|
নেটিজেনদের উদ্দেশে যা বললেন নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নি
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরগুনায় স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে রিফাত শরীফ খুনের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কুপিয়ে খুনের সময় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি তাকে বাঁচানোর শত চেষ্টা করেও সফল হননি। মিন্নি ছাড়া অনেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হামলার ঘটনাটি দেখলেও কেউ রিফাতকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নৃশংস এই খুনের নিন্দা জানিয়েছেন। তবে স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুকে বিষয়টি মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে। কেউ কেউ এ খুনের নেপথ্যে রিফাতের স্ত্রীর সঙ্গে অভিযুক্ত খুনী নয়ন বন্ডের সম্পর্কের দিকটি দায়ী বলে ইঙ্গিত করেছেন। এ নিয়ে নানারকম তির্যক পোস্ট ও কমেন্টে ভরে গেছে গত কয়েকদিনের ফেসবুক টাইমলাইন। নেটিজেনদের এমন প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন নববধূ মিন্নি। রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বলেছেন, ‘ফেসবুকে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন লেখালেখি হচ্ছে বলে আমি শুনেছি। এসব যারা করছেন, তারা সন্ত্রাসীদের বাঁচানোর জন্য আমাকে নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করছেন। এই হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে এরাও খুনের সঙ্গে জড়িত বলে আমি মনে করি। প্রধানমন্ত্রী ও এ দেশের মানুষের কাছে আমার একটিই দাবি-যারা এমন আজেবাজে কথা বলছেন, তাদের যেন শাস্তি দেয়া হয়।’ শনিবার ২৯ জুন রাত ৮টার দিকে বরগুনা পৌর শহরের মাইঠা এলাকায় নিজ বাসায় সংবাদ মাধ্যমকে এসব কথা বলেন তিনি। রিফাতের সঙ্গে দুই-তিন বছরের ভালোবাসার সম্পর্কের পর বিয়ে করেছেন জানিয়েছেন মিন্নি। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিয়ের বয়স দুই মাস। কিন্তু দুই-তিন বছর আমাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। আমরা একজন-আরেকজনকে ভালোবাসতাম। বিষয়টি আমাদের পরিবারকে জানালে দুই মাস আগে আমাদের আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়। আমার স্বামীকে সন্ত্রাসীরা চোখের সামনে কুপিয়ে হত্যা করল।’ মাদক ব্যবসায়ী ঘাতক নয়ন অনেক দিন ধরে তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছেন জানিয়ে রিফাতের স্ত্রী মিন্নি বলেন, ‘আমি তো আগেই বলেছি-বিয়ের আগে ও পরে নয়ন আমাকে রাস্তাঘাটে বিরক্ত করত। জোর করে আমার রিকশায় ওঠত। আমার সঙ্গে ছবি তুলত।’ এসব জেনেও যারা রিফাত হত্যাকাণ্ডে নয়ন-মিন্নির কথিত সম্পর্ককে দায়ী করছেন, সেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক স্ট্যাটাসকারীদের উদ্দেশে স্বামীহারা এই গৃহবধূ বলেন, ‘ভাই, আপনারা এসব বাদ দিয়ে একটু খুনিদের ধরতে সহযোগিতা করুন।’ শুক্রবার বিকালে বরগুনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা সাংবাদকর্মীদের জানানোর কথা ছিল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু অসুস্থতার কারণে আমি প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে পারিনি।’ নৃশংস এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সবার ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। উল্লেখ্য, বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের আ: হালিম দুলাল শরীফের একমাত্র সন্তান নিহত রিফাত শরীফ। উল্লেখ্য, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফ (২৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় বুধবার রাতে রিফাতের বাবা বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এরই মধ্যে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক চড়াও হয়েছেন রিফাতের ওপর, তার মধ্যে দুজন রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছেন। রিফাতকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলেন তার স্ত্রী। কিন্তু পারেননি। রিফাতের স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেননি। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বরগুনা পৌরসভার ক্রোক এলাকার নয়ন বন্ড নামে এক যুবককে দায়ী করেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি। এছাড়া ফারাজী, রাব্বি ও আকন নামের কয়েকজনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়। হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার ২৭ জুন থেকে রবিবার পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল আসামি নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
Post Views: ০
|
|