মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরগুনার পাথরঘাটায় সৎ বাবার দেয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছে মেয়ে কারিনা আক্তার (১০)। এসময় গুরুতর দগ্ধ হয়েছে গৃহবধূ শাজেনুর বেগম (৩০)। শুধু তাই নয়, ঘটনার কয়েক ঘন্টা পরেই মা-মেয়েকে পুড়িয়ে দেয়া বেল্লাল হোসেনের গলায় ফাঁস দেয়া ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১২ জুন দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামে লোমহর্সক ও বরবরচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। তাছাড়া বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একই ইউনিয়নের পূর্ব হাতেমপুর গ্রামের খালপাড়ে আমগাছ থেকে বেল্লালের লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে আগুনে ঝলসে যাওয়া গৃহবধূ শাজেনুরকে বরিশালকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস এর দেয়া ১২ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে সড়ক পথে তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় স্বজনরা। এর আগে সকাল ১১টার দিকে শরীরে ৪৫ শতাংশ গভীর পোড়া নিয়ে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঝলসে যাওয়া শাজেনুরের চাচাতো ভাই মো: ইব্রাহিদ জানান, প্রায় দেড় বছর পূর্বে বেলাল হোসেন এর সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয় শাজেনুরের। বিয়ের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনে চলছিল কলহ। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিকার সালিশ বৈঠকও হয়। সালিশ বৈঠকে বেল্লাল হোসেন মা-মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে মারার হুমকিও দিয়েছিলো। তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে বেল্লাল তার শ্বশুরকে মারধর করে। এজন্য বেল্লালকে তালাক দেয়ার কথা বলেন শাজেনুর। এতে ক্ষুব্ধ বেল্লাল ঘুমন্ত স্ত্রী ও শিশু কণ্যাকে ঘরের মধ্যে রেখে পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় বলে জানিয়েছেন গৃহবধূর ভাই। এদিকে পাথরঘাটা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) হানিফ শিকদার জানান, গভির রাতে ঘরের মধ্যে আগুন জ্বলতে দেখে পুলিশ ও স্থানীয়রা ছুটে আসে। কিন্তু তাদের পৌঁছাবার আগেই পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘরের মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা যায় শিশু কারিনা। পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো: জিয়া উদ্দিন বলেন, সাজেনুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীরের ৮০ ভাগই পুড়ে গেছে। সাজেনুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হানিফ শিকদার বলেন, এ ঘটনায় সৎ মেয়ে ও বাবার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়েছে। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: হুমায়ুন কবির বলেন, সাজেনুরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন জানান, শাজেনুরের শরীরের বিভিন্ন স্থান আগুনে ঝলসে গেছে। যার মধ্যে শরীরের ৪৫ শতাংশ গভীর পোড়া। যে কারনে তার শারীরিক অবস্থা খুবই আশংকাজনক। তাই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে প্রেরন করেছি। অপরদিকে আগুনে ঝলসে যাওয়া গৃহবধূ শাজেনুরকে সহায়তা প্রদান করেছে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দা। তিনি শাজেনুরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাবার জন্য নগদ ১২ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। তাছাড়া এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বরগুনা জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।