প্রচ্ছদ » স্লাইডার নিউজ » সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন মনিরুজ্জামান লিটন
Monday August 12, 2019 , 1:11 pm
সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন মনিরুজ্জামান লিটন
সুব্রত বিশ্বাস : যথাযথ মর্যাদায় সারা দেশব্যাপী ত্যাগ ও কুরবানির মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে আজ পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। অথচ মহান ত্যাগের এই দিনে আজ বেলা ১১.২০ ঘটিকায় মহা আত্মত্যাগ করে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন, জাদুশিল্পী মনিরুজ্জামান লিটন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এ যেন পিতৃ স্নেহের কাছে, মরনের পরাজয়!
মনিরুজ্জামান লিটন
উল্লেখ্য, গত ৫/৮/১৯ তারিখ, ভোর রাত। এডিস মশার ভয়ে জানালা-দরজা বন্ধ। ঢাকার পান্থপথ রোডস্থ নিজস্ব ফ্লাটের ২য় তলায় মনিরুজ্জামান লিটন ও তাঁর পরিবারের সবাই গভীর নিদ্রায় মগ্ন। হঠাৎ অাগুন!! জাগ্রত হয়ে যায় লিটন। দ্রুত ৮ মাসের ছেলে সন্তান লাবিন ও ৯ বছরের অাদরের মেয়েটিকে অাঁকড়ে ধরে তাদের মাকেসহ ঘরের বাহিরে নিয়ে অাসেন লিটন। কিন্তু ততক্ষণে বাবা নামক প্রাণীটি অাগুনের তাপে খুবই খারাপ পরিণতির শিকার হন। এরই নাম ত্যাগ বা বিসর্জন।
লিটন ও তাঁর পরিবার
স্ত্রী, সন্তানদের নিরাপদে ফিরিয়ে অানতে বাবা অনিশ্চয়তার এক কঠিন জগতে পা বাড়িয়ে রেখেছিলেন। বাবারা হয়ত এমনি-ই হয়। বাবা তাঁর নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন। কেউ বলেন এসি ব্লাস্ট, কেউ বলেন গ্যাসের চুলা থেকে, আবার কেউ বলেন বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই অাগুনের সূত্রপাত। ৯ মাস বয়সী লিবানের ঝলসে যাওয়ার দৃশ্য দেখার মত নয়। সে শুধুই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ৭ বছরের আদরের মেয়েটির অবস্থাও ঝুঁকি মুক্ত নয়। ওদের মাও মারাত্মক অাহত। অার বাবা, সেতো ৭৫% ঝলসানো। শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়াতে অার কোন কথাই বলতে পারছিলেন না লিটন।
সম্প্রতি, লিটন ও তাঁর পরিবারকে দেখতেও এসেছিলেন, স্হানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচীব এবং জাদুশিল্পী কল্যাণ পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা জনাব মোহাম্মদ নাছিরউদ্দীন। তিনি ভীকটিম পরিবারের চিকিৎসার খরচ বাবদ ব্যক্তিগতভাবে নগদ ৫৫,০০০/- টাকা মনিরুজ্জামান লিটনের স্ত্রীর হাতে তুলেও দিয়েছিলেন। এর আগে মোশাররফ হোসেন নগদ ৫০০০/- এবং নূর মোশাররফ ৬৬৪০/- টাকা প্রদান করেন। মাননীয় সচীব প্রয়োজনে অারো সহযোগিতা করবেন বলেও দৃঢ় অাশ্বাস দিয়েছিলেন। যদি সম্ভব হয় সরকারীভাবে কোন অনুদানের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেই লক্ষ্যে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছিলেন। ঢাকাস্থ বিভিন্ন জাদু সংগঠনসহ দেশের প্রবীণ ও নবীন জাদুশিল্পীরাও লিটনের জন্য সুচিকিৎসার্থে জরুরী সভা করে অর্থও তুলেছিলেন। উল্লেখ্য, লিটন একুশে টিভিতে নিয়মিত স্ট্রিট ম্যাজিক শো করে বাংলাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। জাদুঝুলিতে জমা পড়েছিলো দেশ-বিদেশের অসংখ্য সম্মান, পুরস্কার আরোও কত কি? পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যেখানে তিনি তাঁর জাদুর পসরা নিয়ে ভ্রমন না করেছিলেন। বাংলাদেশের জাদু জগৎ এর উজ্জ্বল এক নক্ষত্রকে আমরা আজ হারালাম। বেঁচে থাকুক তাঁর সকল স্মৃতি আমাদের মাঝে। অাল্লাহ্ তাঁকে জান্নাত নসীব করুন, অামিন।
সবকিছু ঠিক থাকলে আজ বিকাল ৪:০০ টায় পান্থপথে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর বাবার পাশে তাঁকে কবরস্থ করা হবে বলেও জানাগেছে।
তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে গভীর শ্রদ্ধা আর শোক প্রকাশ করেছে বরিশাল মুক্তখবর পরিবার।