরীক্ষা করাতে বলেছিলাম। আমি নিজেও সেখানে পরীক্ষা করাই। এমারজেন্সি রোগীর অপারেশন দরকার হলে অনেক সময় শিডিউল না থাকায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসক আরও বলেন, তাই হেমায়েত উদ্দিন ডায়াবেটিক হাসপতালে অপারেশন করার জন্য বলেছি। সেখানে আমি অপারেশন করি। মেডিকেলে শিশু সার্জারির জন্য সপ্তাহে একদিন অপারেশন করা হয়। আবার সকাল ৮টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সিনিয়র চিকিৎসকরা থাকেন। এরপর যারা থাকেন তারা ইন্টার্ন। তখন তো অপারেশন বন্ধ থাকে। আবার বিকেলে অ্যানেসথেসিয়া করার ডাক্তার থাকে মাত্র একজন। সেই একজনকেই গাইনি, অর্থপেডিক, সার্জারি সব বিভাগ দেখতে হয়। রুটিন অপারেশনের বাইরে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন করার সুযোগ থাকে না। এজন্য প্রাইভেটে অপারেশন করার জন্য বলেছি বলে জানান তিনি।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট
Post Views:
৩৯৫
|
|