|
ছাত্রীদের টাকা থেকেই হোস্টেলের সকল ব্যয় নির্বাহ করা হয়
সীমাহীন সংকটে বরিশাল বনমালী গাঙ্গুলি ছাত্রী নিবাস
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্রীদের বসবাসের একমাত্র হোস্টেল বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাস। বহু বছর ধরে এই ছাত্রী হোস্টেলটি বিএম কলেজের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসলেও ভেতরে সংকটের শেষ নেই। রয়েছে সীমিত পরিসরের কক্ষ, খাবার সংকট, মশা-মাছি ও ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ। ঝোপঝাড়ের মধ্যে আছে সাপের উপদ্রবও। ছাত্রীরা বলছেন, সমস্যার তালিকা করলে ক্রমশই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। নতুনবাজারে বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের ভেতরে গিয়ে জানা গেছে, সেখানে ৬০০ জনের আসন রয়েছে। কিন্তু সেখানে দেড়শ থেকে দুইশ ছাত্রী নিয়মিত থাকেন। বাকিরা সিট বরাদ্দ নিলেও থাকেন বাইরে কোথাও। কারণ, এখানে বিকেল সাড়ে ৫টার পরই গেট বন্ধ হয়ে যায়। খাবারও খুবই নিম্নমানের। এছাড়াও আছে নানা কারণ। তবে, সুখের খবর হচ্ছে, বনমালী গাঙ্গুলীতে এখন রাজনৈতিক কোনো প্রভাব নেই। তাই কোনো নেত্রীর দাপটও নেই। এজন্য সবাই এখানে থাকেন পরিবারের সদস্য হিসেবে। জানাগেছে, ৮০ এর দশকে বরিশাল চকবাজারের ওষুধ বাবসায়ী বনমালী গাঙ্গুলী তাঁর বসতবাড়িটি বিএম কলেজকে দান করেন। পরে ১৯৮৮ সালে বনমালী গাঙ্গুলীর নাম অনুসারে তাঁর দান করা ভবনটিই হয়ে যায় বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী নিবাস। হোস্টেলের মধ্যে ৩টি পুরাতন ও একটি নতুন ভবন জুড়েই বনমালি গাঙ্গুলি ছাত্রী নিবাস। প্রায় তিন যুগ ধরে চলে আসছে এই ছাত্রী নিবাসের কার্যক্রম। হোস্টেলের ভেতরে বড় পরিসর থাকলেও পরিপাটি নেই কিছুতেই। হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রীরা জানান, বরাদ্দ নেয়ার পর বছরের শুরুতে সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে সিট নবায়ন করতে হয়। প্রত্যেকটি কক্ষে থাকতে হয় ৮ জন করে। যা বসবাসের পুরোপুরি অনুপযোগী। কারণ, এক সঙ্গে আটজন ছাত্রী একটি কক্ষে থাকলে পড়াশোনা করা কঠিন। এছাড়া ছাত্রীদের জন্য নেই কোনও পড়ার কক্ষ বা লাইব্রেরি। এছাড়াও পরিষ্কারের অভাবে ভবনের চারপাশে তৈরি হয়েছে ময়লার স্তুপ। আর তাই বেড়েছে মশা ও দুর্গন্ধ। বর্ষার সময় অবস্থা হয় আরো ভয়াবহ। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর কাউকে যাতে কলেজ প্রশাসনের আক্রমণের শিকার না হয়, সেই ভয়ে ছাত্রীরা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। এখানে প্রতিদিন ৩ বেলা খাবারের জন্য জনপ্রতি দিতে হয় ৬০ টাকা করে। এই টাকা থেকেই খাবারের যোগান দেয়া হয় এখানের কর্মচারীদেরও। সরকারি কোনো বরাদ্দ না থাকায়, খাবার মানও খুবই নিম্ন। যেন কোনভাবে জীবন বাঁচানোর প্রাণান্ত চেষ্টা। ছাত্রীরা আরো জানান, এখানে কেউ বাইরে থেকে খাবার এনে খেতে পারবেন না। এই আইন বেশ কড়াকড়ি। এমনকি বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশের সময় ছাত্রীদের ব্যাগও তল্লাশি করা হয়। এটা তাদের কাছে বেশ অসম্মানের। ডাইনিং পরিচালনার জন্য প্রতি মাসে ছাত্রীদের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করে দেয়া হয় বাজারের দায়িত্ব। ছাত্রীরা জানান, যদি কলেজ থেকে ছাত্রীদের জন্য মাথাপিছু কিছু অর্থ বরাদ্দ দিতো, তাহলে তাদের খাবারের মান কিছুটা ভালো হতো। ছাত্রীরা বলেন, এখানে আমরা সবাই স্নাতক পর্যায়ের ছাত্রী। আমাদের অনেক কেই টিউশন করে পড়ার খরচ চালাতে হয়, অনেকের কোচিং, প্রাইভেট থাকে। কিন্তু হলের গেট ৫ টায় বন্ধ হওয়ার ফলে আমরা আমাদের কাজগুলি করতে পারি না। তাই গেট বন্ধ করার সময় ৭ টা পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানান তারা। এ বিষয়ে বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী নিবাসের হল সুপার বলছেন, ছাত্রীদের যৌক্তিক দাবিগুলো আমরা মেনে নেয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু সব দাবি মেনে নেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ছাত্রীদের টাকা থেকেই হোস্টেলের সকল ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এখানে কলেজ প্রশাসন থেকে কোনও বরাদ্দ নেই। আর তাই চাহিদা থাকলেও অনেক দাবি পূরণ করা সম্ভব হয় না।
সূত্র : মতবাদ
Post Views:
১০১
|
|